11 August 2019

"ঈদুল আযহা" কিছু সতর্কতা, করণীয় ও বর্জনীয়।

বছর ঘুরে আমাদের জীবনে আবার ফিরে এসেছে পবিত্র ঈদুল-আযহা। মহান আল্লাহ বছরে আমাদের জন্য দুইটি শ্রেষ্ঠ আনন্দের দিন উপহার দিয়েছেন। এর একটি ঈদুল ফিতর, অপরটি ঈদুল আযহা। দুই ঈদেরই রয়েছে বিশেষ বৈশিষ্ট্য। ঈদুল আযহা ত্যাগ ও কুরবানির বৈশিষ্ট্যে মন্ডিত। এর সাথে জড়িত রয়েছে হযরত ইব্রাহিম (আ.) ও ইসমাঈল (আ.) এর মহান ত্যাগের নিদর্শন। এই ত্যাগের মূলে ছিল আল্লাহর প্রতি ভালবাসা এবং তার সন্তুষ্টি অর্জন। পোস্টের শুরুতেই সকলের প্রতি রইল ঈদ মোবারক ও শুভেচ্ছা।


ঈদুল আজহা 

(আরবীতে:عيد الأضحى) ইসলাম ধর্মাবলম্বিদের সবচেয়ে বড় দুইটি ধর্মীয় উৎসবের একটি। বাংলাদেশে এই উৎসবটি কুরবানির ঈদ নামে পরিচিত। ঈদুল আযহা মূলত আরবী বাক্যাংশ।এর অর্থ হলো ত্যাগের উৎসব।[১] আসলে এটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ত্যাগ করা। এ দিনটিতে মুসলমানেরা তাদের সাধ্যমত ধর্মীয় নিয়মানুযায়ী উট, গরু, দুম্বা কিংবা ছাগল কোরবানি বা জবাই দেয়। 


ঈদুল আযহার ইতিহাস

ইসলামের বিভিন্ন বর্ননা অনুযায়ী, স্রষ্টা বা আল্লাহ ইসলামের নবী ইব্রাহীমকে স্বপ্নে তার সবচেয়ে প্রিয় বস্তু কুরবানী করার নির্দেশ দেন। এই আদেশ অনুযায়ী ইব্রাহিম তার সবচেয়ে প্রিয় পুত্র ইসমাইলকে কুরবানি করার জন্য প্রস্তুত হলে স্রষ্টা তাকে তা করতে বাধা দেন এবং পুত্রের পরিবর্তে পশু কুরবানীর নির্দেশ দেন। এই ঘটনাকে স্মরণ করে সারা বিশ্বের মুসলিম ধর্মালম্বীরা প্রতি বছর এই দিবসটি পালন করে। হিজরি বর্ষপঞ্জি হিসাবে জিলহজ্জ্ব মাসের ১০ তারিখ থেকে শুরু করে ১২ তারিখ পর্যন্ত ৩ দিন ধরে ঈদুল আজহা চলে। হিজরী চান্দ্র বছরের গণনা অনুযায়ী ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহার মাঝে ২ মাস ১০ দিন ব্যবধান থাকে। দিনের হিসেবে যা সবোর্চ্চ ৭০ দিন হতে পারে।


পশু কুরবানি


ইসলাম মতে যার যাকাত দেয়ার সামর্থ্য আছে তাঁর ওপর ঈদুল আযহা উপলক্ষে পশু কুরবানি করার নির্দেশ রয়েছে। ঈদুল আযহার দিন থেকে শুরু করে পরবর্তী দুইদিন পশু কুরবানির জন্য নির্ধারিত। বাংলাদেশের মুসলমানরা সাধারণত গরু বা খাসী কুরবানি দিয়ে থাকেন। এক ব্যক্তি একটি গরু বা খাসি কুরবানি করতে পারেন। তবে গরুর ক্ষেত্রে ভাগে কুরবানি করা যায়। ৩, ৫ বা ৭ ব্যক্তি একটি গরু কুরবানিতে শরীক হতে পারেন। কুরবানির মাংস তিন ভাগে ভাগ করে ১ ভাগ গরীব-দুঃস্থদের মধ্যে ও ১ ভাগ আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে বিতরণ করার পর তৃতীয় ১ ভাগ নিজেদের খাওয়ার জন্য রাখা যায়। কুরবানির পশুর চামড়া বিক্রির অর্থ দান করে দেয়ার নির্দেশ রয়েছে।


কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার জন্য শর্তসমূহ

১. মুসলমান হওয়া,সুতরাং অমুসলিম ব্যক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়।
২. মুকীম/স্থায়ী বাসিন্দা হওয়া/যেকোন জায়গায় ১৫ দিনের বেশির নিয়তের অবস্থান করা, সুতরাং মুসাফিরের/১৫ দিনের কম নিয়তে সফরকারী ব্যক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়।
৩. ধনী বা নিসাব পরিমাণ(সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা অথবা সে পরিমান অর্থসম্পদের মালিক হওয়া) অর্থাৎ যে পরিমান সম্পদ থাকলে সাদক্বাহ-ই ফিতর ওয়াজিব হয় সে পরিমান সম্পদ থাকলে তার উপর কুরবানীও ওয়াজিব।
৪. স্বাধীন হওয়া ,সুতরাং ক্রীত দাস-দাসীর উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়।
[দলীলঃ-“বাহারে শরীয়াত”]
৫. মুসাফিরের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়, তবে নফল হিসেবে করলে সাওয়াব পাওয়া যাবে। হজ্ব পালনকারী যদি মুসাফির হয় তবে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়।কিন্তু মুকীম হলে ওয়াজিব।যেমন-মক্কায় অবস্থানকারী হয়ে মুকীম হলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে।
[দলীলঃ- “দুররে মুখতার”, “রদ্দুল মুহতার” ও “বাহারে শরীয়ত”]
৬. গরু,মহিষ ও উট এই তিন প্রকার পশুর একটিতে সাত ব্যক্তি পর্যন্ত শরিক হয়ে কুরবানী করা যাবে।তবে কুরবানীর জন্য পূর্বশর্ত হল,কারো অংশ যেন এক সপ্তাংশ থেকে কম বেশী না হয়।যদি কোন শরিকের অংশ এক সপ্তাংশ হতে কম হয়।তখন কারো কুরবানী হবে না।একটি গরুতে চার,পাঁচ,ছয় জন শরিক হতে পারে।এ ক্ষেত্রে সকলের অংশ সমান হওয়াটা পূর্বশর্ত।
[দলীলঃ- “দুররে মুখতার”,“রদ্দুল মুহতার”ও“বাহারে শরীয়ত”]
৭. গরু কুরবানীতে কাউকে শরিক করলে গোশত ওজন করে বন্টন করাই বাঞ্ছনীয়,অনুমান করে নয়। হতে পারে কেউ বেশি বা কম পাবে তবে তা নাজায়েয।
[দলীলঃ-“বাহারে শরীয়াত”]


কোরবানির কিছু সতর্কতা,টিপস ও রেসিপি



কুরবানির পশু জবাই ও পশুর চামড়া ছাড়াতে করণীয়

১. প্রানি কুরবানির জন্য দক্ষ লোক নিয়োগ করুন। নইলে অর্ধ জবাইকৃত গরু ঝাড়া দৌড় দিয়ে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে।
২. প্রানি জবাইয়ের ক্ষেত্রে জোরে আল্লাহর নাম নিতে হবে। 
৩. প্রানির ধমনী যাতে পুরোপুরি কাটা যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রানি জবাইয়ের পর পুরোপুরি ব্লিডিং হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তাড়াহুড়ো করে জবাইয়ের সাথে সাথে মাংস কাটা শুরু করা হলে মাংসের ভেতর রক্ত থেকে যাবে। এ ধরনের মাংস মোটেও স্বাস্থ্য সম্মত নয়, কারন রক্তে অনেক ধরণের জীবাণু থাকতে পারে। 
৪. চামড়ার মান রক্ষা : সাধারণত ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে চামড়ার ক্ষতি ও গুণগত মান নষ্ট হয়ে থাকে৷ ব্যাকটেরিয়ার হাত থেকে পশুর চামড়াকে রক্ষা করতে বর্তমান বিশ্বে সাধারণত ড্রাই ট্রিটমেন্ট, সল্ট ট্রিটমেন্ট ও ফ্রিজিং করে চামড়া সংরক্ষণ করা হয়৷ উন্নত দেশগুলোতে চামড়া সংরক্ষণে ড্রাই ট্রিটমেন্ট ও ফ্রিজিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হলেও তা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ বলে আমাদের দেশে সল্ট ট্রিটমেন্ট বা লবণ দিয়ে চামড়া সংরক্ষণ করা হয়৷ কোরবানির আগে ও পরে কিছু বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখলেই অতিসহজে চামড়ার গুণগত মান রক্ষা করতে পারবেন৷
৫. পশু কেনার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে, আগে থেকেই গরুর চামড়ায় কোনো গভীর ক্ষতচিহ্ন বা দাগ যেন না থাকে৷

