Header Ads

Header ADS

আজ মহিমাময় রজনী পবিত্র ‘শবে বরাত’ যেভাবে পালন করা উচিত এই রাতটি


আল্লাহ তায়ালা মানবজাতিকে পৃথিবীতে প্রেরণের শত বছর আগে তাদের রিজিক নির্ধারণ করে রাখলেও প্রতি বছর প্রতিটি মানুষের জীবনে যা ঘটবেতা নির্ধারণ করা হয় পবিত্র শবে বরাতে। এ রাতে আল্লাহর রহমতের ফল্গুধারা উন্মুক্ত থাকে বান্দাহর জন্য। তাঁর অবারিত করুণা পুণ্যবান মানুষের ওপর সিঞ্চিত হয়। এ রাতকে হাদিস শরিফে লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান বা মধ্য শাবানের রজনী বলা হয়েছে।


সাহাবি-তাবিয়ীগণের যুগের অনেক পরে এ রাতকে লাইলাতুল বারাআত বা বিমুক্তির রজনী বলে আখ্যায়িত করার প্রচলন শুরু হয়। মুহাদ্দিস ও ঐতিহাসিকগণ উল্লেখ করেছেন যে৪৪৮ হি. সনে বাইতুল মুকাদ্দাসে প্রথম এ রাতে প্রচলিত পদ্ধতিতে সালাত আদায়ের প্রচলন শুরু হয়। মিরকাতুল মাফাতীহ ৩/৩৮৮ হুজুর (স) রমজানের রোজা ব্যতীত শাবান মাসে যতো অধিক রোজা রাখতেনঅন্য মাসে ততো অধিক রোজা রাখতেন না।
এ জন্যেই হুজুর (স) শাবান মাসকে নিজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছেন। হযরত আসমা ইবনে জায়েদ (রা) সূত্রে বর্ণিত-রাসূল ইরশাদ করেছেন : শাবান আমার মাসআর রমজান আল্লাহর মাস। গাউসুল আযম হযরত আবদুল কাদের জিলানী (র) তার গুনিয়াতুত্বালেবীন কিতাবে লিখেছেনদুনিয়ার ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতর নামে মুসলমানদের জন্যে যেমন দুটি ঈদ রয়েছেতেমনি ঊর্ধ্বাকাশসমূহে ফেরেশতাগণের জন্যেও দুটি ঈদ রজনী রয়েছে। এর একটি হচ্ছে শবে কদরঅপরটি শবে বরাত।
মুমিন বান্দাগণের জন্যে ঈদ-উত্সব দিনে থাকে। আর ফেরেশতাগণের ঈদ-উত্সব নির্ধারণ করা হয়েছে রাতে। কেননা মানুষ নিদ্রা যায় পক্ষান্তরে ফেরেশতাদের কোনো নিদ্রা নেই। তাই এ রজনীতে ব্যাপক পরিমাণ নফল আদায়ের মধ্যে অনেক ফজিলত নিহিত রয়েছে।
শবে বরাতে করণীয়:
হাদিস শরীফে শবে বরাতের নিম্নোক্ত পালনীয় আমল উল্লেখ রয়েছে :
১. কোনো বিশেষ ব্যবস্থা বাআয়োজন না করে সাধারণভাবে এ রাতে কবরস্থানে যাওয়া এবং মৃত ব্যক্তিদের জন্যে দোয়া করাদরুদ-ইস্তেগফার পাঠ করে দোয়া করা।
২. এ রাতে জাগ্রত থেকে আল্লাহর ইবাদত তথা কুরআন তেলাওয়াত করাঅধিক হারে দরুদ পাঠ করা এবং নফল নামাজ পড়া। তবে নামাজের জন্য কোনো বাধ্যবাধকতা নেইবরং সামর্থ্যানুসারে জামাত ব্যতীত অনির্দিষ্টভাবে নামাজ পড়া এবং নিজের জন্য ও সকল মুসলমানের জন্য দোয়া করা।
৩. শবে বরাতের পরদিন অর্থাত্ ১৫ শাবান নফল রোজা রাখা। রাসূলে আকরাম (স) ইরশাদ করেছেন : যখন তোমাদের সামনে শাবান মাসের পঞ্চদশ রাত শবে বরাত উপস্থিত হয়তখন তোমরা সেই রাতে নামাজ পড়ো আর দিনের বেলায় রোজা রাখো। তবে যে কোনো নফল রোজা রাখার ক্ষেত্রে মূলনীতি হলোকমপক্ষে একসাথে দুটি রোজা রাখা উচিত। তাই পনের শাবানের সঙ্গে চৌদ্দ অথবা ষোল শাবান যোগ করে রোজা রাখাটাই অতি উত্তম।
শবে বরাতে বর্জনীয়:
