Header Ads

Header ADS

আহলে হাদিসদের প্রতারণামূলক ৪১টি প্রশ্নের দাঁতভাঙা জবাব

আহলে হাদিস তথা লা-মাযহাবীরা জনমনে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দিতে কয়েকটি প্রশ্ন তৈরি করেছে। যাতে এগুলো দিয়ে স্বাধারণ মানুষকে সহজে বিভ্রান্ত করা যায়। আমি তাদের প্রশ্ন গুলো এখানে জবাব সহ আপনাদের খেদমতে তুলে ধরছি
.
দ্বিমুখী মাযহাবী তথা আহলে হাদিসদের প্রতারণামূলক ৪১টি প্রশ্নের দাঁতভাঙা জবাব পড়ুন!

বর্তমানকালের সব চেয়ে জঘন্যতম ফেতনা ও চরম প্রতারক কথিত আহলে হাদিস তথা লামাযহাবী ফেতনা। এরা খুব কৌশলে মানুষের মনে সন্দেহ সৃষ্টি করে দিতে পারে। এদের সব চেয়ে কৌশলী অস্ত্র হল, মিথ্যাচার আর অহর্নিশি সহীহ হাদিসের ফুলঝুরি। বড্ড অবাক হই, এরা কোনো ইমামের তাকলীদ করা তথা ফতুয়া মানাকে অন্ধ বিশ্বাস বলে কটাক্ষ্য করে, অপর দিকে নিজেরাই শায়খ আলবানীর নাম জপতে জপতে মুখে ফেনা তুলে পেলে। এটা কি তাদের দ্বিমুখী চরিত্র নয়? আমি সেজন্য তাদের নাম রেখেছি দ্বিমুখী মাযহাবী
গত কতেক দিন আগের কথা। ভ্রষ্ট প্রতারক দ্বিমুখী মাযহাবীদের (আহলে হাদিস) এক অনুসারী আমাকে এবং আমার আরো একজন দ্বীনি ভাইকে চ্যালেঞ্জ করে মাযহাবের প্রতি গ্ণমানুষের মনে সন্দেহ সৃষ্টি করা যেতে পারে এমন অতি অন্তঃসারশূন্য কিছু প্রশ্ন (আনুমানিক ৪১টি) ছুড়ে দিয়েছে। আমরা এখানে সংক্ষেপে তাদের উক্ত প্রতারণামূলক প্রশ্নগুলোর উত্তর দেব, ইনশাআল্লাহ।
লক্ষ্য রাখবেন, প্রশ্নগুলো তাদের এবং উত্তরগুলো আমাদের।
১। মাযহাব কাকে বলে?
উত্তর: ইসলামী শরীয়তে, মুজতাহিদ ফীশ শরীয়তের রায় বা মতকে মাযহাব বলে। যেমন- ইমাম আবূ হানীফা, মালিক, শাফেয়ী, আহমাদ, লাইছ, সুফিয়ান সওরী, আওযায়ী প্রমুখ ( (আলাইহির রাহমাহ)। মুজতাহিদ ফীশ শরীয়ত হচ্ছে, যেসব মুজতাহিদ ইজতিহাদের নীতিমালা নির্ধারণ করেছেন।
২। মাযহাবের শাব্দিক অর্থ কি? উঃ মত, পথ, রায়, স্কুল ও ধর্ম ইত্যাদি।
৩। প্রচলিত চার মাযহাব মান্য করা কি ফরয? উঃ না। তবে, ওয়াজিব।
৪। যদি ফরয হয়ে থাকে তা হলে এই ফরযটি উদ্ভাবন করল কে? উঃ আগেই বলেছি, ফরজ নয়। ইমামগণের নামেই মাযহাবগুলো প্রচলিত হয়েছে। কেননা, তাঁরা, তাঁদের অনুসারী ফকীহগণ ইসলামী আইনশাস্ত্রে যে অবদান রেখেছেন তাঁদের পরে তা আর কেউ পারেন নি। ফলে, সিংহভাগ মুসলিম জনগোষ্ঠী এ চার মাযহাব গ্রহণ করেছেন। আর বাকিগুলো বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
.