৬. ঈদের দিন সকাল থেকেই পশুকে শক্ত খাবার (খড়, ভুসি, কাঁচা ঘাস ইত্যাদি) দেওয়া থেকে বিরত থাকুন৷ বেশি করে পরিষ্কার পানি, ভাতের মাড় ইত্যাদি তরল খাবার খাওয়াতে পারেন৷ এতে কোরবানির পর পশুর চামড়া ছাড়ানো অনেক সহজ হবে৷

৭.কোরবানির কাজে অপেক্ষাকৃত দক্ষ লোক ঠিক করতে হবে৷ আনাড়ি লোক দিয়ে চামড়া ছাড়াতে গেলে চামড়া কেটে যেতে পারে৷
৮. কোরবানির জন্য শোয়ানো অবস্থায় পশুটিকে যেন টানাহেঁচড়া না করা হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে৷
৯.কোরবানির পশু জবাই করার কাজে বড় ও চামড়া ছাড়ানোর কাজে ধারালো মাথা ভোঁতা ছুরি ব্যবহার করতে হবে৷
১০. সঠিক নিয়মে কোরবানির পশু শোয়ানো হলে সাধারণত চামড়া অক্ষত থাকে৷
কোরবানির পরেঃ কোরবানির চামড়ার গ্রেডিং ঠিক রাখতে হলে কোরবানির পর চামড়া ছাড়ানোর জন্য কিছু নির্দিষ্ট দিকে লক্ষ্য রাখা উচিত৷ এ ছাড়া চামড়া ছাড়ানোর পরে হাতেগোনা কিছু আনুষঙ্গিক কাজ করলে চামড়ার মান অক্ষুন্ন থাকে৷


কোরবানির পশুর উচ্ছিষ্ট ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা


পশু কেনা আর যত্ন-আত্তিতে ব্যস্ত সময় পার করেছন অনেকে৷ কারণ, একদিন বাদেই ঈদ৷ কিন্তু পশু কোরবানিতে পরিকল্পনার অভাব আর কোরবানির বর্জ্য অব্যবস্থাপনার কারণে পরিবেশ দূষিত হতে পারে৷ তাতে ফিকে হবে আপনার ঈদের আনন্দ৷ আর কোরবানির বর্জ্য দূষিত হয়ে তা থেকে ছড়াতে পারে রোগবালাই৷ তবে একটু সময় নিয়ে আর কিছু নিয়ম মেনে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করলেই এসব সমস্যা এড়ানো যাবে৷ সামান্য অসচেতনতায় একজনের কারণে অনেকের কষ্ট হতে পারে৷ অথচ একটু খেয়াল রাখলে সমস্যা এড়ানো সম্ভব৷ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আর পরিবেশ সুন্দর রাখতে তাঁর কিছু পরামর্শ দেখুন৷
১. কোনো এলাকার লোকজন বিচ্ছিন্ন স্থানে কোরবানি না দিয়ে বেশ কয়েকজন মিলে একস্থানে কোরবানি করা ভালো৷ 
২. কোরবানির জায়গাটি যেন খোলামেলা হয়৷ আর জায়গাটি রাস্তার কাছাকাছি হলে বজ্র্যের গাড়ি পৌঁছাতে সহজ হবে৷
৩. কোরবানির পর পশুর রক্ত ও তরল বর্জ্য খোলা স্থানে রাখা যাবে না৷ এগুলো গর্তের ভেতরে পুঁতে মাটিচাপা দিতে হবে৷ কারণ, রক্ত আর নাড়িভুঁড়ি কয়েক ঘন্টার মধ্যেই দুর্গন্ধ ছড়ায়৷ আর যদি রক্ত মাটি থেকে সরানো সম্ভব না হয়, তা হলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে৷