বরকতময় এ রজনীতে তওবা-ইস্তেগফার ও ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে নিমগ্ন থাকাই মুমিনের কর্তব্য। অথচ কিছুসংখ্যক লোক এ রাতে এমন কিছু কাজে লিপ্ত হয়ে পড়েযেগুলো ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যেমন : পটকাবাজিতারাবাজিআতশবাজিঅতিরিক্ত আলোকসজ্জাপোলাও-বিরানি ও হালুয়া-রুটি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়া ইত্যাদি। এগুলো নিছক কুসংস্কার বৈ কিছু নয়।
মুহাদ্দিসে কেরাম বলেছেনআতশবাজি একটি সামাজিক কুসংস্কারঅপচয় ও অপরাধের কাজ। ইয়াজুজ-মাজুজ আল্লাহর দিকে তীর নিক্ষেপ করবে তাকে ঘায়েল করার জন্য। আতশবাজির মাধ্যমে অনেকাংশে সেটারই অনুকরণ হয় বলে এটি শরিয়তে নিষিদ্ধ। অন্যদিকে আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ এ রজনীতে দুনিয়াবাসীর প্রতি রহমত নাজিল করতে প্রথম আকাশে অবতরণ করেন। বান্দাদেরকে তার রহমত ও বরকত লাভ করার জন্য অবিরাম আহ্বান জানাতে থাকেনঊর্ধ্বমুখী আতশবাজির দ্বারা যেন প্রকারান্তরে তত্প্রতিই বিদ্রূপ প্রকাশ হয়ে পড়ে। শবে বরাতে একটি উল্লেখযোগ্য কুসংস্কার হলোহালুয়া-রুটি না হলে যেন শবে বরাত পালন অসম্পূর্ণই থেকে যায়। মূলত শরিয়তে এর কোনো নিয়ম নেই। কারণএদিন সূর্যাস্ত থেকেই আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর নিকটবর্তী আকাশে এসে বান্দাকে ডাকতে থাকেন।
তাই তার ডাকে সাড়া না দিয়ে এসব ভোজনে লিপ্ত থাকা একদিকে যেমন ইবাদতে বিঘ্ন ঘটায়অন্যদিকে উদরপূর্তির দরুন এ মুক্তির রজনীতে ইবাদতে আলস্য চলে আসে। রাত্রি জাগরণের মাধ্যমে অধিক পরিমাণ ইবাদত-বন্দেগী করার ইচ্ছা করলে হালকা-পাতলা খানা খাওয়া ভালো। অনেক স্থানে এ রাতে গরু-ছাগল-মুরগী জবাইয়ের ধুম লেগে যায়। এ সবই সুন্নাত পরিপন্থী। অনেক স্থানে দেখা যায়বরাত রজনীতে মুসল্লিদেরকে একত্রিত করে রাতব্যাপী ওয়াজ-নসিহতের আয়োজন করা হয়।
যেহেতু এ রাতে নফল নামাজকুরআন তেলাওয়াতজিকির-আজকারদরুদ পাঠকবর জিয়ারতের মতো বিভিন্ন ইবাদত করতে নবী করিম (স) হতে ইঙ্গিত এসেছেতাই অন্যান্য ইবাদত ব্যতীত শুধু ওয়াজ-নসিহত করে জাগরণ করা মাকরূহ হবে। তবে রাতের শুরুতে ইবাদতের নিয়ম-কানুন জানানোর উদ্দেশ্যে এ রাতের গুরুত্ব অনুধাবনের জন্যে কিছু সময় আলোচনা করা যেতে পারে। মুক্তির বারতা নিয়ে আগত পবিত্র শবে বরাতে প্রতিটি মুসলমানের উচিত এ রাতের যাবতীয় ফজিলত অর্জনের জন্য প্রয়াসী হওয়া।
এ জন্যে পূর্বদিনেই নির্দিষ্ট পরিমাণ ঘুমিয়ে নেয়া প্রয়োজন। যাতে রাতের বেলা ঘুম আমাদেরকে কাহিল করতে না পারে। কারণকোন অংশে আল্লাহর রহমতের দৃষ্টি বান্দার প্রতি নিবদ্ধ হয়তা-তো হলফ করে বলা যায় না। খোদ নবী করীম (স.) আল্লাহর দরবারে আগ থেকেই দোয়া করতেন এ বলে হে আল্লাহ! আমাকে রজব ও শাবান মাসের বরকত দাও এবং রমজান পর্যন্ত পৌঁছাও। এ হাদিসের দ্বারা এ রাতের গুরুত্ব সহজেই অনুধাবন করা যায়।

