Header Ads

Header ADS

৯১ এর ভয়াল ২৯ এপ্রিলঃ এখনো দুঃস্বপ্নের মতো তাড়িয়ে বেড়ায় উপকূলবাসীকে।


আজ সেই ভয়াল ২৯ এপ্রিল। ১৯৯১ সালের এই দিনে স্মরণাতীতকালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে বিলীন হয়ে যায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের উপকূলীয় বির্স্তীণ এলাকা। এদিন চট্টগ্রামের আনোয়ারা, বাঁশখালী, সন্দ্বীপ, কক্সবাজারের সদর, মহেশখালী,  কুতুবদিয়া, টেকনাফ, চকরিয়া, পেকুয়া এলাকার লক্ষাধিক প্রাণহানী ও হাজার
কোটি টাকার সম্পদ বিনষ্ট হয়ে গিয়েছিল। আশ্রয়হীন হয়েছিল হাজার হাজার পরিবার। সে দিনের সে ভয়াল স্মৃতি আজো উপকূলীয় মানুষদের কাদাঁয়।  

৯১-এর এই ভয়াল ঘটনা এখনো দুঃস্বপ্নের মতো তাড়িয়ে বেড়ায় উপকূলবাসীকে। ঘটনার এত বছর পরও স্মৃতি থেকে মুছে ফেলতে পারছেন না সেই দুঃসহ সময়গুলো। গভীর রাতে ঘুম ভেঙে যায় জলোচ্ছ্বাস আর ঘূর্ণিঝড়ের কথা মনে হলে। নিহতদের লাশ, স্বজন হারোনোদের আর্তচিৎকার আর বিলাপ ফিরে ফিরে আসে তাদের জীবনে। প্রতি বছরের মতো বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন আজ স্মরণ করবে এই দিনটিকে। স্বজন হারানোর বিলাপে মুখরিত হবে আকাশ বাতাস। সেদিনের ঘটনার পর যারা বেঁচে আছেন আত্মার শান্তি কামনা করবেন হারিয়ে যাওয়াদের। তবে অনেক পরিবার ছিল সব সদস্যই সেই ভয়াল রাতে প্রাণ হারিয়েছেন। কেউ হারিয়েছেন অনেক সদস্যকে।

১৯৯১ সালের ২৯শে এপ্রিল ভয়ংকর এই ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় এক লক্ষ চল্লিশ হাজার লোক নিহত হয়েছিল এবং চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ‘ম্যারি এন’ নামে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছিল নোয়াখালী, চট্টগ্রামসহ দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায়। আর এতে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় পুরো উপকূল। লাশের পরে লাশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল চারদিকে। বিস্তীর্ণ অঞ্চল ধ্বংস্তূপে পরিণত হয়েছিল। দেশের মানুষ বাকরুদ্ধ হয়ে সেদিন প্রত্যক্ষ করেছিল প্রকৃতির করুণ এই আঘাত। প্রাকৃতিক দূর্যোগের এতবড় অভিজ্ঞতার মুখোমুখি এদেশের মানুষ এর আগে আর কখনো হয়েছিল না। পরদিন বিশ্ববাসী অবাক হয়ে গিয়েছিল সেই ধ্বংসলীলা দেখে। কেঁপে উঠেছিল বিশ্ব বিবেক। বাংলাদেশে আঘাত হানা ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় নিহতের সংখ্যা বিচারে পৃথিবীর ভয়াবহতম ঘূর্ণিঝড় গুলোর মধ্যে অন্যতম। 

পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড়টি ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল চট্রগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার বেগে আঘাত করে। এই ঘূর্ণিঝড়ের ফলে ৬ মিটার (২০ ফুট ) উচ্চতার জলোচ্ছাস উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত করে। এই ঘুর্ণিঝড়ের কারণে প্রায় ১দশমিক পাঁচ বিলিয়ন ডলারের (১৯৯১ সালের মার্কিন ডলার ) ক্ষতি হয়। সাগর ও নদীর উপকুল প্লাবিত হয়। কর্ণফুলি নদীর তীরে কংক্রিটের বাঁধ থাকলেও এটি জলোচ্ছাসে ধংস হয়। চট্রগ্রাম বন্দরের ১০০ টন ওজনের একটি ক্রেন ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে স্থানচ্যুত হয় এবং আঘাতের কারণে টুকরো টুকরো অংশে বিভক্ত হয়।বন্দরে নোঙর করা বিভিন্ন ছোট বড় জাহাজ ,লঞ্চ ও অন্যান্য জলযান নিখোঁজ ও ক্ষতিগ্রস্ত হয় যার মধ্যে নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর অনেক যানও ছিল। এছাড়াও প্রায় ১০ লক্ষ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘূর্ণিঝড়টির গতিপথ সর্ম্পকে সেই সময় বলা হয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ১৯৯১ এর ২২ এপ্রিল বঙ্গোপসাগরে একটি গভীর নিম্মচাপের সৃষ্টি হয়। বাতাসে গতিবেগের ও নিম্মচাপের আকার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এটি ২৪ এপ্রিল ০২বি ঘুর্নিঝড়ে রূপ নেয়।
ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর-পূর্বদিকে অগ্রসর হওযার সাথে সাথে এর শক্তি আরো বাড়তে থাকে। ২৮ ও ২৯ এপ্রিল এটির তীব্রতা প্রচণ্ড বৃদ্ধি পায় এবং গতিবেগ ১৬০ মাইল/ঘন্টায় পৌঁছায় যা একটি ক্যাটাগরি-৫ ঘূর্নিঝড়ের সমতুল্য। ২৯ এপ্রিল রাতে এটি চট্টগ্রামের উপকূলবর্তী অঞ্চলে ১৫৫ মাইল/ঘণ্টা বেগে আঘাত করে যা ক্যাটাগরি-৪ ঘূর্নিঝড়ের সমতুল্য। স্থলভাগে আক্রমনের পর এর গতিবেগ ধীরে ধীরে হ্রাস পায় এবং ৩০ এপ্রিল এটি বিলুপ্ত হয়।

স্মরণকালের ভয়াবহ এ ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৫০ কিলোমিটার। ২০ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে যায় বির্স্তীণ এলাকা। সেই ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা ১ লাখ ৩৮ হাজার ২৪২ জন।

তবে বেসরকারি হিসাবে এর সংখ্যা আরো বেশি। মারা যায় ২০ লাখ গবাদিপশু। গৃহহারা হয় হাজার হাজার পরিবার। ক্ষতি হয়েছিল ৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি সম্পদ। বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৬০ লাখ মানুষ। ৬ লাখ ৪২ হাজার ৫২টি ঘর সম্পূর্ণভাবে এবং ৫৬ হাজার ২৭১ টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ৫০ টি সেতু ও কালভার্ট এবং ১১২ মাইল দীর্ঘ উপকূলীয় বাঁধ সম্পূর্ণ ভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। সহায় সম্পদ ও আত্মীয়-স্বজন হারিয়ে এখনও সেই দুঃসহ স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছে উপকূলের হাজারও মানুষ। ঘুর্ণিঝড়ে অনেকে মাকে হারিয়েছে। মা হারিয়েছে সন্তানদেরকে, স্বামী হারিয়েছে স্ত্রীকে, ভাই হারিয়েছে প্রাণের আদরের বোনকে।

১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল ভয়াল ঘূর্ণিঝড়ের পর নিহত মানুষের লাশ পড়েছিল উপকূলজুড়ে। শতাব্দীর প্রলয়ঙ্করি ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে বৃহত্তর চট্টগ্রাম এবং দেশের উপকূলীয় অঞ্চল মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়। ধ্বংস স্তূপে পরিণত হয় কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ। প্রলয়ঙ্করি এই ধ্বংসযজ্ঞের ২৬ বছর পার হয়ছে কিন্তু এখনো স্বজন হারাদের আর্তনাদ থামেনি। ঘরবাড়ি হারা অনেক মানুষ এখনো মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিতে পারেনি।