৪. এবার সিটি করপোরেশনের হাটগুলো য় প্রত্যেক ক্রেতাকে কোরবানির শক্ত বর্জ্য রাখার জন্য একটি বিশেষ পলিথিন দেওয়া হবে৷ মূলত ঈদের দিন বিকেল থেকেই কোরবানির পশুর উচ্ছিষ্ট ও অব্যবহৃত বর্জ্য সংগ্রহ কাজ শুরু হবে৷
কোরবানির বর্জ্য পলিথিনে করে রেখে দিতে হবে, যাতে ময়লা পরিবহন দ্রুততার সঙ্গে করা যায়৷ যাঁরা পলিথিন পাবেন না, তাঁরা এ রকম পলিথিন কিনে ময়লা রাখতে পারেন৷ 
৫. যেসব এলাকায় গাড়ি পৌঁছানো সম্ভব নয় বা দেরি হবে, সেসব স্থানে বর্জ্য পলিথিনের ব্যাগে ভরে ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট স্থানে রাখতে হবে৷ পশুর হাড়সহ শক্ত বর্জ্য গুলোও পলিথিনে দিয়ে দেওয়া ভালো৷ 
৬. নাড়িভুঁড়ি বা এ জাতীয় বর্জ্য কোনোভাবেই পয়:নিষ্কাশন নালায় ফেলা যাবে না৷ 
৭. যাঁরা চামড়া কিনবেন, তাঁরা কোনো বদ্ধ পরিবেশে চামড়া পরিষ্কার না করে এমন খোলামেলা স্থানে করতে পারেন, যেখানে ময়লা জমে দুর্গন্ধ হবে না৷ আর চামড়ার বর্জ্য গুলোও অপসারণের জন্য জমিয়ে রাখতে হবে৷
৯. সবশেষে কোরবানির পশুর বর্জ্য নিজের উদ্যোগে পরিষ্কার করাই ভালো৷


কোরবানী পশুর মাংস সংরক্ষণ ও রান্নাবিষয়ক টিপস

পশুর মাংস সংরক্ষণের কিছু নিয়ম আছে তা মেনে চললে মাংসের অপচয় রোধ করা সম্ভব হয়৷ নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো৷

মাংসের সঠিক সংরক্ষণ পদ্ধতিঃ

কোরবানির ঈদে মাংসের সরবরাহ থাকে প্রচুর৷ তৈরি করা যায় বিভিন্ন স্বাদের ও বিভিন্ন ঢঙের মাংসের আইটেম৷ মাংস প্রাণিজ প্রোটিনের খুব ভালো উত্‍স৷ কাজেই সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে পারলে কোরবানির ঈদের পর্যাপ্ত মাংস দিয়ে কাটিয়ে দেওয়া যাবে নির্দ্বিধায় দুই মাস৷
১. হালকা লবণ ও হলুদ দিয়ে মাংসগুলোকে তাপ দিলে তা অনেক দিন সাধারণ তাপমাত্রায়ই রাখা যায়৷
২. আবার ভিনেগার দিয়েও মাংস সংরক্ষণ করা যায়৷ কোনো টিন বা বোতলে ভিনেগারে মাংস সম্পূর্ণভাবে ডুবিয়ে রাখলে মাংস ভালো থাকে অনেক দিন৷
৩. আর ভিনেগার যদি না পাওয়া যায়, তাহলে
তার বদলে লেবুর রস ব্যবহার করা যেতে পারে৷ মাংসের টুকরোগুলোকে লেবুর রস দিয়ে মাখিয়ে ক্যানড করলে মাংস ভালো থাকে অনেক দিন৷
৪. ভিনেগার বা লেবুর রস ব্যবহার করলে মাংস সংরক্ষণের পাত্রটি ডিপ ফ্রিজে না রেখে রেফ্রিজারেটরে সাধারণ তাপমাত্রায় রাখতে হবে৷
৫. মাংস সংরক্ষণের সবচে য়ে আদি পদ্ধতি হলো মাংস রোদে শুকিয়ে নেও য়া৷ হালকা লবণ দিয়ে মেখে নিয়ে রোদে ভালোভাবে শুকালে এই মাংস ভালো থাকে অনেক দিন৷ তবে শুকানোর পর অবশ্যই মাংসগুলো টিনে ভালো করে এঁটে রাখতে হবে, নয়তো পোকামাকড়ের আক্রমণে তার আবার পুষ্টি অপচয় হবে৷

