Header Ads

Header ADS

হাজার কষ্ট সয়ে তিলে তিলে সন্তানকে বড় করেন একজন বাবা

সন্তানের ভালোর জন্য জীবনের অনেক কিছুই নির্দ্বিধায় ত্যাগ করতে হয় একজন বাবা কে। আদর-শাসন আর বিশ্বস্ততার জায়গা হলো বাবা । বাবা র তুলনা বাবা নিজেই। শুধু ভালোবাসা বা আদর-শাসন নয়, একজন বাবা দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়ে
তাঁর সন্তানকে বড় করে তোলেন। হাজার কষ্ট সয়ে তিলে তিলে  সন্তানকে বড় করেন একজন বাবা। বাবা শাশ্বত, চির আপন, চিরন্তন। সন্তানের মাথার ওপর যাঁর স্নেহচ্ছায়া বটবৃক্ষের মতো।

শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর যে শব্দগুলো সবার আগে তার মুখ থেকে বেরিয়ে আসে তার অন্যতম হচ্ছে `বাবা`। এ যেন সন্তানের কাছে চিরন্তন আস্থার প্রতীক। কোনো শিশু যখন এই শব্দ উচ্চারণ করতে শেখে তখন বাবার মন পুলকে ভরে যায়। বাবা বলে ডাকতে পারাতে বাবার হাস্যোজ্জ্বল অনুভূতি যেন সেই অবুঝ শিশুর হৃদয়কে মুহূর্তেই আন্দোলিত করে তোলে। তবে বাবা কি শুধুই একটি বিশেষ দিনের জন্য?

বাবা দিবস নিয়ে আলাদা করে কিছু ভাবতে পারছি না। সন্তান জন্মের পর যেমন প্রথমেই মায়ের বুকের উষ্ণতা স্পর্শ পায়, তেমনি বাবাও মাথার উপর ছায়া হয়ে থাকে। কবে প্রথম কে বাবার আঙ্গুলটা ধরেছিলো তা হয়ত কেউ বলতে পারবে না কিন্তু বাবার সেই আঙ্গুলটা ছেলেমেয়েরা ধরেই থাকে আথবা ধরে থাকাটা ধরে থাকার স্মৃতিটা টের পায়।

মা যেমন পরম মমতায় সন্তানকে কাছে টানে, জড়িয়ে থাকে---- একটা সময় পর বাবারা সেটা সহজে আর করে না। মাঝে মাঝে আমার মনে হয় বাবার মধ্যে সেই দূরে থাকাটা বরং কষ্টের হয়। বাবারও ইচ্ছে করে সেই ছোটবেলার মত তার সন্তান তাঁকে জড়িয়ে ধরুক, কাঁধে মাথাটা রাখুক। এসব ভাবতে গিয়ে বাবারও বোধ হয় চোখটা ভিজে উঠে। তবু বড় হয়ে গেলে বাবার সাথে একটা শারীরীক দূরত্ব যেনো নিয়ম করেই মনে চলি। আমার বাবাকে দেখেই বুঝতে পারি এটা বাবারা মন থেকে খুব চায় না। বুকে আগলে রাখতে চায়। মা যেমন শত মানুষের মাঝেও চুমু দেয়, আদর দেয় বাবার চোখ বলে বাবাও তাই চায়।

বাবার প্রতি সন্তানের সেই চিরন্তন ভালোবাসার প্রকাশ প্রতিদিনই ঘটে। তারপরও পৃথিবীর মানুষ বছরের একটা দিনকে বাবার জন্য রেখে দিতে চায়। যেমনটা মায়ের জন্য করেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাবা দিবসের প্রচলন। সন্তানের কাছে বাবা পথপ্রদর্শক ও বন্ধুর মতে। অনেকেই বাবাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়। অনেক দেশে কার্ড উপহার দেওয়া হয়। অনেকেই বাবাকে নিয়ে বাইরে খেতে যায় নিয়ে যায় সিনেমা দেখতে, উপহার দেয় প্রয়োজনীয় সামগ্রী। যাদের বাবা বেঁচে নেই, তাঁরা হয়তো আকাশে তাকিয়ে অলক্ষ্যে বাবার স্মৃতি হাতড়ায়।
বিশ্বের প্রায় ৫২ দেশে এ দিবসটি পালিত হয়। পিতার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা প্রকাশের জন্য দিনটি বিশেষভাবে উৎসর্গ করা হয়ে থাকে।

বাবা, সে তো বাবাই। যার কারণে এই পৃথিবীর রং, রূপ ও আলোর দর্শন। সেই বাবা শব্দটির সঙ্গেই অপার স্নেহ আর মমতার মিশেলে এক দৃঢ় বন্ধনে জড়িয়ে থাকি আমরা। একজন মানুষের জীবনে সবচেয়ে প্রিয় এবং সর্বাধিকবার উচ্চারণ করতে হয় যে শব্দগুলো তার মধ্যে `বাবা` অন্যতম।
নতুন প্রজন্মের কাছে মা দিবস-বাবা দিবসের ধারণাগুলো দিন দিন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। গত শতাব্দীর প্রথমদিকে বাবা দিবস পালন শুরু হয়। আসলে মায়েদের পাশাপাশি বাবারাও যে তাদের সন্তানের প্রতি দায়িত্বশীল- এটা বোঝানোর জন্যই এ দিবস পালন শুরু।

উইকিপিডিয়া থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ধারণা করা হয়, ১৯০৮ সালের ৫ জুলাই প্রথম ‘বাবা দিবস’ পালিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম ভার্জিনিয়ার ফেয়ারমন্টের এক গির্জায় প্রথম এ দিনটি পালিত হয়। আবার সনোরা স্মার্ট ডড নামে ওয়াশিংটনের এক নারীর মাথাতেও বাবা দিবসের আইডিয়া আসে। যদিও তিনি ১৯০৯ সালে ভার্জিনিয়ার বাবা দিবসের কথা একেবারেই জানতেন না। ডড এই আইডিয়াটা পান গির্জার এক পুরোহিতের বক্তব্য থেকে, সেই পুরোহিত আবার মাকে নিয়ে অনেক ভালো কথা বলছিলেন। তার মনে হয়েছিল, তাহলে বাবাদের নিয়ে কিছু করা দরকার। ডড আবার তার বাবাকে খুব ভালোবাসতেন। তিনি সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগেই পরের বছর ১৯১০ সালের ১৯ জুন বাবা দিবস পালন করা শুরু করেন।

১৯১৩ সালে আমেরিকান সংসদে বাবা দিবসে ছুটি ঘোষণার জন্য একটি বিল উত্থাপন করা হয়। ১৯২৪ সালে সে সময়কার আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ক্যালভিন কুলিজ বিলটিতে পূর্ণ সমর্থন দেন। ১৯৬৬ সালে প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসন বাবা দিবসে ছুটি ঘোষণা করেন। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে জুন মাসের তৃতীয় রোববার বাবা দিবস হিসেবে পালিত হয়।

সব বাবাদের জন্য বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা। প্রত্যেক বাবা তাঁর প্রিয় সন্তানের মমতায় মমতা ছড়িয়ে থাকুক আজীবন। জীবনের শেষ সময়ে কোন বাবার ঠিকনা যেন না হয় বৃদ্ধাশ্রম! আজকের বাবা দিবসে এই কামনায় রইল।

লেখক:
এইচ এম রিয়াজ
সাংবাদিক ও ব্লগার
www.hmriaz.blogspot.com
fb.com/hmriaz.pekua
hmriazpekua@gmail.com
Powered by Blogger.