সালাহউদ্দিন আহমেদ | উন্নয়ন সূর্য্য চকরিয়া-পেকুয়া | Salahuddin ahmed (ভিডিও)
কক্সবাজারের যত উন্নয় তার সব এই মানুষটির অবদান। এযেন এক উন্নয়নের ফেরিওয়ালা। সালাহউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের একজন রাজনীতিবিদ, সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী এবং কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। তিনি দলের মুখপাত্র ছিলেন। মার্চ ২০১৫ সালে ঢাকার উত্তরা থেকে তিনি অপহৃত হন এবং দুই মাস পরে ভারতে শিলং শহরে অপহরণকারীরা ছেড়ে দেন। প্রাথমিক জীবনঃ সালাহ উদ্দীন আহমেদ ৩০ জুন ১৯৬২ সালে কক্সবাজার জেলার তৎকালীন বৃহত্তর চকরিয়া উপজেলার পেকুয়া ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী সিকদার পাড়া গ্রামে সম্ভ্রান্ত মৌলভী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন একটি শিশু। যে শিশুটির পিতা মৌলভী ছাঈদুল হক ও মাতা বেগম আয়েশা হক আদর করে নাম রেখেছিলেন সালাহ উদ্দিন আহমদ। এই শিশু সালাহ উদ্দিন আহমদের পিতামহ ছিলেন মৌলভী আবদুল আলী ও মাতামহ ছিলেন হাকিমন। তিনি প্রাথমিক পর্যায়ের পড়ালেখা শেষ করে কিশোর সালাহ উদ্দিন আহমদ পেকুয়ার শিলখালী উচ্চ বিদ্যালয় হতে রেকর্ড সংখ্যক নম্বর পেয়ে ১৯৭৭ সালে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে ১৯৭৯ সালে কৃতিত্বের সাথে তিনি এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন ১৯৮০ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৪ সালে এলএলবি (সম্মান) ও ১৯৮৬ সালে এলএলএম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় কৃতিত্বের সাথে। একই সাথে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে পরীক্ষা দিয়ে এডভোকেটশীপ সনদ লাভ করেন। কর্মজীবন ও রাজনীতিঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নকালে তিনি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ সভাপতি সহ সফলতার সাথে আরো বিভিন্ন পদে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বপালন করেন। কিছুদিন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ছাত্রদলের দায়িত্বে থাকাকালে স্বৈরাচারী সরকারের রোষানলে পড়ে গ্রেপ্তার হয়ে জেল খেটেছেন অনেকবার। সরকারি চাকুরীর বাংলাদেশের সবচেয়ে গৌরবময় ও বুনিয়াদী ক্যাডার হিসাবে পরিচিত ৭ম বিসিএস পরীক্ষায় ১৯৮৫ সালে অংশ নিয়ে বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে উত্তীর্ণ হন। ১৯৮৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনি বিসিএস (প্রশাসন) চাকুরীতে যোগদান করেন। বগুড়া জেলা প্রশাসনে সিনিয়র সহকারী সচিব হিসাবে দায়িত্বপালনকালে ১৯৯১ সালে তিনি তৎকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া’র সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) হিসাবে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালের জানুয়ারিতে এই সরকারি চাকুরী থেকে ইস্তফা দেন। সালাহ উদ্দিন আহমদ তখন থেকে সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে নেমে পড়েন। এরপর ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) থেকে বিজয়ের হেট্টিক করে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একটানা তিনবার কক্সবাজার-১ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে তিনি রেকর্ড সৃষ্টি করেন। সপ্তম ও অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটের ব্যবধানে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে পরাজিত করেন। অষ্টম সংসদ নির্বাচনের পর চারদলীয় জোট দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া’র নেতৃত্বে সরকার গঠন করলে সালাহ উদ্দিন আহমদ ২০০১ সালের ১০ অক্টোবর মন্ত্রিপরিষদে যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হন। পাশাপাশি কক্সবাজার জেলার ইনচার্জ মিনিস্টার হিসাবেও দায়িত্বপালন করেন তিনি। সালাহ উদ্দিন আহামদই একমাত্র রাজনীতিবিদ, যিনি যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী হয়ে স্বাধীনতাত্তোর কক্সবাজার জেলা থেকে সর্বপ্রথম মন্ত্রী হয়েছেন। সালাহ উদ্দিন আহমদ বৃহত্তর চকরিয়া থেকে কিছু অংশ আলাদা করে ২০০২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ‘পেকুয়া’ নামক একটি আলাদা উপজেলা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি পেকুয়ায় প্রয়োজনীয় সকল অবকাঠামো, আধুনিক স্থাপনা ও উন্নয়ন করেছেন পরবর্তী সাড়ে চার বছরে। যা এখন দৃশ্যমান ও সুফল ভোগ করছে সকলে। ২০০৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ২ বছর ২ মাস ওয়ান ইলাভেন সরকারের কারাগারে বন্দী থেকে ২০০৯ সালের ২৯ মার্চ তিনি কারামুক্ত হন। সালাহ উদ্দিন আহমদ কারাগারে থাকাবস্থায় এরমধ্যে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তার সহধর্মিনী এডভোকেট হাসিনা আহমেদ কক্সবাজার-১ আসনে চারদলীয় জোটের মনোনয়ন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে প্রায় ৩৬ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সালাহ উদ্দিন আহামদ ১৯৯৬ সালে প্রথমে কক্সবাজার কক্সবাজার জেলা বিএনপি’র আহবায়ক এবং পরে পর পর দু’বার কাউন্সিলের মাধ্যমে কক্সবাজার জেলা বিএনপি’র সভাপতি নির্বাচিত হন। পরে ২০১০ সালে বিএনপি’র জাতীয় কাউন্সিলে সালাহ উদ্দিন আহমদ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্মমহাসচিব নির্বাচিত হন। এরপর তিনি ভারতের মেঘালয়ের সিলং শহরে নির্বাসিত থাকাবস্থায় বিএনপি’র সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। অপহরণঃ ২০১৫ সালে বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতির উত্তাল সময়ে কেন্দ্রীয় বিএনপি’র মুখপাত্র হিসাবে দায়িত্বপালনকালে ২০১৫ সালের ১০ মার্চ ঢাকাস্থ উত্তরার একটি বাড়ী থেকে আইনশৃংখলা বাহিনীর পরিচয়ে অচেনা মুখোশধারী অপহরনকারীরা সালাহউদ্দিন আহমদকে চোখ বেঁধে গুপ্ত স্থানে তুলে নিয়ে যায়। তখন থেকে দীর্ঘ ৬২ দিন অজ্ঞাত স্থানে গুম অর্থাৎ নিখোঁজ থাকার পর একই বছরের ১১ মে সালাহউদ্দিন আহমেদ’কে সর্বপ্রথম মানসিক বিপর্যস্ত অবস্থায় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং এর গলফ লিংক মাঠে পাওয়া যায়। মেঘালয় রাজ্যের পুলিশ ২০১৫ সালের ৩ জুন ভারতে অবৈধ প্রবেশের অভিযোগ এনে বৈদেশিক নাগরিক আইনের ১৪ ধারায় সালাহ উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে এবং তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে প্রথমে হাসপাতালে চিকিৎসা ও পরে শিলং জেলে পাঠানো হয়। শিলং শহর ছেড়ে না যাওয়ার শর্তে বিজ্ঞ আদালত পরে সালাহ উদ্দিন আহমদকে জামিন প্রদান করেন।
No comments