চর্বি ছাড়া মাংস খানঃ 

সাধারণত মাংস কাটা হয় কিউব আকারে৷ এভাবে কাটলে মাংসের মধ্যে চর্বির স্তরগুলো থেকেই যায়৷ এ জন্য মাংসের টুকরাগুলো স্তরে স্তরে কেটে চর্বির অংশটুকু বাদ দিন৷ সিনা, রান যেকোনো অংশ থেকেই এভাবে চর্বি বাদ দি য়ে শুধু লাল মাংসটুকু রাখা যেতে পারে৷
যাদের কোলেস্টেরলে সমস্যা রয়েছে, তাঁরা মাংস প্রথমে সেদ্ধ করে পানিটুকু ফেলে দিন৷ এরপর ইচ্ছামাফিক রান্না করুন৷ এতেও চলে যাবে অনেকখানি চর্বি৷
গ্রিল করা মাংসে চর্বি প্রায় থাকেই না বলা যায়৷ রোস্ট বা অন্য কোনোভাবে রান্না না করে তাই গ্রিল খাওয়া অনেক স্বাস্থ্যকর৷
সাদা সিরকা, লেবুর রস ও লবণ মাখিয়ে কাঁচা মাংস ভিজিয়ে রাখুন সারা রাত৷ এভাবে রাখলে মাংসের প্রায় ৮০ শতাংশই চর্বিই চলে যা য়৷ এরপর তা সংরক্ষণ করা যেতে পারে অথবা রান্না করতে পারেন আপনার পছন্দমতো৷


কোন অংশের মাংস দিয়ে কী রান্না করবেন? 

সব গোশত দি য়ে সব ধরনের আইটেম তৈরি করা যা য় না৷ তাই রান্নার আগে তাকে ওই গোশত সম্পর্কে সচেতন হ য়ে রান্না শুরু করতে হবে৷ এবার জেনে নিন কোন অংশের গোশত দি য়ে কি কি তৈরি করা যাবে৷

রানের গোশতঃ কোরমা, টিকি য়া, বিফ বার্গার, কোপতা, বিরিয়ানি ইত্যাদি তৈরি করা যাবে৷
পেটের দু’পাশের গোশতঃ শিক কাবাব, হাঁড়ি কাবাব, কিমা, কোপ্তা, শামি কাবাব তৈরি করা যায়৷
হাঁটু থেকে পা য়ের অংশ পর্যন্ত : স্যুপ ও কারির জন্যে ভালো৷
সিনার গোশতঃ তেহারি, কারি, রোস্ট ও কোমরের গোশত দিয়ে রোস্ট, কোরমা, বিরিয়ানি তৈরি করা যাবে৷

গোশত তাড়াতাড়ি সিদ্ধ হতে পেঁপে দিতে পারেন অথবা তাড়াতাড়ি সিদ্ধ হও য়ার জন্য ব্যবহার করতে পারেন সামান্য চিনি৷
গোশতের টেস্ট গোশত কষানোর ওপর নিভর্র করে৷ গোশত কষানোর পর পানি দিয়ে ফুটিয়ে ঢেকে আঁচ মধ্যম করে দিন৷ আস্তে আস্তে গোশত সিদ্ধ হয়ে আসবে৷
গোশত রান্নার সময় ঢেকে রান্না করবেন এতে খাবারের মান ভালো থাকে৷ এছাড়া গোশতও তাড়াতাড়ি সিদ্ধ হয়ে যায়৷ 