আপনার প্রশ্নটির ছোট করে আরেকটি জবাব হল, মাযহাব ছাড়া পূর্ণ দ্বীন মানা সম্ভব নয়, তাই চার মাযহাবের যে কোন একটি মাযহাব মানা আবশ্যক। যেমন দুই রাকাত নামায মাযহাবের অনুসরণ ছাড়া আদায় করা অসম্ভব।

উদাহরণত
১- রুকু করা ফরজ কুরআন দ্বারা প্রমাণিত।

২- রুকুর তাসবীহ পড়া সুন্নত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
৩- রুকুতে গমণের সময় ইমাম জোরে তাকবীর বলে আর মুসল্লি আস্তে তাকবীর বলে। এ মাসআলা কুরআন ও হাদীসের কোথাও নেই। অথচ তা নামাযের মাসআলা। ইমাম যে জোরে তাকবীর বলে, আর মুসল্লি সর্বদা আস্তে আস্তেই তাকবীর বলে এভাবে আমল করার দ্বারা নামায শুদ্ধ হচ্ছে কি না? তা কুরআন ও হাদীসের কোথাও নেই। এর সমাধান মাযহাবের ইমামদের ইজমা তথা ঐক্যমত্ব এর দ্বারা প্রমানিত হয়েছে।
৪- রুকুতে গিয়ে যদি কেউ ভুল তাকবীর না বলে, রুকুর তাসবীহের বদলে কেউ সেজদার তাসবীহ বলে ফেলল, তাশাহুদের বদলে সূরা ফাতিহা পড়ে ফেললো, জোরে কিরাতের স্থলে আস্তে কিরাত পড়ল, আস্তের স্থলে জোরে পড়ল এসব মাসআলার সমাধান ছাড়াতো সহীহ পদ্ধতিতে নামায পড়া সম্ভব নয়। আর এসব মাসআলাসহ নামাযের অসংখ্য মাসায়েলের সমাধান না কুরআন দ্বারা প্রমাণিত, না হাদীস দ্বারা প্রমানিত। বরং এসব সমাধান মাযহাবের ইমামগণ কুরআন ও হাদীসের গভীর থেকে মূলনীতি বের করে এর আলোকে উদ্ভাবন করেছেন। আর তাদের উদ্ভাবিত সেসব মাসআলার নামই হল মাযহাব। এইতো গেল শুধু নামাযের একটি ছোট্ট অংশের উদাহরণ।
এমনিভাবে মানুষের জীবন ঘনিষ্ট এমন অসংখ্য মাসআলার উপমা পেশ করা যাবে, যার সরাসরি কোনো সমাধান কুরআন ও হাদীসে নেই। কিংবা অনেক স্থানেই বাহ্যিক বিরোধপূর্ণ। তাই মাযহাব মানা ছাড়া সাধারণ মুসলমানদের কোন গত্যান্তর নেই। অন্তত দুই রাকাত ও পূর্ণ করে পড়ার জন্য প্রতিটি মুসলমান মাযহাবের প্রতি মুখাপেক্ষী। তাই যেহেতু মাযহাব ছাড়া দুই রাকাত নামাযও পড়া যায় না, পূর্ণ দ্বীন মানাতো বহু দূরের কথা, তাই গায়রে মুজতাহিদ ব্যক্তিদের জন্য মাযহাব মানা ওয়াজিব।
৫। ইহা কি সকলের জন্যই? উঃ মুজতাহিদ ছাড়া বাকি মুসলমানের জন্যেই।
৬। না কিছু লোকের জন্য? উঃ ৫নং উত্তর দেখুন।
৭। যারা চার মাযহাব মানে না, তারা কি মুসলমান নয়? উঃ কোনো গায়ের মুজতাহিদ মুসলমান চার মাযহাবের কোনোটি না মানলে, সে নামমাত্র মুসলমান।
৮। হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী হাম্বলী এই চার মাযহাব কখন সৃষ্টি হয়েছে? উঃ এ চার মাযহাবের জন্ম হয়েছে, খাইরুল কুরুন বা প্রসিদ্ধ ৩ যুগে।
৯। কে সৃষ্টি করেছে? উঃ আল্লাহ তালা সৃষ্টি করেছেন।
১০। কেন করেছে? উঃ তিনি মানুষের প্রয়োজনেই সব সৃষ্টি করে থাকেন। বিস্তারিতভাবে জানতে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
১১। ইহা করা এবং মানার জন্য কি আল্লাহ এবং রসুলের নির্দেশ আছে? উঃ হাঁ। ৪ মাযহাবের ইমামগণ আল- কুরআনে বর্ণিত উলুল আমরের (৪:৫৯ ও ৮৩) অন্তর্গত।
১২। যাদের নামে মাযহাব সৃষ্টি করা হয়েছে তারা কি এই মাযহাবগুলি বানিয়ে নিতে বলেছেন কিংবা দাবি করেছেন?
উত্তর : তাঁদের কেউ কেউ বলেছেন। যেমন- ইমামে আজম (আলাইহির রাহমাহ) বলেছেন: যখন হাদিস সহীহ হয়, (তাহলে বুঝতে হবে) সেটাই আমার মাযহাব। এখানে তিনি স্পষ্টভাবে আমার মাযহাব দাবি করেছেন।
ইমামে আজম আবু হানিফা (আলাইহির রাহমাহ)-এর এ উক্তি দ্বারা আরো একটি বিষয় সুস্পষ্ট হয়ে গেল যে, উনার সমুদয় গবেষণালব্ধ রায়গুলো সহীহ হাদিস নির্ভর ছিল। অন্যথা এরকম কথা বলার কী অর্থ! (ক্লিক করুন- www.markajomar.com/?p=981)
রেওয়ায়েত ও হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করার ক্ষেত্রে ইমাম আবু হানীফা (রহ) তাঁর স্বীয় কর্মপদ্ধতি এভাবে উল্লেখ করেছেন-
ﺍﻧﻰ ﺃﺧﺬ ﺑﻜﺘﺎﺏ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﺫﺍ ﻭﺟﺪﺗﻪ ﻭﻣﺎﻟﻢ ﺃﺟﺪﻩ ﻓﻴﻪ ﺃﺧﺬﺕ ﺑﺴﻨﺔ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺍﻷﺛﺎﺭ ﺍﻟﺼﺤﺎﺡ ﻋﻨﻪ ﺍﻟﺘﻰ ﻓﺸﺖ ﻓﻰ ﺃﻳﺪﻯ ﺍﻟﺜﻘﺎﺕ .
অর্থ : আমি কিতাবুল্লায় বিধান পেলে তা সিদ্ধান্ত হিসাবে গ্রহণ করি। তাতে না পেলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাহ এবং তাঁর ঐ সকল সহীহ হাদীস থেকে যা নির্ভরযোগ্য রাবীদের মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। (ছয়মারী, আখবারু আবী হানীফা ওয়া মানাকিবুহু) অতএব এ হিসাবে ইমাম আবু হানীফা (রহ) যত মাসআলার সমাধান দিয়েছেন, সহীহ হাদীস অনুসারেই দিয়েছেন। হাদীস সহীহ হলেই তা আমার মাযহাব বাক্যটির এ মর্ম গ্রহণ করলে মতলববাজদের মতলব পূরণ হয় না।
.
