২০২০ সাল নাগাদ ইউরোপে মুসলমানদের সংখ্যা হবে বর্তমানের দ্বিগুণ!
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত বহুল প্রচারিত সাময়িকী ‘টাইমস’ ব্যাপারে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, যার প্রতিটি বাক্যে ইসলামের সত্যতা ও বাস্তবতা উন্মোচিত হয়ে যায়। রিপোর্ট অনুযায়ী ইউরোপে নতুন মসজিদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপে ইসলাম যে দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে তাতে ইউরোপের প্রাচ্যবিদ, নীতিনির্ধারক মহল, দার্শনিক, বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিক-সাহিত্যিকরা রীতিমতো পেরেশান। এ প্রবণতা ও বিপ্লব দেখে তারা হতবাক। নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত বহুল প্রচারিত সাময়িকী ‘টাইমস’ ব্যাপারে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, যার প্রতিটি বাক্যে ইসলামের সত্যতা ও বাস্তবতা উন্মোচিত হয়ে যায়। রিপোর্ট অনুযায়ী ইউরোপে নতুন মসজিদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এসব মসজিদ থেকে দৈনিক পাঁচবার আযানের সুমধুর ধ্বনি ভেসে আসছে। রোমে তিন কোটি ডলার ব্যয়ে সুরম্য একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। মসজিদের জন্য জমি বরাদ্দ করেছে সে দেশের সরকার। ফ্রান্সে বর্তমানে মসজিদের সংখ্যা প্রায় এক হাজার। অথচ ১৯৭০ সালে সে দেশে মসজিদের সংখ্যা ছিল ডজনখানেক। ‘টাইমস’ এর রিপোর্ট অনুযায়ী ইউরোপে সর্বমোট মুসলমানের সংখ্যা প্রায় ৭০ লাখ। বৃটেনে প্রায় একশ’র মতো পাবলিক স্কুলে বাচ্চাদের সিলেবাসে ইসলামিয়াত অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পশ্চিম জার্মানিতে পশ্চিমা ধাঁচে পরিচালিত যতগুলো পাবলিক স্কুল আছে এর এক তৃতীয়াংশের মতো মুসলমান শিশুদের জন্য।
রিপোর্টে জানা যায়, মাত্র তিন দশক আগেও ইউরোপে মুসলমানরা ছিল অখ্যাত। তাদেরকে দেখা হতো সন্দেহের চোখে। কিন্তু মুসলমানরা তাদের অবস্থান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সফল হয়েছেন। এমনকি তারা তাদের ভোটে বৃটেনের পার্লামেন্টে নিজেদের সদস্য নির্বাচিত করেছেন। বর্তমানে ওলামায়ে কেরাম এবং দাওয়াত ও তাবলিগের প্রতিনিধিদল ব্যাপকহারে ইউরোপ সফর করছেন। মুসলমানরা তাদের সভা-সমাবেশে অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে শরিক হচ্ছেন। ইসলামী সাহিত্য এবং কুরআনে কারিমের তরজমা পড়ার প্রবণতা আগের চেয়ে কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। এসব কিছু পশ্চিমা বুদ্ধিজীবী ও সাধারণ জনগোষ্ঠীর মাঝে অভাবনীয় প্রভাব ফেলছে। ইউরোপে ইসলামের এই ব্যাপক প্রচার-প্রসারের পেছনে প্রধান ভূমিকা তাবলিগ জামাত এবং ওলামায়ে কেরামের। এটা তাদেরই চিন্তা-চেতনা এবং অবিশ্রান্ত সাধনার ফল। নিঃসন্দেহে এ ক্ষেত্রে ইউরোপের স্থানীয় ওলামায়ে কেরাম, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, রাজনৈতিক-সামাজিক সাংস্কৃতিক ও তাবলিগ জামাতের প্রয়াস প্রশংসাযোগ্য। ইউরোপের দু’জন স্কলারের আলোচনা, মুসলমানদের ব্যাপারে তাদের কর্মসূচি-কর্মপরিকল্পনা ও চিন্তাধারা এখানে পেশ করার মতো।
বৃটেনের ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক খুরশিদ আহমদ বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ মোতাবেক ইউরোপে প্রায় আড়াই কোটি মুসলমান বাস করেন। এর মধ্যে এক কোটি ১৫ লাখ রাশিয়ায়, ৭৫ লাখ পশ্চিম ইউরোপের অন্যান্য দেশে এবং প্রায় ৭০ লাখ শুধু পশ্চিম ইউরোপে বাস করেন। এমনিভাবে আজ ইসলাম ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম। ইউরোপের মুসলিম ফোরামের পরিচালক মাহমুদ সিদ্দীকী সাদী বলেন, জাতিসংঘ ইউরোপের মুসলমানদের ব্যাপারে যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে সেখানে মুসলমানদের সংখ্যা দেখানো হয়েছে ২১ মিলিয়ন (দুই কোটি ১০ লাখ)। অথচ প্রকৃত সত্য হচ্ছে, ইউরোপে মুসলমানদের সংখ্যা হচ্ছে ৪২ মিলিয়ন (৪ কোটি ২০ লাখ) এর চেয়েও বেশি। এরা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন। এর মধ্যে ইংল্যান্ডে ৭০ লাখ, ফ্রান্সে ৫০ লাখ এবং ৪০ লাখেরও অধিক মুসলমান জার্মানিতে বাস করছেন। বৃটেনে প্রতিদিনই মুসলমানের সংখ্যা বাড়ছে। পরিসংখ্যান মোতাবেক বৃটেনে মুসলমানের সংখ্যা ২০ লাখ। ৬০০ মসজিদ এবং ৪০০ এর মতো ইসলামী প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। বৃটেনে মসজিদ নির্মাণের পরিমাণও দিন দিন বাড়ছে।
