১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালবাসা দিবস পালিত হয়ে আসছে ছোটকাল থেকে দেখে আসছি। আর ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার সুবাদে ছোটকাল থেকেই জেনে এসেছি এদিবস পালন করা মুসলিমদের জন্য হারাম।
এ দিবস পালনে এক শ্রেনীর তরুণ তরুণীদের যে পরিমান বেহায়াপনা ও অবাদ যৌনাচার চলে এবং যে ভাবে জারজ সন্তানের জন্ম দেয়া হচ্ছে তা থেকে একথা স্পষ্ট বুঝা যায় যে, এ দিবসটি কোন সভ্য সমাজ পালন করতে পারে না।
যাই হোক এবছর ভাবলাম দেখি ভালবাসা দিবসের ইতিহাস কি?
আর কেনই বা এটি হারাম হবে?
ভালবাসা দিবসের ইতিহাস পড়ে আমি দেখি ভালবাসা দিবসের সাত কাহনে ধূধূ মরিচিকা। কোন একটি নির্ভর যোগ্য ইতিহাস নেই এবং কাকে কেন্দ্র করে এই দিবসটি পালিত হয় তাও অস্পষ্ট। ভেলেন্টাইন নামের কতলোক ছিলো, আর কত ইতিহাস তাদের। নিচে কিছু ইতিহাস তুলে ধরলাম।
১। প্রাচীন রোমানরা বিশ্বাস করত যে, জুনো দেবীর ইশারা-ইঙ্গিত ছাড়া কোন বিয়ে সফল হয় না তাই তারা সে দেবীর সম্মানে ১৪ ফেব্রুয়ারী ছুটি পালন করতো। আর ছুটির পরদিন মেলার আয়োজন করতো মেলায় উপস্থিত তরুণীরা তাদের নামাংকিত কাগজের সিপ জনসম্মুখে রাখা একটি বড় পাত্রে ফেলত। আর সেখান থেকে যুবকরা তোলে নিতো এবং তরুণীকে কাছে ডেকে নিত।
২। ৮২৭ খৃষ্টাব্দে ভ্যালেন্টাইন নামের এক ব্যক্তি রোমের পোপ নির্বাচিত হয়েছিল। জনপ্রিয় এই পোপ মাত্র ৪০ দিন দায়িত্ব পালনের পরই মৃত্যুবরণ করে তার মৃত্যুর পর তাঁর স্মরণে ১৪ ফেব্রুয়ারী রোমবাসী এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল।
৩। খৃষ্টধর্মের প্রথম দিকে রোমের কোন এক গীর্জায় ভ্যালেন্টাইন নামক দু’জন পাদ্রীর নৈতিক চরিত্র বিনষ্টের অপরাধে তাদের শিরোচ্ছেদ করা হয়েছিল ১৪ ফেব্রুয়ারী।
৪। রোমানদের বিশ্বাস ছিলো তাদের সবচেয়ে বড় প্রভু ‘জুয়াইবেতার’ এবং ব্যবসা, সাহিত্য, পরিকল্পনার প্রভু হলো ‘আতারিত’ তাই তারা তাদের প্রভুর সম্পর্কে ভ্যালেনটাইনকে জিজ্ঞেস করেছিলো আর সে উত্তরে বললো, এগুলো সব মানব রচিত প্রভু, প্রকৃত প্রভু হচ্ছে, ‘ঈসা মসীহ’ একথা বলার কারণে তাকে ১৪ ফেব্রুয়ারীতে হত্যা করা হয়।
৫। ভ্যালেনটাইন ছিলেন এক খ্রিষ্টান ধর্মযাজক আর তৎকালিন রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস ছিল মূর্তিপূজক তাই ভ্যালেনটাইনকে ধর্মপ্রচারের অপরাধে বন্ধি করা হয় খৃষ্টধর্ম ত্যাগ না করায় পরিশেষে ২৭০ খৃস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারী মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন।
৬। রোমান সম্রাট ক্লডিয়াসের সেনাবাহিনীতে সেনা সংকট দেখা দিলে সম্রাট চিন্তা করলো যে, অবিবাহিত যুবকরা যুদ্ধের জন্য অত্যধিক উপযুক্ত তাই সে বিবাহের উপর নিষেধাজ্ঞা জারী কলো। আর সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামের এক খ্রিষ্টান ধর্মযাজক সম্রাটের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাখ্যান করে ভালবেসে সেন্ট মারিয়াসকে বিয়ে করে এবং তার গীর্জায় গোপনে বিয়ে পড়ানোর কাজ চালাতে থাকেন। এ কথা সম্রাট জেনে গেলে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে গ্রেফতার করে কারারুদ্ধ হওয়ার পর কারারক্ষীর এক অন্ধ মেয়ে তার আধ্যাত্মিক চিকিৎসায় দৃষ্টিশক্তি ফিরে পায় এবং ভ্যালেন্টাইন তারও প্রেমে পড়ে যায় এতে সম্রাট আরও ক্ষিপ্ত হয়ে
তাকে ২৭০ খৃস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারী মৃত্যুদন্ড প্রদান করে।
৭। তৎকালিন রোমীয় একটি রীতি ছিল প্রতিবছর ১৪ ফেব্রুয়ারীতে এলাকার যুবকরা সমস্ত মেয়েদের নাম চিরকুটে লিখে একটি বাক্সে জমা করতো তার পর সে বাক্স থেকে প্রত্যেকে একটি করে চিরকুট তুলতো, যার হাতে যে মেয়ের নাম উঠত, সে মেয়ে হতো তার এক বছরের সঙ্গিনী এবং বৎসর শেষে এ সম্পর্ক নবায়ন বা পরিবর্তন করা হতো। চিরকুট হাতে পেয়ে মেয়েটির কাছে প্রতিমা মায়ের নামে চিঠি লিখতো। পরবর্তী কালে খ্রিষ্টান রা এদিনটিকে ধর্মায়ন করে দেয় এবং ঘোষণা করে এখন থেকে এ পত্রগুলো ‘সেন্ট ভ্যালেনটাইন’-এর নামে প্রেরণ করতে হবে।
উপরোক্ত ঘটনাবলি থেকে আর যাই হোক একটি কথা স্পষ্ট বুঝা যায় যে, এই ভেলেন্টাইন ডে এটি শুধু মাত্র খ্রীষ্টানদের ধর্মীয় নিদর্শন বজায় রাখতে তারা এই দিবস পালন করে আসছে। আর খ্রিষ্টানরা বিশ্বের মানুষকে অশ্লীল ও বেহায়া বানিয়ে তোলতে এই দিনটিকে জারি রেখেছে।
কাজেই এই দিন কোন মুসলিম পালন করা মানে হচ্ছে খ্রিষ্টানদের ধর্মীয় উৎসব করার শামিল। তা ছাড়া এই দিনের যে কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় তা কোন সভ্য সমাজ কখনই মেনে নিতে পারে না।