ইবনে আবেদীনের হাশিয়া (১/৩৬)- এর উদ্ধৃতি দিয়ে কথিত আহলে হাদিসরাও প্রচার করে বলে যে, ইমাম আবু হানিফা (রহ) বলেছেন- যখন সহীহ হাদিস পাওয়া যাবে, জেনে রেখো সেটাই আমার মাযহাব।

অপ্রিয় হলেও সত্য যে, কথিত আহলে হাদিসের এ রকম গদবাধা প্রচারণা আখের নিজেদেরই গলার কাঁটায় পরিণত হল।
.
প্রকাশ থাকে যে, ইমাম আবু হানিফা (রহ)-এর উক্ত কথাটি ওরা যে রূপ শব্দ চয়নে প্রচারণা চালাচ্ছে, তা হুবহু কিন্তু সে রকম নয়। বরং উনার বক্তব্য ছিল ঠিক নিম্নরূপ

اذا صح الحديث فهو مذهبي যখন হাদিস সহীহ হয়, (তাহলে বুঝতে হবে) সেটাই আমার মাযহাব। এখন আমার প্রশ্ন হল, লামাযহাবীদের উক্ত প্রচারণার ভেতর পাবে শব্দের আরবী কী? জবাব আছে কি?
বক্তব্যটির সম্বোধিত ব্যক্তি কারা? এ বক্তব্যের সম্বোধিত ব্যক্তিগণ হলেন মুজতাহিদ পর্যায়ের আলেমগণ। কোনো স্বাধারণ ব্যক্তি নন। অতএব যে ব্যক্তি মুজতাহিদ ইমামগণের মত ছেড়ে ঐ সহীহ হাদীস অনুসারে আমল করবেন তাকে অবশ্যই মুজতাহিদ পর্যায়ের আলেম হতে হবে।
.
ইমামে আজম (রহ)-এর বক্তব্যটির সম্বোধিত ব্যক্তিগণ হলেন, হানাফি ফিকহর গবেষণা ক্যাবিনেটর সদস্যবৃন্দ।

যেমন ইমাম যুফার রহঃ (১৫৮ হিঃ), ইমাম মালেক ইবনে মিগওয়াল রহঃ (১৫৯ হিঃ), ইমাম মালিক ইবনে নাজির তাঈ রহঃ (১৬০ হিঃ), ইমাম মিনদাল ইবনে আলী রহঃ (১৬৮ হিঃ), ইমাম নযর ইবনে আব্দুল করীম রহঃ (১৬৯ হিঃ), ইমাম হাম্মদ ইবনে আবু হানিফা রহঃ (১৭০ হিঃ), ইমাম আমর ইবনে মায়মূন রহঃ (১৭১হিঃ),
ইমাম হিব্বান ইবনে আলী রহঃ (১৭২ হিঃ), ইমাম আবু ইসমা রহঃ (১৭৩হিঃ), ইমাম যুহাইর ইবনে মুআবিয়া রহঃ (১৭৩ হিঃ), ইমাম কাসিম ইবনে মাআন রহঃ (১৭৫ হিঃ), ইমাম সায়্যাজ ইবনে বিসতাম রহঃ (১৭৭ হিঃ), ইমাম শরীফ ইবনে আব্দুল্লাহ রহঃ (১৭৮ হিঃ), ইমাম আফিয়া ইবনে ইয়াযিদ রহঃ (১৮০ হিঃ), ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারাক রহঃ (১৮১ হিঃ), ইমাম আবু ইউসুফ রহঃ(১৮২ হিঃ) , ইমাম আবু আসিম নাবিল হামীদ রহঃ (১৮২ হিঃ), ইমাম মুহাম্মদ ইবনে নূর রহঃ (১৮৩ হিঃ), ইমাম হায়সাম ইবনে বশীর রহঃ (১৮৩ হিঃ), ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে যাকারিয়া রহঃ (১৮৪ হিঃ),
ইমাম আসাদ ইবনে ওমর রহঃ (১৮৮ হিঃ), ইমাম ইউসুফ ইবনে খালিদ রহঃ (১৮৯ হিঃ), ইমাম আলী ইবনে মুসাহির রহঃ (১৮৯ হিঃ), ইমাম মুহাম্মদ রহঃ(১৮৯ হিঃ), ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনে ইদ্রীস রহঃ (১৯২ হিঃ), ইমাম ফজল ইবনে মুসা রহঃ (১৯২ হিঃ), ইমাম আলী ইবনে যিরয়ান রহঃ ( ১৯২ হিঃ), ইমাম ফুযাইল ইবনে গিয়াস রহঃ (১৯৪ হিঃ), ইমাম আফস ইবনে গিয়াস রহঃ (১৯৪ হিঃ), ইমাম হিশাম ইবনে ইউসুফ রহঃ (১৯৭ হিঃ), ইমাম শুআইব ইবনে ইসহাক রহঃ (১৯৭ হিঃ), ইমাম অকি ইবনুল জারাহ রহঃ (১৯৮ হিঃ),
ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ রহঃ (১৯৮ হিঃ), ইমাম আবু হাফস ইবনে আঃ রহমান রহঃ (১৯৯ হিঃ), ইমাম মতীবলখী রহঃ (১৯৯ হিঃ), ইমাম খালিদ ইবনে সুলাইমান রহঃ (১৯৯ হিঃ), ইমাম আব্দুল হামিদ রহঃ (২০৩ হিঃ), ইমাম হাসান ইবনে যিয়াদ রহঃ (২০৪ হিঃ), ইমাম হাম্মাদ ইবনে দালিল রহঃ (২১৫ হিঃ), ইমাম মক্কী ইবনে ইবরাহীম রহঃ (২১৫ হিঃ) । উনাদের এক এক জনের মুখস্তই ছিল বুখারীর মত ডজন খানেক হাদিসের কিতাবের সমপরিমান হাদিস।
কাজেই আবারো প্রমাণিত হল আহলে হাদিস নামধারী দ্বিমুখী ভ্রষ্টরা গণমানুষের মনে সন্দেহ সৃষ্টি করার জন্য ইমামদের কথার বিকৃতি সাধনে বড্ড পারঙ্গম !!