বোনাস হিসেবে গুরুর মাংসের রেসিপি !:#P :D 
১. কাটা মসলায় গরুর মাংস

উপকরণ : গরুর মাংস ১ কেজি, পেঁয়াজ ৪ টুকরা করা ১ কাপ, আদা চাক চাক টুকরো করা কোয়ার্টার কাপ, রসুনা মোটা টুকরা করা কোয়ার্টার কাপ, শুকনা মরিচ বিচি ফেলে দেওয়া ৭-৮টি, দারুচিনি ৩ টুকরা, এলাচ ৪টি, জায়ফল-জৈয়ত্রী ১ চা চামচ, জিরা ভাজা (আস্ত) ১ চা চামচ, বেরেস্তা আধা কাপ, চিনি ১ চা চামচ, কাঁচামরিচ ৫-৬টি, ঘি ২ টেবিল চামচ, লবণ পরিমাণ মতো।
প্রস্তুত প্রণালি : গরুর মাংস লবণ ও টক দই মাখিয়ে আধা ঘণ্টা মেরিনেট করুন। এবার আদা, রসুন, শুকনামরিচ, কাঁচামরিচ, এলাচ, দারুচিনি, জয়ফল, জৈয়ত্রী, জিরা দিয়ে আরও আধা ঘণ্টা মেরিনেট করুন। প্যানে তেল গরম করে মাংস দিয়ে কষিয়ে নিন। ভালো করে কষানো হলে পরিমাণ মতো পানি দিয়ে মাংস সিদ্ধ করুন। মাংস সিদ্ধ হয়ে গেলে বেরেস্তা, ঘি ও চিনি দিয়ে মৃদু আঁচে বসিয়ে রাখুন। মাংস হয়ে গেলে নামিয়ে পরিবেশন করুন।


২. গরুর মাংস ভুনা

উপকরণঃ গরুর মাংস ১ কেজি, আদা বাটা ৪ টেবিল চামচ, রসুন বাটা ২ টেবিল চামচ, আস্ত রসুন ৬ কোয়া, জিরা বাটা ১ চা চামচ, দারুচিনি ৬ টুকরা, এলাচ ৬ টুকরা, পেঁয়াজ মোটা গোল করে কাটা ২ কাপ, পেঁয়াজ চিকন কুচি ১ কাপ, কাঁচা জিরা, শুকনা মরিচ ২টা, তেল ২ কাপ, হলুদ বাটা দেড় চা চামচ, শুকনা মরিচ বাটা ১ চা চামচ, লবণ ১ টেবিল চামচ, চিনি ১ চা চামচ।

প্রণালীঃ প্রথমে চুলায় তেল দিয়ে চিকন কুচি করা পেঁয়াজ ভেজে নিতে হবে। এবার মোটা গোল পেঁয়াজ দিয়ে একটু বাদামি হলে মাংস, আদা বাটা, রসুন বাটা, জিরা বাটা, হলুদ বাটা, মরিচ বাটা দিয়ে খুব ভালো করে ভুনে গরম পানি ২ কাপ ঢেলে দিতে হবে। মাংস আধা সেদ্ধ হলে আস্ত রসুন দিতে হবে এবং ঢিমা আঁচে রাখতে হবে। এবার চুলায় কাঁচা জিরা, দারুচিনি, এলাচ, শুকনা মরিচ শুকনা তাওয়ার ওপর ভেজে গুঁড়া করে নিতে হবে। ভাজা পেঁয়াজ চিনির সঙ্গে মিশিয়ে নিতে হবে। যখন মাংস ভুনে তেলের ওপর আসবে, তখন পেঁয়াজের সঙ্গে মেশানো মসলা মাংসের ওপর ছড়িয়ে ঢিমা আঁচে আধা ঘণ্টা রাখতে হবে।


৩. নেহারি

যা যা লাগবেঃ গরুরর পায়া- ১ কেজি, হাড়সহ মাংস- ১ কেজি, পিঁয়াজ কুচি- ১ কাপ, আদা ছেঁচা- ২ টেবিল চামচ, বড় এলাচ গুঁড়া- ২টি, ছোট এলাচ গুঁড়া- ৪টি, শাহী জিরা- ২ চা চামচ, গোল মরিচ গুঁড়া- ২ চা চামচ, লবঙ্গ- ৩টি, দারুচিনি- ৩ টুকরা, শুকনা মরিচ- ৩টি, কাঁচামরিচ- ৭/৮টি,