একথার সত্যতা নিরূপণ করা যায় শুধু এটা দিয়েই যে, ১৯৬৩ সালে বৃটেনে শুধু তিনটি মসজিদ ছিল। আর এসব মসজিদে শুধু ফজর, মাগরিব ও ইশার নামাজ হতো। তখন বৃটেনে জুমার নামাজের বিশেষ কোনো প্রচলন ছিল না। সে সময় থেকে মাত্র ত্রিশ বছর পর ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত বৃটেনে ৫৭৫টি মসজিদ নির্মাণ হয়েছে এবং এসব মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও জুমা নিয়মিতভাবে আদায় হচ্ছে। ফ্রান্স ইউরোপের এমন একটি দেশ যেখানে সবচেয়ে বেশি মুসলমান বাস করে। ফ্রান্সে মুসলমানের সংখ্যা ৬০ লাখ। সেখানে ১৩০০ মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার এবং ১৬০০ ইসলামিক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। জাতীয় পর্যায়ে মুসলমানদের নিজস্ব রেডিও চ্যানেল রয়েছে। প্রসিদ্ধ শহর ‘মুদগাসাকার’ এর পূর্বাঞ্চলে ‘রিইউনিয়ন’ দ্বীপে মুসলমানেরা তাদের প্রথম স্কুল খুলেছে। ‘এব্রোবিলার্সে’ ২০০১ সালে তারা সর্বপ্রথম কলেজ প্রতিষ্ঠা করে। বর্তমানে তাদের বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কাজ করে যাচ্ছে।
রাষ্ট্রীয় পরিসংখ্যান মোতাবেক ফরাসি মুসলমানের সংখ্যা ৩০ হাজার। আর অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসিদ্ধ স্কলার আবদুল করীম মুরাদ বলেছেন, এক লাখ ফরাসি ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। এভাবে নওমুসলিমদের সংখ্যার দিক থেকে ফ্রান্স ইউরোপের সর্বশীর্ষে রয়েছে। ফ্রান্স সরকার ধারণা করছে, আগামী পনের বছরে ফ্রান্সে মুসলমানের সংখ্যা ৬০ থেকে ৮০ লাখে উন্নীত হয়ে যেতে পারে। ইতালি থেকে প্রকাশিত পত্রিকা The Joumal এ প্রকাশিত হয়েছে যে, ২০০ বছর পর ইউরোপের সমাজব্যবস্থা পরিপূর্ণভাবে ইসলামকে দ্বীন হিসেবে গ্রহণ করে নেবে। ইতালি ও জার্মানিতেও মুসলমানদের সংখ্যা উৎসাহব্যাঞ্জক। ইতালিতে মুসলমানের সংখ্যা ১০ লাখ। ৪৫০টি মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার কাজ করছে সেখানে। বিগত কয়েক বছরেই ৮০ হাজার লোক ইসলাম গ্রহণ করেছে। জার্মানিতে ১০ লাখ মুসলমান বাস করছে। মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার রয়েছে ১৪০০টি। ১৯৯১ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত কানাডায় মুসলমানের সংখ্যা কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। নাইন ইলেভেনের ঘটনার পর সুইজারল্যান্ডে ছয় হাজার খৃস্টান ইসলাম গ্রহণ করেছে।
অভিজ্ঞ মহলের ধারণা, ২০২০ সাল পর্যন্ত ইউরোপে মুসলমানদের সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে। আমেরিকার একটি স্বাধীন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের রিপোর্ট অনুযায়ী ২০২৫ সাল নাগাদ পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ হবে মুসলমান। বিশিষ্ট গবেষক জন বেগস-এর মতানুযায়ী ২০২০ সাল পর্যন্ত পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশ হবে মুসলমান। প্রসিদ্ধ খৃস্টান পাদ্রী মাজুলিনী এর মতে ভবিষ্যত হবে ইসলামের। বিভিন্ন দেশের পরিসংখ্যান, মুসলিম ও অমুসলিম স্কলারদের স্বীকৃতি ও স্বীকারোক্তি এবং বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার রিপোর্ট এখানে পেশ করা হলো। এখন এখানে সে রিপোর্টটি পেশ করা যাক যার কথা শুরুতে উল্লেখ করেছিলাম। আমেরিকা থেকে প্রকাশিত উল্লিখিত পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী ২০২৫ সাল নাগাদ গোটা বিশ্বে মুসলমানের সংখ্যা হবে ৩৫.৫ ভাগ, যখন খৃস্ট ধর্মাবলম্বী হবে ২০.২ ভাগ। ২০০০ সালে হিন্দু ছিল ১৩.৪ ভাগ, যা ২০২৫ সাল নাগাদ হবে ১৩.১ ভাগ। ২০০০ সালে বৌদ্ধ মতাবলম্বী ছিল ৫.৯ ভাগ, যা ২০২৫ সালে কমে হবে ৫.৭ ভাগ। ২০০০ সালে ইহুদি ছিল ৩.৭ ভাগ, যা ২০২৫ সালে হবে ২.৫ ভাগ। ওই সাময়িকীটি স্বীকার করেছে, ইউরোপে ইসলামের বিকাশ অন্যযে কোনো ধর্মের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি।
জহিদ উদ্দিন বাবর
No comments