সুতরাং হানাফী মুজতাহিদ ও ফকীহগণ যেসব হাদীছ সহীহ মনে করেন সেসব আমাদের কাছেও সহীহ। অন্যান্য মাযহাবীও যার যার মাযহাবের ক্ষেত্রে প্রায় একই নীতি মেনে চলেন। তাছাড়া, তাঁরা পবিত্র কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা, কিয়াস ইত্যাদির আলোকে লাখ লাখ ফতোয়া ও মাসয়ালার যেসব যৌক্তিক সমাধান দিয়েছেন তা আর কারো থেকে পাওয়া যায় না। আর তাই, সিংহভাগ মুসলিম উম্মাহ এ চার মাযহাব বরণ করেছেন।
১৩। রাসূল সঃ এবং তার সাহাবীগনের মাযহাব কি ছিল?
উঃ তাঁর যুগে মাযহাব বা হাদীছের কিতাবের তেমন দরকার ছিলো না। কেননা, তিনি নিজেই সব সমস্যার সমাধান দিতেন। তবে, তাঁর ওফাতের পর, মুজতাহিদ সাহাবীগণের মাযহাব ছিলো যা গায়ের মুজতাহিদ সাহাবীগণ অনুসরণ করতেন।
১৪। উহা কি এখনও প্রচলিত আছে? নাকি বন্ধ হয়ে গেছে? উঃ সেগুলো চার মাযহাবে এসে মিশে গেছে।
১৫। বন্ধ হলে কে বন্ধ করল? উঃ ১৪নং উত্তর দেখুন।
১৬। কেন করল? উঃ ১৪নং উত্তর দেখুন।
১৭। বন্ধ করার অধিকার কে দিল? উঃ ১৪নং উত্তর দেখুন। আপনারা পারলে, চালু করুন।
১৮। আর যদি বন্ধ না হয়ে থাকে, তবে অন্যের নামে মাযহাব সৃষ্টি করার প্রয়োজন কি?
উঃ কোনো সাহাবীর নামে এখন হাদীছের কিতাব নেই বললেই চলে। অথচ চার মাযহাবের ইমাম ও সিহাহ সিত্তাহর সংকলক এবং অন্যান্যের নামে হাদীছের কিতাব রয়েছে। কেন? আর ১২নং উত্তর দেখুন।
১৯। চার মাযহাব মান্য করা ফরয হলে যারা চার মাযহাব মানেন না অথবা চার মাযহাব সৃষ্টি হওয়ার আগে যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের উপায় কি?
উঃ ৩নং উত্তর দেখুন। সত্যিই যারা (মুজতাহিদ নন) মাযহাব না মেনে মারা গেছেন তাদের নিয়ে আমরাও চিন্তিত! কিন্তু কেউ অপরাধ করলে, আমাদের আফসোস করা ছাড়া আর কীবা করার আছে বলুন? আর মাযহাব সৃষ্টি হওয়ার আগে মানে হচ্ছে, নবীজীর যুগে। এ ব্যাপারে ১৩নং উত্তর দেখুন।
২০। (নাউযুবিল্লাহ) তারা কি দোযখী হবেন? উঃ মুসলিম উম্মাহর মাঝে বিশৃংখলা সৃষ্টি বা ফেতনাবাজির অপরাধে মাযহাব অমান্যকারীদের দীর্ঘদিন ধরে দোযখে থাকার কথা। এ ব্যাপারে বিস্তারিতভাবে জানতে আল্লাহুতালার সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
২১। ইমাম চার জন কোন মাযহাব মানতেন?
উঃ চার ইমাম তো মুজতাহিদ। আর আগেই বলেছি যে, মুজতাহিদদের জন্যে মাযহাব মানা ওয়াজিব নয়। তবে যখন তাঁরা মুজতাহিদ হন নি তখন তাঁরা তাদের উস্তাদগণের মতামত অনুসরণ করতেন।
২২। তাদের পিতা-মাতা, ওস্তাদ মণ্ডলি ও পূর্বপুরুষগণ কার মাযহাব মেনে চলতেন? উঃ তাঁদের মা-বাবার বিস্তারিত জীবনী জানা যায় না। তবে, তাঁদের অধিকাংশ উস্তাদই মুজতাহিদ ছিলেন।
২৩। সেই মাযহাব কি এখন মানা যায় না? উঃ চার মাযহাব ছাড়া বাকিগুলো বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তবে, উদ্ধার করতে পারলে, মানতে পারবেন বৈকি।
২৪। ঈমানদারীতে ও কুরআন হাদীসের বিদ্যার চার ইমাম শ্রেষ্ঠ ছিলের না চার খলীফা? উঃ অবশ্যই চার খলীফা।
২৫। যদি খলীফাগণ শ্রেষ্ঠ হয়ে থাকেন তবে তাদের নামে মাযহাব হল না কেন?