সয়াবিন তেল- ২ টেবিল চামচ, লবণ- স্বাদমতো, ধনেপাতা কুচি- ২ টেবিল চামচ।
যেভাবে করবেনঃ তেলে গরুর পায়া ও মাংসগুলো লাল করে ভেজে ওই তেলেই পিঁয়াজ ভেজে তুলে রাখুন, আদা, বড় এলাচ, ছোট এলাচ, শাহী জিরা, গোলমরিচ, লবঙ্গ, দারুচিনি দিয়ে ১ মিনিট ভেজে এতে ভাজা মাংস, পিঁয়াজ, শুকনা মরিচ দিয়ে ২ মিনিট ভেজে ৪-৫ লিটার পানি দিয়ে দিন। ফুটে উঠলে মৃদু আঁচে ঢেকে ৩-৪ ঘণ্টা সিদ্ধ করে মাঝে ২ ঘণ্টা পর লবণ-কাঁচামরিচ দিয়ে দিন। হাড় থেকে মাংস খুলে এলে নামাবেন। ঝোল কিছুটা ঘন হবে কিন্তু অনেক ঝোল থাকবে। নান, তন্দুরি রুটির সঙ্গে পরিবেশন করুন। চাইলে পরিবেশনের সময় ধনেপাতা, কাঁচামরিচ, আদাকুচি দেয়া যায়।


৪. কাবাব গোশত

উপকরণ
হাড়সহ গরুর মাংস এক কেজি, টক দই এক কাপ, পেঁয়াজ বাটা এক টেবিল চামচ, রসুন এক চা চামচ, আদা বাটা এক চা চামচ, জিরা বাটা এক চা চামচ, পোস্ত বাটা আধা চা চামচ, কাঠবাদাম বাটা এক চা চামচ, গোলমরিচ গুঁড়া এক চা চামচ, মরিচ গুঁড়া স্বাদ অনুযায়ী, এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, তেজপাতা তিনটি করে, জায়ফল বাটা এক চা চামচ, জয়ত্রী বাটা আদা চা চামচ, পেঁয়াজ বেরেস্তা আধা চা চামচ, ঘি এক কাপের চার ভাগের এক ভাগ, লবণ স্বাদমতো, চিনি আধা কাপ, কেওড়া পানি এক টেবিল চামচ।
যেভাবে তৈরি করবেন
১. গরুর মাংস ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন।
২. জায়ফল, জয়ত্রী ছাড়া সব উপকরণ দিয়ে মাংস ম্যারিনেট করে রাখুন এক ঘণ্টা।
৩. কড়াইয়ে ঘি গরম করে গোটা গরম মসলা দিয়ে ফোড়ন দিন। এরপর ম্যারিনেট করা মাংস দিয়ে দিন।
৪. মাংস নেড়ে লবণ ও চিনি দিন। মাংস কষানো হলে দুই কাপ পানি দিয়ে ঢেকে দিন।
৫. সিদ্ধ হয়ে এলে ঘি ও বেরেস্তা, জায়ফল, জয়ত্রী দিয়ে নেড়ে অল্প আঁচে ঢেকে রাখুন ৩০ মিনিট।
৬. নামিয়ে পরিবেশন করুন কাবাব গোশত।


৫. চট্টগ্রামের মেজবানী মাংস

উপকরণ : গরুর বিভিন্ন অংশের মাংস, কলিজা ও হাড় মিলিয়ে ৫ কেজি, পেঁয়াজকুচি ২ কাপ, আদাবাটা ৩ টেবিল-চামচ, রসুনবাটা ২ টেবিল-চামচ, লাল মরিচবাটা ৩ টেবিল-চামচ, জিরা গুঁড়া দেড় টেবিল-চামচ, ধনে গুঁড়া ১ টেবিল-চামচ, হলুদ গুঁড়া ২ টেবিল-চামচ, সাদা তিলবাটা ১ টেবিল-চামচ, পেঁয়াজবাটা আধা কাপ, সরিষা তেল আড়াই কাপ, মিষ্টি জিরাবাটা ১ চা-চামচ, রাঁধুনিবাটা ১ চা-চামচ, সরিষাবাটা ১ টেবিল-চামচ, পোস্তদানাবাটা ১ টেবিল-চামচ, তেজপাতা ৭-৮টি, এলাচ, দারচিনি ও লবঙ্গবাটা ১ টেবিল-চামচ, কাবাব চিনিবাটা ১ টেবিল-চামচ, জায়ফল-জয়ত্রিবাটা ১ চা-চামচ, গোলমরিচবাটা ১ চা-চামচ, মেথিবাটা ১ চা-চামচ, পানি ৪-৫ কাপ, লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি :
-তেলে পেঁয়াজকুচি লাল করে ভেজে গরম মসলা ছাড়া বাকি মসলা মাখিয়ে মাংস ঢেলে ভালোভাবে কষান।
-আধা ঘণ্টা পর ৪-৫ কাপ গরম পানি দিয়ে ঢেকে দিন।
-মাংস সেদ্ধ হয়ে এলে গরম মসলা দিয়ে কিছুক্ষণ ঢেকে রেখে নামিয়ে নিন। তৈরি আপনার মেজবানী মাংস! 


