রমযানের রোযার গুরুত্ব, ফজিলত ও প্রয়োজনীয়তা।
আলোচনা হবে রমজানের রোযার গুরুত্ব ফজিলত ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে। প্রথম পর্বে সুরা বাকারার ১৮৩ থেকে ১৮৭পর্যন্ত উদ্ধৃতি দিয়ে দেয়া হয়েছে,তাতে আলোচনা করেছি রোযার পরিচয় কেন ফরজ করা হয়েছে?রোযা ভঙ্গের কারণ ও কাযা কাফফারা সম্পর্কে।আজকে তা পুনরাবৃত্তি করব না।
**রমযানের রোযার গুরুত্ব ও ফজিলত**
রমযানের রোযার গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম।তা মুসলিম উম্মাহর জন্য অপরিহার্য ইবাদত।সকল মুসলমানের উচিত রমযানের রোযা যথাযথভাবে পালন করা।
#রোযাদার নারী- পুরুষের জন্য ক্ষমার ঘোষণা।
আল্লাহ তাআলার ঘোষণা:.
والصاءمين والصاءمات والحافظين فروجهم والحافظات والذاكرين الله كثيرا والذاكرات اعد الله لهم مغفرة واجرا عظيما.
অর্থ: সিয়াম(রোযা) পালনকারী পুরুষ ও নারী, নিজেদের লজ্জাস্হানের হিফাজতকারী পুরুষ ও নারী, আল্লাহর অধিক যিকিরকারী পুরুষ ও নারী,তাদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত করে রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপুরস্কার। (সুরা আহযাব ৩৫)
হাদীস শরীফে এসেছে:
عن ابى هريرة رضى الله عنه قال:قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من صام رمضان ايمانا واحتسابا غفرله ماتقدم من ذنبه
অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি রমযান মাসের রোজা রাখবে ঈমান ও চেতনা সহকারে তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।( বুখারী ৩৭মুসলিম১২৬৮) হযরত আবু হুরায়রার অন্য বর্ণনায় এসেছে
ومن قام رمضان ايمانا واحتسابا غفرله ماتقدم من ذنبه ومن قام ليلة القدر إيمان واحتسابا غفرله ماتقدم من ذنبه.
অর্থ: এবং যে ব্যক্তি ঈমান ও আত্নবিশ্লেষণের মাধ্যমে রমযানের রাতে নামায আদায় করবে তার অতীতের যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। আর যে কদরের রাতে ঈমান ও আত্নবিশ্লেষণের মাধ্যমে ইবাদত করবে তার অতীতের যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।
(বুখারী ও মুসলিম)
#নির্দেশনা:: রোযার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা আমাদের পূর্ববর্তী গুনাহ সমূহ মাফ করে দিবেন। তবে এক্ষেত্রে শর্ত হলো:
০১। পরিপূর্ণ ঈমানের সাথে রোজা রাখতে হবে।
০২। লোকদেখানো নয়,শুধুমাত্র আল্লাহকে সন্তুষ্টি করার উদ্দেশ্যে রোজা রাখতে হবে।
০৩। সাওয়াবের নিয়তে রোজা রাখতে হবে।
০৪। নিয়ত খালেস তথা বিশুদ্ধ হতে হবে।
যদি উল্লেখিত শর্তাবলী পূরণ করে রোজা রাখতে পারি এবং খাঁটি অন্তরে আল্লাহর দরবারে তাওবা করি,তাহলে অবশ্যই আশা করা যায় আল্লাহ তাআলা আমাদের পূর্ববর্তী সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিবেন।
#রোজাদারদের জন্য জান্নাতের সুপারিশ করবে।
***********************"*"************হাদীস শরীফে এসেছে:
عن عبد الله بن عمرو أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال الصيام والقران يشفعان للعبد يوم القيامة يقول الصيام آي رب منعته الطعام والشهوات بالنهار فشفعني فيه ويقول القرآن منعته النوم بالليل فشفعني فيه قال فيشفعان-