শবে বরাত ও এর শরীয়ত ভিত্তিক প্রমাণ:

১৪ই শাবান দিবাগত রাতটি হচ্ছে পবিত্র শবে বরাত বা বরাতের রাত্র।কিন্তু অনেকে বলে থাকে কুরআন-হাদীছের কোথাও শবে বরাত শব্দ নেই। শবে বরাত বিরোধীদের এরূপ জিহালতপূর্ণ বক্তব্যের জবাবে বলতে হয় যেশবে বরাত শব্দ দুটি যেরূপ কুরআন ও হাদীছ শরীফের কোথাও নেই তদ্রূপ নামাযরোযা খোদা ফেরেশতাপীর ইত্যাদি শব্দ কুরআন ও হাদীছ শরীফের কোথাও নেই। এখন শবে বরাত বিরোধী লোকেরা কি নামাযরোযা ইত্যাদি শব্দ কুরআন ও হাদীছ শরীফে না থাকার কারনে ছেড়ে দিবে?
মূলত শবে বরাতনামাযরোযা খোদা ,ফেরেশতা পীর ইত্যাদি ফার্সী ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত। ফার্সী শব অর্থ রাত্রি এবং বরাত অর্থ ভাগ্য বা মুক্তি। সুতরাং শবে বরাত মানে হল ভাগ্য রজনী বা মুক্তির রাত। মূলতঃ শবে বরাত এবং এর ফযীলত কুরআন শরীফে আয়াত শরীফ এবং অসংখ্য হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। কুরআন শরীফে শবে বরাতকে লাইলাতুম মুবারাকাহ বা বরকতময় রাত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আর হাদীস শরীফে শবে বরাতকে লাইলাতুন নিছফি মিন শাবান বা শাবান মাসের মধ্য রাত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন-

وَالْكِتَابِ الْمُبِينِ إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُّبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنذِرِينَ فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ-

 أَمْرًا مِّنْ عِندِنَا إِنَّا كُنَّا مُرْسِلِينَ

অর্থঃ শপথ প্রকাশ্য কিতাবের! নিশ্চয়ই আমি বরকতময় রজনীতে কুরআন নাযিল করেছি। নিশ্চয়ই আমিই সতর্ককারী। আমারই নির্দেশক্রমে উক্ত রাত্রিতে প্রতিটি প্রজ্ঞাময় বিষয়গুলো ফায়সালা হয়। আর নিশ্চয়ই আমিই প্রেরণকারী।
(সূরা দুখানঃ ২-৫)

কেউ কেউ বলে থাকে যেসূরা দুখানের উল্লেখিত আয়াত শরীফ দ্বারা শবে ক্বদর-কে বুঝানো হয়েছে। কেননা উক্ত আয়াত শরীফে সুস্পষ্টই উল্লেখ আছে যেনিশ্চয়ই আমি বরকতময় রজনীতে কুরআন নাযিল করেছি……..। আর কুরআন শরীফ যে ক্বদরের রাতে নাযিল করা হয়েছে তা সূরা ক্বদরেও উল্লেখ আছে ।

এ প্রসঙ্গে মুফাসসির কুল শিরোমণি রঈসুল মুফাসসিরীন বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু স্বীয় তাফসীরে উল্লেখ করেন,
 মহান আল্লাহ পাক লাইলাতুম মুবারাকাহ বলতে শাবান মাসের মধ্য রাত বা শবে বরাতকে বুঝিয়েছেন। আল্লাহ পাক এ রাতে প্রজ্ঞাময় বিষয়গুলোর ফায়সালা করে থাকেন।

(ছফওয়াতুত তাফাসীরতাফসীরে খাযীন ৪র্থ খন্ডঃ ১১২ পৃষ্ঠাতাফসীরে ইবনে আব্বাস,তাফসীরে মাযহারী ৮ম খন্ডঃ ৩৬৮ পৃষ্ঠাতাফসীরে মাযহারী ১০ম খন্ডতাফসীরে ইবনে কাছীরতাফসীরে খাযিনবাগবীকুরতুবীকবীররুহুল বয়ানআবী সাউদবাইযাবীদূররে মানছূরজালালাইনকামলালাইনতাবারীলুবাবনাযমুদ দুরারমাদারিক)