স্বাস্থ্য সতর্কতা 

ভোজন রসিকদের জন্য কুরবানির ঈদ মানেই ভুরি ভোজের মহোৎসব। ঈদ উপলক্ষে বানানো নানা পদের বাহারি খাবার –দাবার দেখে অনেকেই জিহ্বা সংবরণ করতে পারেন না। এটা পরবর্তীতে তাদের জন্য হিতে বিপরীত হয়। 
১. ঈদের দিন অতিরিক্ত তেল-মসলা, চর্বিজাতীয় খাবার, পোলাও, বিরিয়ানি কম খান।
২. শসা, টমেটো, লেবু, গাজরের সালাদ এবং আঁশযুক্ত সবজি প্রতি বেলার খাবারের সঙ্গে যেন থাকে সে ব্যাপারে লক্ষ রাখুন। সালাদ এবং আঁশযুক্ত সবজি খাবারের চর্বি শরীরে শোষিত হতে বাধা দেয়। গবেষকদের মতে, প্রতিদিন ১০ গ্রাম আঁশযুক্ত খাবার কোলেস্টেরলের পরিমাণ ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে পারে। ফলে এর ক্ষতিকর প্রভাব যেমন কমে, তেমনি কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পেটের গোলমাল প্রতিরোধেও তা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। 
৩. খাবারের পর দই খাওয়া উপকারী।
৪. খাবারের ফাঁকে ফাঁকে প্রচুর পানি পান করুন। ফলের জুস পান করতে পারেন। কোলাজাতীয় সফট ড্রিংকস বর্জন করুন। 
৫. অতিভোজন এড়িয়ে চলুন। অতিভোজনের ফলে পাকস্থলীর এনজাইম ঠিকমতো কাজ করতে ব্যর্থ হলে পেট ব্যথা, পেট ফাঁপা, ডায়রিয়া, বমিসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। একবারে বেশি না খেয়ে পর্যাপ্ত বিরতি দিয়ে অল্প অল্প করে খান।
৬. খাওয়ার সময় গল্প কম করুন এবং খাবার ভালো করে চিবিয়ে খান। কেননা ঈদের দিন সবাই মিলে গল্প করতে করতে খাওয়ার সময় পাকস্থলীতে অতিরিক্ত বাতাস ঢুকে বারবার ঢেঁকুর তোলার সমস্যা হতে পারে।
৭. যাদের হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস আছে, ঈদের দিন তাদের খাবারে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। প্রচুর পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা সম্পৃক্ত চর্বি থাকার কারণে লাল মাংস অর্থাৎ গরু বা ছাগলের মাংস অতিরিক্ত খেলে হৃদরোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য তা সমস্যা সৃষ্টি করে। 
৮. যাদের পেপটিক আলসার আছে তাদের তৈলাক্ত ও ঝাল মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
৯. যারা নিয়মিত ওষুধ সেবন করে, উৎসব-আনন্দে তাদের ওষুধ সেবন যেন বাদ না পড়ে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। 
সবশেষে ফার্স্ট এইড হিসাবে রেনিটিডিন, অমিপ্রাজল, ওরস্যালাইন, টেট্রাসাইক্লিন ইত্যাদি হাতের কাছে রাখতে ভুলবেন না যেন। সব ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা এড়িয়ে ঈদ হয়ে উঠুক সবার জন্য আনন্দময়। 

ব্যস্ততার কারণে ইদানিং ব্লগে সময় দিতে পারছিলাম না। সহ ব্লগারদের কাছ থেকে ক্রমশ দূরে চলে যাচ্ছিলাম। তাই অনেক কষ্ট এ পোস্টটি দাঁড় করালাম। কিছু ভূলভ্রান্থি থাকতে পারে। অনিচ্ছাকৃত ভূলের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।

আবারও সবাইকে শুভেচ্ছা ও ঈদ মোবারক।


তথ্যসূত্র : উইকিপিডিয়া, দৈনিক প্রত্রিকা, বিভিন্ন ব্লগ ও ইন্টারনেট।

No comments:

Post a Comment