বিশ্বের ‘আপসহীন’ ১০ মুসলিম নেত্রী

বিশ্বের ‘আপসহীন’ ১০ মুসলিম নেত্রীর একটিতালিকা সম্প্রতি
প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ব্রাউন
গার্ল ম্যাগাজিন। ওই তালিকা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংবাদমাধ্যম হাফিংটন
পোস্ট। প্রতিবেদনে জানা যায়, তালিকায় প্রথম স্থানে আছেন পাকিস্তানের
প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো। এ ছাড়া বাংলাদেশের
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যথাক্রমে তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে রয়েছেন।
প্রতিবেদনের শুরুতে হাফিংটন পোস্ট লিখেছে, দ্বন্দ্ব-সন্ত্রাস, হানাহানি আর ভুল বোঝাবুঝিতে মেতে আছে গোটা মুসলিম বিশ্ব। সমগ্র বিশ্বে
মুসলিম নারীকে ‘নির্যাতিত’ বা ‘বেশি নির্যাতিত’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।
অথচ এর মধ্যে কিছু মুসলিম নেত্রী আছেন যাঁরা নিজ গুণে হয়েছেন সারা বিশ্বের
আলোকবর্তিকা। নিজের যোগ্যতায় শত প্রতিকূলতা সামলে রাষ্ট্র পরিচালনার মতো
গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। এরপর ব্রাউন গার্ল ম্যাগাজিনের তালিকা অনুযায়ী
বিশ্বের শীর্ষ দশ অদম্য মুসলিম নারীর বর্ণনা উপস্থাপন করা হয়। তালিকাটি এনটিভি
অনলাইনের পাঠকদের জন্য দেওয়া হলো।
১. বেনজির ভুট্টো:
বিশ্বের আপসহীন মুসলিম নেত্রীর তালিকায় শীর্ষস্থানটি
পাকিস্তানের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর। ‘ডটার অব ইস্ট’-খ্যাত এই নেত্রী ১৯৫৩ সালের
২১ জুন করাচিতে জন্মগ্রহণ করেন। মুসলিম বিশ্বের প্রথম ও পাকিস্তানের একমাত্র নারী
প্রধানমন্ত্রী তিনি। তিনি দুবার (১৯৮৮-৯০ ও ১৯৯৩-৯৬) প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন
করেন। বাবা সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর মৃত্যুর পর পাকিস্তান পিপলস
পার্টির (পিপিপি) হাল ধরেন তিনি। ২০০৭ সালের ২৭ ডিসেম্বরে রাওয়ালপিন্ডিতে এক
জনসভায় ভাষণদানকালে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। তিনি হার্ভার্ড ও অক্সফোর্ড
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনীতির ওপর পড়াশোনা করেন।
২. মেঘবতী সুকর্ণপুত্রী:
ইন্দোনেশিয়ার পঞ্চম প্রেসিডেন্ট মেঘবতী সুকর্ণপুত্রী। ১৯৪৭
সালের ২৩ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন তিনি। দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে
তিনি ২০০১ থেকে ২০ অক্টোবর ২০০৪ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ইন্দোনেশিয়ার
প্রজাতান্ত্রিক দলের (পিডিআই) চেয়ারম্যান তিনি।
৩. শেখ হাসিনা:
বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৪৭ সালের ২৮
সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশের বর্তমান দশম জাতীয় সংসদের সরকারদলীয়
প্রধান এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের
প্রধান নেতা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে তিনি। তিন-তিনবার তিনি দেশের
প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। বর্তমানে দেশ শাসন করে চলেছেন শক্ত হাতে। ‘শান্তির দূত’ হিসেবে খ্যাতিও মিলেছে
তাঁর। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন।
৪. খালেদা জিয়া:
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন খালেদা
জিয়ার জন্ম ১৯৪৫ সালে। তিনি তিনবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি
বাংলাদেশের প্রথম ও মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী। প্রয়াত
রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলের হাল ধরেন তিনি।
৫. আতিফেতে জাহজাগা:
কসোভোর বর্তমান প্রেসিডেন্ট আতিফিতে জাহজাগা। তিনি ১৯৭৫
সালের ২০ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। ৭ এপ্রিল ২০১১ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ
শপথ গ্রহণ করেন তিনি। কসোভোর প্রথম নির্বাচিত নারী প্রেসিডেন্ট তিনি। বলকান
অঞ্চলেরও প্রথম নির্বাচিত নারী প্রেসিডেন্ট তিনি। একই সঙ্গে বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ
নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের তালিকায় নিজের নাম লেখান তিনি। কসোভোর প্রিস্টিনা
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক পাস করেন তিনি। এরপর যুক্তরাজ্য ও জার্মানির
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পুলিশ সায়েন্স ও অপরাধবিজ্ঞানের ওপর উচ্চতর ডিগ্রি নেন।
৬. তানসু সিলার:
তুরস্কের প্রথম ও একমাত্র নারী প্রধানমন্ত্রী তানসু সিলার।
১৯৪৬ সালের ২৪ মে রাজধানী ইস্তাম্বুলে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। শিক্ষাবিদ ও
অর্থনীতিবিদ এই নারী ১৯৯৩ সালে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ’৯৬ সাল পর্যন্ত তুরস্কের
প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ার থেকে
এমএস ডিগ্রি গ্রহণ করেন। এ ছাড়া কানেকটিকাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ
করেন তিনি।
৭. মামে মাদিওর বোয়ে:
সেনেগালের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মামে মাদিওর
বোয়ে। ২০০১ মার্চ থেকে ২০০২ নভেম্বর পর্যন্ত দেশটির প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন
করেন। দেশটির প্রখ্যাত আইনজীবী হিসেবে তাঁর খ্যাতি রয়েছে। আইন নিয়ে তিনি সেনেগালের
রাজধানী ডাকার ও ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে পড়াশোনা করেন। ১৯৪০ সালে আফ্রিকার দেশ
সেনেগালের সেন্ট লুইসে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
৮. আমিনাতা তৌরে:
সেনেগালের দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী আমিনাতা তৌরে। ২০১২
সালে তিনি সেনেগালের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তিনি ২০১৪ সাল পর্যন্ত দেশটির
প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে নারী অধিকার রক্ষায় কাজের জন্য ভূয়সী প্রশংসিত
হন।
২০১৩ সালে আবদুল মাবায়িকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে অ্যালায়েন্স ফর দ্য রিপাবলিকের (এপিআর) প্রধান ৫১ বছর বয়সী তৌরেকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেনেগাল, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন তৌরে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জাতিসংঘের হয়ে কাজও করেছিলেন তিনি।
৯. সিসে মরিয়ম কাইদামা সিদিবি:
২০১৩ সালে আবদুল মাবায়িকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে অ্যালায়েন্স ফর দ্য রিপাবলিকের (এপিআর) প্রধান ৫১ বছর বয়সী তৌরেকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেনেগাল, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন তৌরে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জাতিসংঘের হয়ে কাজও করেছিলেন তিনি।
৯. সিসে মরিয়ম কাইদামা সিদিবি:
আফ্রিকার দেশ মালির মুসলিম নারী শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিদিবি
নামে পরিচিত। শিক্ষাবিদ থেকে রাজনীতিবিদে পরিণত হওয়া এ অধ্যাপক মালির
প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন ২০১১ সালে। তিনি ২০১২ সালে মালির প্রধানমন্ত্রীর
দায়িত্ব পালন করেন। দুর্নীতিপরায়ণ দেশ মালির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে
দুর্নীতি দমনে ভূমিকা রেখেছেন সিদিবি।
১০. আমিনা গারিব ফাকিম:
১০. আমিনা গারিব ফাকিম:
ভারত মহাসাগরের দ্বীপ মরিশাসের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট
খ্যাতিমান জীববিজ্ঞানী আমিনা গারিব ফাকিম। চলতি জুনে মরিসাসের ষষ্ঠ প্রেসিডেন্ট
হিসেবে শপথ নেন ৫৬ বছর বয়সী আমিনা। আমিনা বর্তমানে মরিশাসের ফিজিওথেরাপি গবেষণা
সেন্টারের মহাপরিচালক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব সারে ও
ইউনিভার্সিটি অব এক্সটার থেকে পড়শোনা করা আমিনা মরিশাস বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন
বিভাগেরও চেয়ারপারসন। এ ছাড়া আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে বিশ্বব্যাংকের উচ্চপদে কাজ
করেছেন তিনি।