লাইলাতুম মুবারাকাহ দ্বারা শবে বরাতকে বুঝানো হয়েছে তার যথার্থ প্রমাণ সূরা দুখানের ৪ নম্বর আয়াত শরীফ فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ। এই আয়াত শরীফের يُفْرَقُ শব্দের অর্থ ফায়সালা করা।প্রায় সমস্ত তাফসীরে সকল মুফাসসিরীনে কিরামগণ يُفْرَقُ (ইয়ুফরাকু) শব্দের তাফসীর করেছেন ইয়ুকতাবু অর্থাৎ লেখা হয়ইয়ুফাছছিলু অর্থাৎ ফায়সালা করা হয়ইয়ুতাজাও ওয়াযূ অর্থাৎ বন্টন বা নির্ধারণ করা হয়ইয়ুবাররেমু অর্থাৎ বাজেট করা হয়ইয়ুকদ্বিয়ু অর্থাৎ নির্দেশনা দেওয়া হয় কাজেই ইয়ুফরাকু -র অর্থ ও তার ব্যাখার মাধ্যমে আরো স্পষ্টভাবে বুঝা যায় যেলাইলাতুম মুবারাকাহ দ্বারা শবে বরাত বা ভাগ্য রজনীকে বুঝানো হয়েছে। যেই রাত্রিতে সমস্ত মাখলুকাতের ভাগ্যগুলো সামনের এক বছরের জন্য লিপিবদ্ধ করা হয়আর সেই ভাগ্যলিপি অনুসারে রমাদ্বান মাসের লাইলাতুল ক্বদর বা শবে ক্বদরে তা চালু হয়। এজন্য শবে বরাতকে লাইলাতুত্ তাজবীজ অর্থাৎ ফায়সালার রাত্র এবং শবে ক্বদরকে লাইলাতুল তানফীয অর্থাৎ নির্ধারিত ফায়সালার কার্যকরী করার রাত্র বলা হয়।

(তাফসীরে মাযহারী,তাফসীরে খাযীন,তাফসীরে ইবনে কাছীর,বাগবীকুরতুবী,রুহুল বয়ান,লুবাব) সুতরাং মহান আল্লাহ পাক যে সুরা দুখান-এ বলেছেন আমি বরকতময় রজনীতে কুরআন শরীফ নাযিল করেছি  এর ব্যাখ্যামুলক অর্থ হল  আমি বরকতময় রজনীতে কুরআন শরীফ নাযিলের ফায়সালা করেছি । আর সুরা ক্বদর-এ  আমি ক্বদরের রজনীতে কুরআন শরীফ নাযিল করেছি  এর ব্যাখ্যামুলক অর্থ হল  আমি ক্বদরের রজনীতে কুরআন শরীফ নাযিল করেছি । অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক শবে বরাতে কুরআন শরীফ নাযিলের সিদ্ধান্ত নেন এবং শবে ক্বদরে তা নাযিল করেন।

হাদীছ শরীফেও শবে বরাতে সমর্থন পাওয়া যায়। হাদীছে শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত আছে। একদা আল্লাহ পাকের হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনহে হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা ! আপনি কি জানেনলাইলাতুন নিছফি মিন শাবান বা শবে বরাতে কি সংঘটিত হয়তিনি বললেনহে আল্লাহ পাকের হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম !এ রাত্রিতে কি কি সংঘটিত হয়আল্লাহ পাকের হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনএ রাতে আগামী এক বছরে কতজন সন্তান জম্মগ্রহণ করবে এবং কতজন লোক মৃত্যূবরণ করবে তা লিপিবদ্ধ করা হয়। আর এ রাতে বান্দার (এক বছরের) আমলসমূহ আল্লাহ পাকের নিকট পেশ করা হয় এবং এ রাতে বান্দার (এক বছরের) রিযিকের ফায়সালা হয়