উঃ প্রথমত, আমারও প্রশ্ন খলীফাগণ শ্রেষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও তাঁদের নামে হাদীছের কিতাব না হয়ে বুখারী-মুসলিমদের নামে হলো কেন? আর আপনারাও সেগুলোর তাকলীদ বা অন্ধ অনুসরণ করেন কেন? অর্থাৎ বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ ইত্যাদি আছে। কিন্তু আবূ বকর শরীফ, ওমর শরীফ, উছমান শরীফ প্রভৃতি কৈ?
দ্বিতীয়ত, তাঁদের সকল ফতোয়া সংরক্ষিত হয় নি যেভাবে তাঁদের বর্ণিত সকল হাদীছও সংরক্ষিত হয় নি।
২৬। তারা কি ঈমামগণ অপেক্ষা কম জ্ঞানী বা যোগ্য ছিলেন? উঃ না।
২৭। নবীর নামে কালেমা পড়বে, ইমামদের নামে মাযহাব মানবে আর পীর-ফকিরদের তরিকা মত চলবে এই নির্দেশ কুরআন হাদীসের কোথায় আছে?
উঃ প্রথমত, সিহাহ সিত্তাহ মানার কথা পবিত্র কুরআন ও হাদীছ শরীফের কোথায় আছে?
দ্বিতীয়ত, নবীজী সাহেবে কুরআন হতে পারলে সাহেবে কালেমা হতে পারবেন না কেন? যে তাঁর নামে কালেমা পড়তে অস্বীকার করবে সে কাফের! কেননা, ঈমানের মূল হচ্ছে, তাওহীদ ও রিসালাত। তাঁর নামে কলেমা পড়তে অস্বীকার করা মানে, রিসালাতকেই অস্বীকার করা।
তৃতীয়ত, ইমামগণের মাযহাব ও কামেল পীরদের তরীকা মানার কথা আল-কুরআনে অনেক রয়েছে।
যেমন- (ক) আমাদেরকে সোজা পথে পরিচালিত করো তথা যাদেরকে তুমি নিয়ামত দান করেছো তাদের পথে। (১:৫ ও ৬)।
(খ) যেদিন আমি প্রত্যেক গোষ্ঠীকে তাদের ইমামসহ ডাকবো। (১৭:৭১) ।
(গ) আর যে আমার পানে দিক- নির্দেশনা দেয় তার পদাঙ্ক অনুসরণ করো। (৩১:১৫) ।
(ঘ) সুতরাং তোমাদের জানা না থাকলে যারা জানে তাদেরকে জিজ্ঞেস করো (১৬:৪৩)।
(ঙ) যারা ঈমান এনেছো তাদেরকে বলছি! তোমরা আল্লাহর তাবেদারী করো এবং রাসূল ও তোমাদের হুকুমদাতাদের তাবেদারী করো। তবে কোন ব্যাপারে তোমাদের মাঝে মতবিরোধ হলে তোমরা যদি আল্লাহ্ ও আখেরাতে বিশ্বাসী হও তাহলে তা (মতবিরোধের বিষয়টি) আল্লাহ ও রাসূলের সমীপে পেশ করো। ওটাই কল্যাণকর এবং এর ফলাফল খুবই ফলপ্রসূ। (৪:৫৯)।
(চ) আর তাদের কাছে শান্তি বা ভয়ের কোন খবর এলেই তারা তা বলে বেড়াতো; বরং তারা তা রাসূল কিংবা তাদের হুকুমদাতাদের গোচরে আনলে তারা তাদের গবেষকদের কাছ থেকে তার আসল ব্যাপারটা জানতে পারতো। তদুপরি, তোমাদের উপরে আল্লাহ্র ফযল ও রহমত না থাকলে অল্প কয়েকজন ছাড়া তোমরা (সবাই) শয়তানের পদাঙ্কই অনুসরণ করতে (৪:৮৩)।
(ছ) যারা তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চায় না এবং যারা হেদায়েত পেয়েছে তোমরা তাদেরকে অনুসরণ করো। (৩৬:২১)।
২৮। আল্লাহর নবীর কি মাযহাব বা তরীকা নাই? উঃ মাযহাব ও তরীকা এমন জিনিস যার বিকল্প রয়েছে। যেমন- হানাফী, মালিকী, শাফিয়ী ও হাম্বলী এগুলো একটি আরেকটির বিকল্প। তেমনি, কাদিরিয়া, চিশতিয়া, সোহরাওয়ার্দিয়া, নকশবন্দিয়া ইত্যাদিও। তাই, নবীজীর নামে মাযহাব ও তরীকা হতে পারে না, বরং তাঁর নামে দ্বীন, শরীয়ত, উম্মত ইত্যাদি হতে পারে যেগুলোর কোনো বিকল্প নেই। যেমন- দ্বীনে মুহাম্মাদী, শরীয়তে মুহাম্মাদী, উম্মতে মুহাম্মাদী।
২৯। সেই মাযহাব বা তরীকা কি যথেষ্ট নয়? উঃ ২৮নং উত্তর দেখুন।
৩০। নবীর প্রতি ইসলাম কি পরিপূর্ণ করা হয় নাই? উঃ অবশ্যই করা হয়েছে। তারপরেও আপনারা সিহাহ সিত্তাহর এবং আমরা মাযহাবের অনুসরণ করি।
৩১। রাসুলুল্লা (সঃ) কি কামেল নবী নন? উঃ নিঃসন্দেহে।
৩২। ইসলাম কি মুকাম্মাল ধর্ম নয়? উঃ নিঃসন্দেহে। কিন্তু তাই বলে, ইসলাম মাযহাব বা সিহাহ সিত্তাহবর্জিত নয়।
৩৩। ইসলাম পূর্ন পরিনত এবং নবী মুহাম্মাদ (সঃ) কামেল হয়ে থাকলে অন্যের মত ও পথ মান্য করার অবকাশ কোথায়? উঃ আল-কুরআনই তা বলেছে। ২৭নং উত্তর দেখুন। তাছাড়া, আপনারা হাদীছ শরীফ মানার ব্যাপারে কেন ইমাম বুখারী, মুসলিম প্রমুখের কথা বা দাবির তাকলীদ করেন? তাঁরাতো কেউই তাবে তাবেঈনও ছিলেন না?