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর(রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,রোজা ও কুরআন রোজাদার বান্দাহর জন্য (আল্লাহর দরবারে) কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবে। রোজা বলবে,হে আল্লাহ তাআলা!আমি এ ব্যক্তিকে দিনে খাবার ও অন্যান্য কামনা-বাসনা থেকে ফিরিয়ে রেখেছি, আপনি তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। কুরআন বলবে,হে আল্লাহ তাআলা আমি এ ব্যক্তিকে রাতের নিদ্রা থেকে ফিরিয়ে রেখেছি, আপনি তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাদের সুপারিশ গ্রহণ করবেন। "সুবহানাল্লাহ"(মসনদে আহমদ, মসনদে আব্দুল্লাহ ইবনে আমর,৬৩৩৭)
#রোজা# রোজাদারকে জাহান্নাম থেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখবেন। ************হাদীস শরীফে এসেছে।
عن ابى سعيد الخدرى رضى الله عنه قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول من صام يوماً فى سبيل الله بعد الله وجهه عن النار سبعين خريفا-
অর্থ: হযরত আবু সাইদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি,যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে একদিন রোজা রাখবে, আল্লাহ তাআলা তার চেহারাকে জাহান্নাম থেকে সত্তর বছর দূরে সরিয়ে রাখবেন। (বুখারী ২৬২৮মুসলিম১৯৪৯)
#রোযাদারের সাওয়াব বা প্রতিদানের কোন সীমাবদ্ধতা নেই,আল্লাহপাক নিজ হাতে অগনিত সওয়াব দিবেন, রোজা আল্লাহর জন্য,আর রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহ তাআলার নিকট কস্তুরির সুগন্ধি হতেও প্রিয়।
***********হাদীস শরীফে এসেছে:
***********হাদীস শরীফে এসেছে:
عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم كل عمل ابن ادم يضاعف الحسنة عشر أمثالها الى سبعماءة صعف قال الله عز وجل الا الصوم فانه لى وانا اجزى به يدع شهوته وطعامه من اجلى للصاءم فرحتان فرحة عند فطره وفرحة عند لقاء ربه ولخلوف فيه اطيب عند الله من ريح المسك-
অর্থ হযরত আবু হুরায়রা রা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,আদম সন্তানের প্রতিটি নেক আমলের সওয়াব ১০ হতে ৭০০গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু আল্লাহ তাআলা বলেছেন, রোজা এ সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম, কেননা তা আমার জন্য আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব। রোজা পালনে আমার বান্দা আমারই সন্তোষ লাভের উদ্দেশ্যে স্বীয় ইচ্ছা,কামনা-বাসনা,ও নিজের পানাহার পরিত্যাগ করে থাকে। রোজাদারদের জন্য দুটি আনন্দ ১.একটি ইফতারের সময় ২.অপরটি তার রবের সাথে সাক্ষাতের সময়। নিশ্চয়ই জেনে রেখ, রোজাদারদের মুখের গন্ধ আল্লাহ তাআলার নিকট কস্তুরির সুগন্ধি হতেও অনেক উত্তম।(মুসলিম ১৯৪৫)
#রোজাদারদেরকে জান্নাতে রাইয়ান নামক বিশেষ দরজা দিয়ে প্রবেশ করানো হবে। অন্যদেরকে নয়।
***********হাদীস শরীফে এসেছে:
عن سهل رضى الله عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم قال ان فى الجنة بابا يقال له الريان يدخل منه الصاءمون يوم القيامة لا يدخل منه احد غيرهم يقال أين الصاءمون فيقومون لا يدخل منه احد غيرهم فاذا دخلوا أغلق فلم يدخل أحد-
