যৌতুকের ডিজিটাল ভার্শন: চট্রগ্রামে যেভাবে শিকার হয় কনে পক্ষ
যৌতুক প্রথা নিয়ে সরকার অনেক প্রচারণা চালিয়েছে। শুধি সমাজে এর প্রভাব খুব ভালো করে পড়েছে। তাই যৌতুক প্রথা আজ সম্পূর্ণ না হলেও দমন করা সম্ভব হয়েছে। সাথে সাথে নতুন প্রথারও উদ্ভব হয়েছে বটে আর তা হল গিফট। মানুষ এখন যৌতুক দেয়া নেয়া করেনা শুধি জনেরা এখন গিফট দেয়া নেয়া করে।
চট্টগ্রামের যৌতুকের শৈল্পিকতা নিয়ে আজ কিছু বলব বলে ঠিক করেছি। এই অঞ্চলের বিয়ের আমেজ প্রায় এক বছর সম্পূর্ণ রূপে স্থায়ী থাকে। ধরুন কোন ভাবে একটি ছেলে ও একটি মেয়ের পারিবারিক ভাবে বিয়ে ঠিক হল। দুই পরিবারের মুরুব্বি-গন মিলে বিয়ের আয়োজনে তৎপর হয়ে পড়েন। বর পক্ষ ও কনে পক্ষের লেনদেনের ব্যাপারটা এই আলোচনাতেই শুরু। বর পক্ষের লোকজন বলবে আপনাদের কাছে আমাদের কোন দাবী নেই। আপনারা আপনার মেয়েকে সাজিয়ে দিবেন। আপনারা যদি ফ্রিজ দেন ঠাণ্ডা পানি খাবে আপনাদেরই মেয়ে খাট পালং দিলে সেখানে শুবেও আপনাদের মেয়ে। এই ভাবে ফুল ফার্নিচার আর টিভি ফ্রিজ দিতে হয় মেয়ে পক্ষকে। যদি বর পক্ষ নিতে আপত্তি করে তাহলে কনে পক্ষ তাকে উপহার বলে সিদ্ধ করে। তারপরে আসে বর যাত্রার ব্যাপারটা যে খরচটা বহন করতে হয় সম্পূর্ণ কনে পক্ষকে। স্ট্যাটাসের উপর নির্ভর করে বর যাত্রী সংখ্যা এবং তা ৮০০-১৫০০ মধ্যে সাধারণত হয়ে থাকে আর যদি বর পক্ষ বলে আমরা বর যাত্রী চাইনা তার পরিবর্তে বরযাত্রী বাবদ যত খরচ হবে তা তাদের দিয়ে দেওয়া হোক এবং তাতে কনে পক্ষ রাজী হতে বিলম্ব করেনা। সেই টাকার পরিমাণ ১ লক্ষ টাকার কম হয়ে থাকেনা। যাক বিয়েটা এভাবে হয়ে গেল।
কনে গেল তার শশুর বাড়ি। কিন্তু তার কয়েকদিন পরেই কুরবানের ঈদ। এবং অবশ্যই কুরবান উপলক্ষে কনে পক্ষ আস্ত একটা গরু গিফট পাঠিয়ে দেয়। যে পশু মহান আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য কোরবানি করা হয় তা কনের বাবা তার মেয়ের শশুর বাড়ীর লোকদের সন্তুষ্ট করার জন্য কোরবানি করে দেয়। এই গরু হয় বরপক্ষ বিক্রয় করে দেই অথবা কোরবানি দিয়ে দেই এখানে কোরবানের সার্থকতা কতটুকু তা বিজ্ঞ হুজুর সম্প্রাদয় বিচার করুক।
কোরবানের পরেই মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব মহরম হয় এই উপলক্ষে কনে পক্ষ এক ঠেলা গাড়ি কোরমা পোলাও মুরগীর রোস্ট পাঠায়। এবং এর পরিমাণ যত বেশী হবে শশুর বাড়ির লোকজনের চেহারার উজ্জ্বলতা তত বৃদ্ধি পাবে।
তারপরে শুরু হয় গরমের সময়। তরমুজ বাকির( এক ধরনের ফল) ছড়াছড়ি তখন পুরানো ঠেলা ওয়ালা কে আবার স্মরণ করতে হয়। তার পর আসল আমা কাঁঠালের দিন।
এখানে শেষ মনে করলে ভুল করবেন। মহরমের পর আসে শবে বরাত এবং মহরমে যা যা পাঠানো হয়েছে তার পুনরাবৃত্তি ঘটে। তার কদিন পরেই রোজা। ইফতারি কাহাকে বলে কনে পক্ষ তা বর পক্ষকে বুঝিয়ে ছারে। এই রোজাতেও ঠেলা ওয়ালাকে নিরাশ হতে হয়না।
মেয়ের শশুর বাড়ির প্রতিটি সদস্যের জন্য ঈদের জামা কাপর অবশ্যই পাঠাতে হবে। এবং তাও হতে হবে বিশদ আয়োজনে। ঈদ গেল এখন শীত পরছে ধরে নিন। শিতের যত রকম পিঠা আছে তা না পাঠালে কি হয়? এক বছর পূর্ণ হল।
এদিকে-তো কনে এখন গর্ভবতী তার ডেলিভারির সময় ঘনিয়ে এসেছে। বাচ্চা হল। আকিকা হল। নানা নানী যদি ছাগল না দেই সে আকিকা কি পূর্ণ হবে? বাচ্চা একটু বড় হল সামান্য দাঁত দেখা দিতে লাগলো। তাতেই মেয়ের শশুর বাড়ীর লোক ব্যস্ত হয়ে পড়ে নানা নানী কে খবর দেয়ার জন্য। কারণ বাচ্চাটার দাঁত উঠেছে সে এখন মাংস খেতে পারবে। সে উপলক্ষে মাংস পাঠানো হোক। এখন আপনার বিবেচনা এটা কে কি আপনি সংস্কৃতি বলবেন নাকি অপসংস্কৃতি বলবেন? ও আচ্ছা যৌতুক প্রথা কি বন্ধ হয়েছে?
No comments