এখনও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে আসছে দ্বীপাঞ্চলের হাজারো বাসিন্দা। এ কারণে বহু লক্ষাধিক উপকূলবাসী এখনো আতঙ্কিত। বিশেষ করে বর্ষাকালের ঘুর্ণিঝড় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ তথা ভুমিকম্প ও সুনামীর শঙ্কায় রয়েছে উপকূলবাসী। এসব এলাকার লোকজন এপ্রিল আসলে এখনো আঁতকে উঠেন। প্রায় ২৬ বছর সময় অতিবাহিত হলেও এ স্মৃতিকে তারা কোনভাবেই ভুলতে পারছেনা। সে কারণে স্মৃতি বিজড়িত ও বেদনা মিশ্রিত আজকের এই ভয়াল দিন। বিশ্বের ইতিহাসে বিশেষ করে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের জন্য আজ ২৯ এপ্রিল ভয়াল স্মৃতি ও কালোরাত। কেননা ঘুুর্ণিঝড়ে আক্রান্ত স্বজনেরা হারানো বেদনা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি এসব এলাকার বাসিন্দারা। সে রাত্রের দৃশ্য ছিল করুণ ও বিভৎস। 

শতাব্দীর ভয়াবহ প্রলয়ঙ্করী-ঘুর্ণিঝড় উপকূলীয় এলাকার উপর দিয়ে বয়ে গেছে। সে রাতের ক্ষয়-ক্ষতিতে নিমজ্জিত উপকূলবাসী। অথচ ঘুর্ণিঝড় পরবর্তী দুই যুগ সময় পার হলেও এখনো অরক্ষিত এসব দ্বীপাঞ্চল। দেশের ২৫ ভাগ লোক উপকূলীয় এলাকায় বসবাস করার পরও এখনো পর্যন্ত গঠন করা হয়নি আলাদা উপকূলীয় মন্ত্রণালয়। ১৯ টি জেলার ৪৮টি উপজেলার ৭১০ কি.মি. বসবাসকারী ১ কোটি ২০ লাখ মানুষের দুর্যোগকালে নিরাপদ আশ্রয়ের লক্ষে ৩ হাজার ৬ শত আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণসহ সমুদ্র মন্ত্রণালয় গঠনের দাবী উপকূলবাসীর। আজ পর্যন্ত এ দাবি বাস্তাবায়ন না হওয়ায় ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উপকূলীয় এলাকার লোকজন।

এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় ১৮৯৭ সালে কুতুবদিয়া ও চট্টগ্রামে ঘূর্ণিঝড়ে নিহত হয় ১৭ হাজার ৫ শত লোকজন। ১৯৬০ সালে কুতুবদিয়া, হাতিয়া ও নোয়াখালীতে ২১০ কি.মি. ঘন্টা গতি সম্পন্ন ঘূর্ণিঝড় ও ৫ মিটার উচ্ছতা সম্পন্ন জলোচ্ছাসে ৬ হাজার মানুষ মারা যায়, ১৯৬৩ সালে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালীতে ২০০ কি.মি. গতিসম্পন্ন ঝড়ে মারা যায় ১২ হাজার মানুষ। ১৯৬৫ সালে কুতুবদিয়া, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও বরিশালে ১৬০ কি. মি. ঘন্টা ৪ মিটার উচ্ছতা সম্পন্ন জলোচ্ছাসে ১৯ হাজার মানুষ মারা যায়। ১৯৮৫ সালে কক্সবাজার চট্টগ্রাম, সন্দ্বীপ, হাতিয়া, নোয়াখালীতে ১৫৪ কি.মি. ঘন্টা ৪ মিটার উচ্ছতা সম্পন্ন জলোচ্ছাসে ১২ হাজার মানুষ মারা যায়। ১৯৯১ সালে কক্সবাজার, কুতুবদিয়া, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, পটুয়াখালী ও বরিশালে ২২৫ থেকে ২৬০ কি.মি/ঘন্টা ৫ মিটার উচ্ছতা সম্পন্ন জলোচ্ছাসে ১ লক্ষ ৪০ হাজার মানুষ মারা যায়। ১৯৯৭ সালে টেকনাফ, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম ১৮০ কি.মি/ঘন্টা ৫ মিটার উচ্চতা সম্পন্ন জলোচ্ছাসে ২ শত এর অধিক মানুষ মারা যায়। এছাড়া ১৮২২, ১৮৭৬, ১৯৭০, ১৯৮৫, ১৯৮৮, ২০০৭ ও ২০০৯ সালে সিডর, আইলাসহ বিভিন্ন ধরণের ঘূর্ণিঝড় উপকূলীয় এলাকার ২৬ টি জেলার চরমভাবে আঘাত হানে।