৩৪। যারা পূর্ণ পরিনত ইসলাম এবং কামেল নবীকে অসুম্পূর্ণ প্রমান করে অন্যের দ্বারা তা পূর্ণ করার স্বপ্ন দেখেছে, তারা কি কুরআন ও হাদীসের বিরোধিতা করছে না? উঃ প্রথমত, নবীজী কামেল নবী এবং তিনি কামেল ধর্ম ইসলাম রেখে যাওয়ার পরেও আপনারা অনেক পরে সৃষ্ট সিহাহ সিত্তাহর অনুসরণ করে কি নবীজী ও ইসলামের কামালিয়তকে চ্যালেঞ্জ করছেন না?
দ্বিতীয়ত, যেহেতু ইসলাম ৩টি আনুগত্যের (আল্লাহুতালা, নবীজী ও উলুল আমর) কথা বলেছে সেহেতু মাযহাব ও তরীকা অনুসরণ করা মানে, পরিপূর্ণ ইসলামেরই অনুসরণ করা। নইলে, আপনারা সিহাহ সিত্তাহ মানেন কেন? এর গ্রহণযোগ্যতার দলিল কী?
৩৫। যে দলটি মুক্তি পাবে বলে নবী (সঃ) সুস্পষ্টভাবে ঘোষনা করেছেন সেই নাযাত প্রাপ্ত দল চার মাযহাবের কোনটি? উত্তর: ৪টি মাযহাবের পথই নাজাতের পথ। কেননা, মাযহাবের ফকীহগণ একে-অপরের ঈমানকে চ্যালেঞ্জ করেন নি। এ চার মাযহাবের অনুসারীরাই আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত। মোট কথা, নদী যেমন সাগরে গিয়ে মিশেছে চার মাযহাবও তেমনি সিরাতুল মুস্তাকীমে গিয়ে মিশেছে।
৩৬। বেহেস্তের পথ বা সিরাতুল মুস্তাকীম বুঝাবার জন্য নবী (সঃ) একটি সরল রেখা অঙ্কন করে বললেন, ইহা আল্লাহর পথ। তোমরা ইহার অনুসরণ কর। তৎপর ঐ সরল রেখাটির ডানে ও বামে কতকগুলি রেখা আঁকলেন এবং বললেন, এই পথ গুলির প্রত্যেকটির একটি করে শয়তান আছে। তারা নিজ নিজ পথের দিকে ডাকছে। তোমরা ঐ পথ গুলির অনুসরণ করিও না। যদি কর, তা হলে তারা তোমাদিগকে সরল পথ হতে বিভ্রান্ত করে ফেলবে (মিশকাত)। এই হাদিস অনুযায়ী রসুলের (সঃ) পথ সিরাতুল মুস্তাকীম ব্যতীত অন্য পথগুলি কি শয়তানের পথ নয়? উঃ প্রথমত, ৩৫নং উত্তর দেখুন।
দ্বিতীয়ত, চার মাযহাবের ইমাম ও সত্যিকারের অনুসারীগণ ঐ সরল পথে রয়েছেন যেভাবে হযরত আলী ও মুয়াবিয়া (রাদ্বিআল্লাহুতালা আনহুমা) উভয়ই সরল পথে রয়েছেন। দেখুন, তাঁরা একে অপরের সঙ্গে যুদ্ধ করে ৭০,০০০ মুসলিম মেরেছেন। অথচ এক মাযহাবীদের সঙ্গে অন্য মাযহাবীদের কখনো কি এমন রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়েছে? তারপরেও তাঁরা দুজনই কিন্তু সিরাতুল মুস্তাকীমে ছিলেন ও আছেন। সিহাহ সিত্তাহে তাঁদের দুজন থেকেই বর্ণিত অনেক হাদীছ শরীফ গ্রহণ করা হয়েছে, তাই না?
তৃতীয়ত, আসলে, ঐ দ্বিমুখী মাযহাবীগুলোই হচ্ছে, নাজির হোসেন, সিদ্দীক হাসান খান ভূপালী, স্যার সৈয়দ আহমদ, আব্দুল্লাহ চকড়লভী, গোলাম আহমেদ পারভেজ, নাসিরুদ্দীন আল- আলবানী, ইবনে বাজ, জাকির নায়েক প্রমুখ ।
৩৭। কালেমা পড়া হয় নবী (সঃ)-এর নামে, কবরে রাখা হয় নবীর (সঃ) তরীকায়, কবরে জিজ্ঞাসা করা হবে নবীর (সঃ) কথা, হাশর ময়দানেও নবীর (সঃ) শাফায়াত করবেন- সেই মহা নবী (সঃ) এর তরীকা বাদ দিয়ে অন্যের তরিকা মানলে নাজাত পাওয়া যাবে কি?