(বাইহাক্বীইবনে মাজাহ্মিশকাত শরীফ) হাদীছ শরীফে আরও ইরশাদ হয়েছে,হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেনএকদা আল্লাহ পাকের হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে কোন এক রাত্রিতে রাতযাপন করছিলাম। এক সময় উনাকে বিছানায় না পেয়ে আমি মনে করলাম যেতিনি হয়ত অন্য কোন আহলিয়া রদ্বিয়ালাহু তায়ালা আনহা-এর হুজরা শরীফে তাশরীফ নিয়েছেন। অতঃপর আমি তালাশ করে উনাকে জান্নাতুল বাক্বীতে পেলাম। সেখানে তিনি উম্মতের জন্য আল্লাহ পাকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছেন। এ অবস্থা দেখে আমি স্বীয় হুজরা শরীফে ফিরে এলে তিনিও ফিরে এলেন এবং বললেনঃ আপনি কি মনে করেন আল্লাহ পাকের হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনার সাথে আমানতের খিয়ানত করেছেনআমি বললামঃ ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি ধারনা করেছিলাম যেআপনি হয়তো আপনার অন্য কোন আহলিয়ার হুজরা শরীফে তাশরীফ নিয়েছেন। অতঃপর হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেননিশ্চয়ই আল্লাহ পাক শাবানের ১৫ তারিখ রাত্রিতে পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর তিনি বণী কালবের মেষের গায়ে যত পশম রয়েছে তার চেয়ে বেশী সংখ্যক বান্দাকে ক্ষমা করে থাকেন। (বুখারী শরীফতিরমিযী শরীফইবনে মাযাহরযীনমিশকাত শরীফ) হাদীছ শরীফে আরও ইরশাদ হয়েছে,
 হযরত আবু মুসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ননা করেনআল্লাহ পাকের হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেননিশ্চয়ই আল্লাহ পাক শাবান মাসের ১৫ তারিখ রাত্রিতে ঘোষনা করেন যেউনার সমস্ত মাখলুকাতকে ক্ষমা করে দিবেন। শুধু মুশরিক ও হিংসা-বিদ্বেষকারী ব্যতীত। (ইবনে মাযাহ্আহমদমিশকাত শরীফ) হাদীছ শরীফে আরও ইরশাদ হয়েছে,

হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ননা করেনআল্লাহ পাকের হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনযখন অর্ধ শাবানের রাত তথা শবে বরাত উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত রাতে সজাগ থেকে ইবাদত-বন্দেগী করবে এবং দিনের বেলায় রোযা রাখবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক উক্ত রাতে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর ঘোষাণা করতে থাকেনকোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছো কিআমি ক্ষমা করে দিব। কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছো কিআমি তাকে রিযিক দান করব। কোন মুছিবগ্রস্ত ব্যক্তি আছো কিআমি তার মুছিবত দূর করে দিব। এভাবে সুবহে ছাদিক পর্যন্ত ঘোষাণা করতে থাকেন (ইবনে মাযাহ্,মিশকাত শরীফমিরকাত শরীফ) হাদীছ শরীফে আরও ইরশাদ হয়েছে,আল্লাহ পাকের হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনযে ব্যক্তি শাবানের মধ্য রাতে (শবে বরাত) ইবাদত করবে তারই জন্য সুসংবাদ এবং তার জন্য সমস্ত কল্যাণ হাদীছ শরীফে আরও ইরশাদ হয়েছে,আল্লাহ পাকের হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনযে ব্যক্তি দুই ঈদের রাতে এবং অর্ধ শাবানের রাত তথা শবে বরাতের রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদত করবেসে ব্যক্তির অন্তর ঐদিন মরবে না বা পেরেশান হবে না যে দিন সকলের অন্তর পেরেশান থাকবে। (মুকাশাফাতুল কুলুব)

শবে বরাতের রাতে দোয়া কবুল প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,আল্লাহ পাকের হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনপাঁচটি রাত এমন রয়েছে যেগুলোতে দোয়া করলে তা রদ বা বাতিল হয়না । (১) পহেলা রজবের রাত (২) শাবানের মধ্য রাত তথা শবে বরাত (৩) জুমুয়ার রাত (৪) পবিত্র ঈদুল ফিতরের রাত (৫) পবিত্র ঈদুল আযহার রাত। (দায়লামী শরীফ)

শবে বরাতের রাতে দোয়া কবুল প্রসঙ্গে অন্য হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,আল্লাহ পাকের হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেননিশ্চয়ই দোয়া বা মুনাজাত পাঁচটি রাতে কবুল হয়ে থাকে । (১) পহেলা রজবের রাত (২) শাবানের মধ্য রাত তথা শবে বরাত (৩) ক্বদরের রাত (৪) পবিত্র ঈদুল ফিতরের রাত (৫) পবিত্র ঈদুল আযহার রাত (মা ছাবাত বিস্ সুন্নাহগুনইয়াতুত্ ত্বালিবীনমুকাশাফাতুল কুলুব) সুতরাং কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত যেশবে বরাত কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত।

No comments

Powered by Blogger.