৯১ এর উপকূলীয় এলাকার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া স্মরণকালের সবচেয়ে এ ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসে শুধু পেকুয়া উপজেলাতেই ৩০ হাজারেরও অধিক লোকের মৃত্যু হয়েছিল বলে জানা গেছে। বিলীন হয়েছিল ঘরবাড়ী, চিংড়ির ঘেরসহ সব সহায় সম্পদ। বছর ঘুরে দিনটি প্রতিবছর জনগনের সামনে উপস্থিত হয় ঠিকেই কিন্তু এতদিনও ভাগ্য বদল হয়নি এতদাঞ্চলের মানুষের।

ঘটনার পর ২৬ বছর পেরিয়ে গেলেও পেকুয়ায় এখনো লক্ষাধিক মানুষ দূর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়ে গেছে। পেকুয়ায় দূর্যোগ মোকাবেলা করতে সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে তেমন কোন ধরণের উদ্যোগ নেওয়া হয় না। এখনো অরক্ষিত রয়েছে পেকুয়ার একাধিক বেড়িবাঁধ, নেই পর্যাপ্ত ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র। ফলে উপকূল এলাকার হাজার হাজার মানুষ চরম ঝুঁকি ও আতংকে বসবাস করছে এখনো দিনের পর দিন।

মগনামা কাঁকপাড়ার ক্ষতবিক্ষত বেড়িবাঁধ 
পেকয়া উপজেলার সমুদ্র উপকূলবর্তী মগনামা, উজানটিয়া, রাজাখালী, পেকুয়া সদর ও বারবাকিয়া ইউনিয়নের মানুষকে বেশী বর্ষা মৌসুমে চরম উদ্বেগ উৎকণ্ঠা ও যানমালের ব্যাপক ক্ষতির সাধন হতে হয়। 
পেকুয়ার উপকুলীয় অঞ্চলে ঘুর্ণিঝড়ে সামাজিক নিরাপত্তার অন্যতম উৎস হচ্ছে সাইক্লোন শেল্টার। ২৬ বছরেও এখানে নির্মিত হয়নি পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার।

স্থানীয়রা জানান, পেকুয়ার উপক’লীয় এলাকার মানুষ বছরের প্রায় ৬/৭ মাস বৈরী আবহাওয়ার সাথে লড়াই করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় পেকুয়ায় বর্তমানে যে সমস্থ আশ্রয়ন কেন্দ্র আছে তাও জনসংখ্যার তুলনায় কম আবার এর মধ্যে অনেকগুলো রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়। 

পেকুয়া উপজেলায় পর্যাপ্ত আশ্রয়ন কেন্দ্র না থাকায় ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল উপক’লীয় এলাকার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া স্মরণকালের সবচেয়ে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসে প্রায় ৩০ হাজারেরও অধিক লোক গণহারে মৃত্যু হয়। বিলিন হয়ে যায় ঘরবাড়ী, চিংড়ির ঘের। এসব বিনষ্ঠ হয়ে কোটি কোটি ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।

সমুদ্রপাড়ের ইউনিয়ন উজানটিয়ার অনেকেই অভিযোগ করেন ১৯৯১ সালের চেয়েও বর্তমানে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে আমারা। অরক্ষিত বেড়িবাঁধের ফলে সামান্য জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় বিস্তির্ণ এলাকা। এ ইউনিয়নের করিয়ারদিয়া এলাকার ১ কিলোমিটার ও গোদারপাড় এলাকার দেড় কিলোমিটার বেড়িবাধ ছাড়া উজানটিয়া ইউনিয়নের প্রায় ৩৫ কিলোমিটার বেড়িবাধ বর্তমানে অরক্ষিত। যেকোন মুহুর্তে ঝুকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে তলিয়ে যেতে পারে এলাকার লবণ, চিংড়ির ঘের। এ ইউনিয়নের ১০ টি স্কুলকাম সাইক্লোন শেল্টার রয়েছে। ঝুকিতে এড়াতে পেকুয়ার চর, টেকপাড়া, ঘোষালপাড়া এলাকায় আরো ২/৩ টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রযোজন রয়েছে।’
সমুদ্রপাড়ের আরেক ইউনিয়ন রাজাখালীতেও একিই অবস্থা। যে আশ্রয় কেন্দ্র গুলো আছে তা ও জনসংখ্যার তুলনায় কম। জরুরি ভিত্তিতে বকশিয়া ঘোনার টেক থেকে নতুন ঘোনা পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার বেড়িবাধ চরম ঝুঁকিতে রয়েছে’।
মগনামা কাঁকপাড়া এলাকা
একিই অবস্থা মগনামা ইউনিয়নের। কাঁকপাড়াসহ অনেক এলাকার বেড়িবাঁধ রয়েছে এখনো বেহাল দশায়। গেলো বছরের ঘূর্ণিঝড় রোয়ানো এবং এর আগের বছরের বন্যায় সাগরের পানির সাথে একাকার হয়ে লণ্ডভণ্ড হয়েছিল এসব এলাকার জনজীবন। প্রতিবার বর্ষা মৌসুম আসলে এসব এলাকার মানুষদের উপর নেমে আসে যেন অঘোষিত ৭নং বিপদ সংকেত।