উত্তর: প্রথমত, আগেই বলেছি যে, নবীজীর নামে তরীকা হতে পারে না; বরং মাযহাব অবলম্বনকারীরা যেসব তরীকা মানে সেসবই তাঁর তরীকা। কারো নাম ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু সে নবীজীর উম্মত। তেমনি, কাদিরিয়া, চিশতিয়া, সোহরাওর্দীয়া, নকশবন্দিয়া ইত্যাদির নাম ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু এসবই তাঁর তরীকা তথা সিরাতুল মুস্তাকীম নামক নাজাতের সাগরের এক একটি দরিয়া। আর ঐ পীর সাবরা উলুল আমরের অন্তর্গত।
দ্বিতীয়ত, আপনারাও সেই নবীজী হাদীছ শরীফ বাদ দিয়ে সিহাহ সিত্তাহর হাদীছ মানেন কেন? এসবতো কোনো তাবে তাবেঈনও সত্যায়ন করেন নি?
৩৮। বাংলাদেশে মাযহাব ও পীরের অন্ত নাই; যত পীর তত তরীকা। পীর সাহেবরা আজকাল কেবলা বানিয়ে নিয়েছে। মানুষ কি মানুষের কেবলা হতে পারে?
উঃ অবশ্যই হতে পারে। এ ব্যাপারে ৪১নং উত্তরে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
৩৯। তারা তাদের আস্তানাগুলিকে দায়রা শরীফ, খানকা শরীফ, মাযার শরীফ, ওরশ শরীফ, উরসেকুল প্রভৃতি নাম দিয়ে মুসলমানদের তীর্থস্থান মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফের অবমাননার অপচেষ্টায় মেতে উঠেছে।
উঃ মিথ্যে কথা। কোনো হাক্কানী পীর বা মুরীদ কখনো মক্কা ও মদীনা শরীফাঈন অবমাননা করতে পারেন না। তবে, প্রত্যেক ধর্মে বা মতাদর্শে ৩ কিসিমের লোক থাকে।
যথা- ক) নিষ্ঠাবান, খ) উদার ও গ) ভন্ড। কিন্ত খ ও গ কিসিমের লোকদের দিয়ে তাদের ধর্ম বা মতাদর্শের মূল্যায়ন করাটা আহাম্মকি ছাড়া আর কিছুই নয়। কেননা, কেউ কোনো ধর্ম বা মতাদর্শ না মানলে সেটা তার ধর্ম বা মতাদর্শের দোষ নয়।
৪০। এগুলি কি দ্বীন ও শরিয়তের নামে ভণ্ডামি নয়? উঃ ৩৯নং প্রশ্নের উত্তর দেখুন।
৪১। মুসলমানদের আল্লাহ এক, নবী এক, কুরআন এক, কেবলা এক এবং একই তাদের ধর্মকর্ম রীতি-নীতি। সুতরাং তাদের মুক্তি ও কল্যাণের পথ হচ্ছে মাত্র একটিই। যা ইসলাম, সিরাতে মুস্তাকীম বা তরিকায়ে মুহাম্মাদী।
.
উত্তর:

প্রথমত, আল্লাহুতালা নিঃসন্দেহে এক ও অদ্বিতীয়। কিন্তু নবী কি এক? (নাঊজুবিল্লাহি মিন জালিক) যারা বলবে নবী এক তারা কাফের। কেননা, নবীগণের (আলাইহিমুস সলাতু ওয়াস সালাম) সংখ্যা এক লাখ চব্বিশ হাজার বা দু লাখ চব্বিশ হাজার। আপনারা যে ভন্ড, পথহারা এ কথায়ই তার প্রমাণ। কেননা, আপনারা মাত্র একজন নবী ছাড়া বাকিদের নবুয়ত অস্বীকার করেছেন!
দ্বিতীয়ত, আল-কুরআন এক বটে। কিন্তু হাদীছের কিতাবতো শত শত! অথচ এ পরম সত্যটি আপনারা হঠকারিতা করে চেপে গেছেন। কাজেই, হাদীছের কিতাব শত শত হতে পারলে, মাযহাব ৪টি হলে দোষ কী?
তৃতীয়ত, কেবলা মানে, অভিমুখ। আক্ষরিক অর্থে সকল ইবাদতের কেবলা একটি বা কাবা শরীফ নয়। নবীজী ফরজ নামাজ আদায় করে মুক্তাদিদের দিকে ফিরে দোয়া করতেন। সুতরাং এখানে ইমামের দোয়ার কিবলা হচ্ছে, মুক্তাদি। তেমনি, খতীব মুসল্লীদের দিকে ফিরে খুতবা দেন এবং বক্তা বা ওয়ায়েজ শ্রোতাদের দিকে ফিরে বক্তব্য রাখেন। সুতরাং এখানে তাঁদের কেবলা মুসল্লীগণ এবং শ্রোতামন্ডলী। ক্লাশে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মুখোমুখি থাকেন। এখানে একে অপরের কেবলা। তেমনি, মুরীদানের কেবলা তাঁদের পীর সাব। সুতরাং কেবলা একটি নয়, বরং ক্ষেত্র বিশেষে ভিন্ন ভিন্ন হয়।
চতুর্থত, আল-কুরআনের ব্যাখ্যা ও হাদীছ শরীফের ভিন্নতার কারণেই ফিকাহের শাখা-প্রশাখায় ভিন্নতা এসেছে। এ সহজ কথাটা যারা বোঝে না তারা প্রথম স্তরের গাধা।
পঞ্চমত, মাযহাব সম্পর্কে উপরের প্রশ্নগুলোর উত্তরেরই খোলাখুলি আলোচনা করেছি। তাই, এখানে আর চর্বিত চর্বণ করছি না। ইমাম বুখারী, ইমাম মুসলিম প্রমুখ তাঁদের কিতাবে কিছু কথা লিখে দাবি করেছেন যে, এগুলো নবীজীর (আলাইহিস সলাতু ওয়াস সালাম) বাণী! কিন্তু এর প্রমাণ কী?