অর্থ: হযরত সাহল ইবনে সা'দ (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,জান্নাতে একটি দরজা আছে যাকে বলা হয় রাইয়ান।এ দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন একমাত্র রোজাদার লোকেরাই প্রবেশ করবে।তারা ব্যতীত অন্য কেউ এ পথে প্রবেশ করতে পারবে না। সেদিন এই বলে ডাক দেয় হবে রোজাদার লোকেরা কোথায়?তারা যেন এ পথে প্রবেশ করে। এভাবে সকল রোজাদার ভেতরে প্রবেশ করার পর দরজাটি বন্ধ করে দেয় হবে। অতঃপর আর্য কেউ এ পথে প্রবেশ করতে পারবে না। *** (বুখারী ১৭৬৩মুসলিম১৯৪৭) হযরত সাহলের (রা)এর আরেক বর্ননায় এসেছে:::
عن سهل بن سعد رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم فى الجنة ثمانية ابواب منها باب يسمى الريان لايدخله إلا الصاءمون-
#রমযানে আসমানের দ্বার সমুহ উন্মুক্ত করে দেয়া হয়,আর জাহান্নামের দরজা সমূহ বন্ধ করে দেয় হয়। শয়তান কে শিকলে আবদ্ধ করা হবে।
*********হাদীস শরীফে এসেছে::::::::
عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اتاكم رمضان شهر مبارك فرض الله عز وجل عليكم صيامه تفتح فيه ابواب السماء وتغلق فيه ابواب الجحيم وتغل فيه مردة الشياطين للله فيه ليلة خير من ألف شهر من حرم خيرها فقد حرم-
অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা রা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের নিকট রমযান মাস উপস্থিত।এটি অত্যন্ত বরকতময় মাস। আল্লাহ তাআলা এ মাসে তোমাদের প্রতি রোজা ফরজ করেছেন।এ মাসে আকাশের দরজা সমূহ খুলে দেয়া হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। অবাধ্য শয়তানগুলো আটক করে রাখা হয়। আল্লাহর জন্য এ মাসে একটি রাত আছে যা হাজার মাসের চেয়েও অনেক উত্তম।যে লোক এ রাত্রির কল্যাণ হতে বঞ্চিত হল,সে সত্যিই বঞ্চিত ব্যক্তি।(নসায়ী:২০৭৯) হযরত আবু হুরায়রা (রা) আরেক বর্ণনায় এসেছে।
عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا دخل رمضان فتحت ابواب السماء وغلقت ابواب جحنم وسلسلت الشياطين-
#নির্দেশনা: "আসমানের দরজা সমূহ উন্মোক্ত করা হয়" এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার উপর রহমত বর্ষণ হয় এবং দোয়া কবুল হয়।আর"দোজখের দরজা সমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়"এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে-রোজাদার ব্যক্তি এমন কাজ থেকে বিরত থাকে যা নিশ্চিত জাহান্নামের কাজ ছিল। এবং "শয়তাগুলোকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়"হাদীসের এই বাক্য দ্বারা কয়েকটি উদ্দেশ্য হতে পারে।যেমন (ক) আসলেই শয়তান কে শিকলে বন্দি করা হয় ।(খ) শয়তান এ মাসে মানুষকে ধোঁকা দিতে সক্ষম হয় না। আল্লাহ পাক আমাদেরকে আমল করার তাওফীক দাও, এবং রহমতের এ মাসে করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তি দাও।****আমিন****।
ধারাবাহিক আলোচনা চলবে ইনশাআল্লাহ।(শেয়ার করুন যেকোন আল্লাহর বান্দাদের জন্য কাজে আসতে পারে)
লেখক-
ধারাবাহিক আলোচনা চলবে ইনশাআল্লাহ।(শেয়ার করুন যেকোন আল্লাহর বান্দাদের জন্য কাজে আসতে পারে)
লেখক-
মাওলানা নুরুজ্জামান মঞ্জু,
অধ্যাপক, রাজাখালী বিইউআই ফাযিল মাদ্রাসা।
সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান পেকুয়া উপজেলা।
No comments