অনুসন্ধানে জানাগেছে, ৯১সালের ঘুর্ণিঝড়ের পর সরকারি ও বেসরকারি সাহায্য সংস্থার অনুদানে নির্মিত  পেকুয়া উপজেলায় মোট ৪৮ টি সাইক্লোন শেল্টার রয়েছে। যা জনসংখ্যার তুলায় অপ্রতুল।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, সাইক্লোন শেল্টারের চেয়ে উপকুলীয় অঞ্চলে সামাজিক নিরাপত্তার মুল বলয় হচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ও উপকুলীয় বনবিভাগের প্যারাবান। 
কিন্তু সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের উদাসীনতায় ঘুর্ণিঝড়ের এতবছর পরও অরক্ষিত রয়েছে উপকূলীয় অঞ্চলের রক্ষাকবচ বেড়িবাঁধের বিশাল এলাকা। যার ফলে উপকুলীয় অঞ্চলে জনগনের মাঝে এখনো আতঙ্ক তাঁড়া করে।

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার পাউবোর ২১টি পোল্ডারের অধীন জেলার আট উপজেলায় ৫৯৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। ১৯৯১সালের প্রলয়ংকারী ঘুর্ণিঝড়ে উপকুলীয় অঞ্চলের বেশিরভাগ বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। অনেক এলাকায় উচুঁ বেড়িবাঁধ মিশে গেছে মাটির সাথে। তবে পাউবো প্রতিবছর অধিক ঝুকিঁপুর্ণ এলাকা চিহিৃত করে প্রাপ্ত অর্থ বরাদ্দের বিপরীতে ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধ সংস্কারে কাজ করছেন।
সুত্র জানায়, ৫৯৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ইতোমধ্যে ১৮ কিলোমিটার এলাকার বেড়িবাঁধকে অধিক ঝুকিঁপুর্ণ হিসেবে চিহিৃত করা হয়েছে।

উপকূলে নিহতদের শ্বেতপত্র প্রকাশ ও জাতীয় শোক দিবস ঘোষণার দাবি দীর্ঘ দুই যুগেও বাস্তবায়ন হয়নি। ২৯ এপ্রিলকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা ও নিহতদের শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি নিয়ে ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাবে গোলটেবিল বৈঠক, সংবাদ সম্মেলন, স্মরণসভাসহ বিভিন্ন আন্দোলন ও নানান কমর্সূচি পালন করে আসছে ২৯ এপ্রিল স্মৃতি পরিষদ।

আর কতকাল উপেক্ষিত থাকবে উপকূল অঞ্চলের মানুষ? অবিলম্বে বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও উপকূল অঞ্চলের মানুষের জীবনমান রক্ষার পদক্ষেপ নিতে হবে। ১৯৯১ এর ঘূর্ণিঝড়ের পর যেসব সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ হয়েছিল তা এখন ব্যবহার অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। অবিলম্বে নতুন সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ ও উপকূল অঞ্চলের মানুষকে রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে হবে। আলাদা মন্ত্রণালয় গঠন করে বিশেষ বাজেট ঘোষনা করতে হবে।

পরিশেষে ঐদিনে দেশের সকল নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং আল্লাহর কাছে তাদের জন্য শহীদী মর্যাদা ও জান্নাত কামনা করছি। আমিন।
Powered by Blogger.