তথাকথিত আহলে হাদীছ সম্প্রদায় বা লা মাযহাবীরা কোনো প্রমাণ ছাড়াই ইমাম বুখারী-মুসলিমদের অন্ধ অনুসরণ করে। অথচ তাঁদের ব্যাপারে আল্লাহুতালা, নবীজী, কোনো সাহাবী, তাবেঈ, এমনকি তাবে তাবেঈন পর্যন্ত কোনো ভবিষ্যদ্বাণী করেন নি!
তাছাড়া, মারাত্মক কথা হচ্ছে, সিহাহ সিত্তাহ ফেতনার যুগে সংকলিত হয়েছে। অথচ ৪ মাযহাবের জন্ম হয়েছে প্রসিদ্ধ ৩ যুগে। আর তাই, মাযহাবের মুজতাহিদগণ যেসব হাদীছ গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান করেছেন সেসব যাঁর যাঁর মাযহাবীদের কাছেও গ্রহণযোগ্য বা প্রত্যাখ্যাত; সিহাহ সিত্তাহর সংকলকগণ যাই বলে থাকুন না কেন।
সাফ কথা, মাযহাবের ইমামগণের কাছে সিহাহ সিত্তাহর সংকলকগণ জাহাজের মোকাবেলায় ডিঙির মতো। আর মাযহাব ৪০০ হিজরী হয়েছে এটা ডাহা মিথ্যে কথা। আমি উপরে দেখিয়েছি যে, ইমামে আযম নিজে নিজের মাযহাব দাবি করেছেন। ষষ্ঠত, সিহাহ সিত্তাহ ফেতনা যুগে সংকলিত হয়েছে। আর তাই, মাযহাব বাদ দিয়ে সিহাহ সিত্তাহর অনুসরণ করা মানে, ফেতনারই অনুসরণ করা।
আপনি (প্রশ্নকারী) চার মাযহাবের ইমামগণের জন্ম ও ওফাতের সন বলেছেন। অথচ সিহাহ সিত্তাহর সংকলকদেরটা বলেছেননি! কেন? থলের বিড়াল বের হয়ে পড়বে বলে? তাছাড়া, আপনি ইমাম মালিকের জন্ম তারিখ ভুল দিয়েছেন। সঠিক হচ্ছে, ৯৩ হিজরী। সিহাহ সিত্তাহর সংকলকদের জন্ম চার মাযহাবের ইমামগণের অনেক পরে।
.
তাঁদের জীবনকাল হচ্ছে, ইমাম বুখারী (১৯৪-২৫৬ হিজরী), ইমাম মুসলিম (২০৪-২৪২ হিঃ), ইমাম নাসায়ী (২১৫-৩০৩ হিজরী), ইমাম তিরমিযী (২০৯-২৭১ হিঃ), ইমাম আবূ দাউদ (২০২-২৭৫ হিঃ) ও ইমাম ইবনে মাজা (২০৯-২৭৩ হিঃ)।
.
সুতরাং যদি বলা হয়: চার ইমামের আগে ইসলাম ও মুসলমান ছিলো। তখন তাদের করো মত ও পথের দরকার হয় নি। এখনো দরকার নাই। তখনো মুসলমানদের কাছে কুরআন- হাদীস ছিলো। এখনো আছে। কাজেই, কুরআন ও সহীহ হাদীসই যথেষ্ট। তাহলে, আমরাও বলতে পারি যে, সিহাহ সিত্তাহ সংকলনের আগেও কুরআন-হাদীছ, ইসলাম ও মুসলমান ছিলো। তখন সিহাহ সিত্তাহর দরকার হয় নি; এখনো দরকার নেই। কাজেই, তখনকার হাদীছের কিতাবগুলো খুঁজে বের করেন। নইলে, মাযহাব ছাড়া উপায় নেই। কেননা, আবারো বলছি, সিহাহ সিত্তাহ বা আলাদা হাদীছগুলো মাযহাবের পরে ফেতনার যুগে সৃষ্ট হয়েছে।

আশা করি, আপনি আপনার উস্তাদসহ আপনার জ্ঞাতি ভাইদের নিয়ে আমাদের যুক্তিগুলো খন্ডন করবেন। ধন্যবাদ ।
.
(বিশেষ দ্রষ্টব্য : আমরা সিহাহ সিত্তা মেনেই চার ইমামের ইজতিহাদ স্বীকার করি। তবে অনুসরণ করি ইমামে আজম হযরত ইমাম আবু হানিফা (রহ)-এর গবেষণালব্ধ মাযহাব বা রায়। কেননা, মুজতাহিদদের ইজতিহাদ বুখারির হাদিস দ্বারাও অনুমোদিত। যেমন, আমরা সব নবী রাসূলকে সঠিক বলে বিশ্বাস করি, কিন্তু অনুসরণ করি শেষনবী হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর প্রচারিত সর্বশেষ দ্বীন তথা ইসলাম।
.
উপরের দীর্ঘ আলোচনায়, ভ্রষ্ট আহলে হাদিসদের কতেক অন্তঃসারশূন্য প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে উদাহরণ হিসেবে বেশ কিছু প্রশ্নোত্তরে সিহাহ সিত্তাকে চ্যালেঞ্জ করতে হল। এর মানে এই নয় যে, সিহাহ সিত্তাকে অবজ্ঞা করলাম। আমরা অবশ্যই সিহাহ সিত্তাকে মানি। শুধু তা নয়, সহিহ হাদিস যেখানেই পাওয়া যাবে আমরা তা বিনা বাক্যে মেনে থাকি।)
Powered by Blogger.