জেনে নিন ঘুর্ণিঝড় সংকেত সমূহের অর্থ ও করণীয়
ঘূর্ণিঝড়ের সংকেত শুধুমাত্র সমুদ্র বন্দর এবং নদী বন্দরকে লক্ষ্য করে করা হয়েছে এবং তা বোঝা বেশ জটিল৷ সংকেতগুলো জনগণকে লক্ষ্য করে তৈরি করা হয়নি৷ এছাড়া সংকেত থেকে ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থান (উপকূল থেকে কত দূরে রয়েছে), উপকূলীয় অঞ্চলে বাতাসের গতিবেগ
কিংবা ঘূর্ণিঝড়ের স্থান পরিবর্তনের গতিবেগ
কিংবা ঘূর্ণিঝড়ের স্থান পরিবর্তনের গতিবেগ
কত এর কোনটিই বোঝা যায় না৷ কেবলমাত্র কোন দিক থেকে বাতাস বইছে এবং আবহাওয়া দুর্যোগপূর্ণ হচ্ছে এবং বিপদাপন্নতা আরও বাড়ছে কিনা এটা বোঝা যায়৷ তারপরও উপকূলীয় অঞ্চলের জনগণ এই সংকেতগুলোই অনুসরণ করে৷
বাংলাদেশে দুই ধরনের সংকেত ব্যবহার করা হয়৷ তাহলো-
১. সমুদ্র বন্দরের জন্য ১১ টি সংকেত এবং
২ . নদী বন্দরের জন্য ৪টি সংকেত
বিপদ বা ভয়াবহতা বিশ্লেষণ করে সর্বমোট ১১টি সংকেতকে ৫টি ভাগে ভাগ করা যায় যা নিচে দেয়া হলো:
সমুদ্র বন্দর সংকেত নং ১ ও ৩ – সতর্ক সংকেত
সমুদ্র বন্দর সংকেত নং ২ ও ৪ – হুঁশিয়ারি সংকেত
সমুদ্র বন্দর সংকেত নং ৫, ৬ ও ৭ – বিপদ সংকেত
সমুদ্র বন্দর সংকেত নং ৮, ঌ ও ১০ – মহাবিপদ সংকেত
সমুদ্র বন্দর সংকেত নং ১১ – ঘূর্ণিঝড়ের প্রচণ্ডতার কারণে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
ঘূর্ণিঝড় এবং ঝড়ের সংকেত সম্পর্কে উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসরত প্রত্যেকের জানা উচিত৷ সংকেতসমূহ সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো :
সমুদ্র বন্দরের সংকেতসমূহ
সমুদ্র বন্দরের বিপদ সংকেত দেয়া হলে সেখানে লাল পতাকা টাঙিয়ে দেয়া হয় এবং রেডিও-টেলিভিশনে বার বার প্রচার করা হয়৷
একটি লাল পতাকা
- ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত: এর অর্থ বঙ্গোপসাগরের কোন একটা অঞ্চলে ঝড়ো হাওয়া বইছে এবং সেখানে ঝড় সৃষ্টি হতে পারে৷
- ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত: সমুদ্রে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছে৷
- ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত: এর অর্থ বন্দর দমকা হাওয়ার সম্মুখীন ৷
দুইটি লাল পতাকা
- ৪ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত: এর অর্থ বন্দর ঝড়ের সম্মুখীন হচ্ছে, তবে বিপদের আশন্কা এমন নয় যে চরম নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে৷
- ৫ নম্বর বিপদ সংকেত: এর অর্থ হচ্ছে অল্প বা মাঝারী ধরনের ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বন্দরের আবহাওয়া দুর্যোগপূর্ণ থাকবে এবং ঝড়টি চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষিণ দিক দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে (মংলা বন্দরের বেলায় পূর্ব দিক দিয়ে)৷
- ৬ নম্বর বিপদ সংকেত: এর অর্থ হচ্ছে অল্প বা মাঝারী ধরনের ঝড় হবে এবং আবহাওয়া দুযোগপূর্ণ থাকবে৷ ঝড়টি চট্টগ্রাম বন্দরের উত্তর দিক দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে৷ (মংলা বন্দরের বেলায় পশ্চিম দিক দিয়ে)৷
- ৭নং বিপদ সংকেত: এর অর্থ অল্প অথবা মাঝারী ধরনের ঘূর্ণিঝড় হবে এবং এজন্য আবহাওয়া দুর্যোগপূর্ণ থাকবে৷ ঘূর্ণিঝড়টি সমুদ্রবন্দরের খুব কাছ দিয়ে অথবা উপর দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে৷
তিনটি লাল পতাকা
- ৮ নং মহাবিপদ সংকেত: এর অর্থ প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড় হবে এবং বন্দরের আবহাওয়া খুবই দুর্যোগপূর্ণ থাকবে৷ ঝড়টি চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষিণ দিক দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে (মংলা বন্দরের বেলায় পূর্ব দিক দিয়ে)৷
- ঌ নম্বর মহাবিপদ সংকেত: এর অর্থ প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বন্দরের আবহাওয়া দুর্যোগপূর্ণ থাকবে৷ ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম বন্দরের উত্তর দিক দিয়ে উপকূল অতিক্রম করার আশন্কা রয়েছে (মংলা বন্দরের বেলায় পশ্চিম দিক দিয়ে)৷
- ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত: এর অর্থ প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বন্দরের আবহাওয়া দুর্যোগপূর্ণ থাকবে এবং ঘূর্ণিঝড়টির বন্দরের খুব কাছ দিয়ে অথবা উপর দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে৷
- ১১ নম্বর যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ার সংকেত: এর অর্থ ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সাথে সমস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে এবং স্থানীয় অধিকর্তার বিবেচনায় চরম প্রতিকূল আবহাওয়ার আশন্কা রয়েছে৷
সমূদ্র বন্দরের জন্য সতর্ক সংকেত
সংকেত নম্বর
|
সংকেত সমূহের অর্থ (বর্তমান)
|
১নং দূরবর্তী সতর্ক সংকেত
| জাহাজ ছেড়ে যাওয়ার পর দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া সম্মুখীন হতে পারে। দূরবর্তী এলাকায় একটি ঝড়ো হাওয়ার অঞ্চল রয়েছে, যেখানে বাতাসের গতিবেগ ঘন্টায় ৬১ কিঃমিঃ যা সামূদ্রিক ঝড়ে পরিণত হতে পারে। |
২নং দূরবর্তী হুঁশিয়ারী সংকেত
| দূরে গভীর সাগরে একটি ঝড় সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘন্টায় ৬২-৮৮ কিঃমিঃ। বন্দর এখনই ঝড়ে কবলিত হবে না, তবে বন্দর ত্যাগকারী জাহাজ পথিমধ্যে বিপদে পড়তে পারে। |
৩নং স্থানীয় সতর্ক সংকেত
| বন্দর ও বন্দরে নোঙ্গর করা জাহাজগুলো দূর্যোগ কবলিত হওয়ার আশঙ্খা রয়েছে। বন্দরে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে এবং ঘূর্ণি বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘন্টায় ৪০-৫০ কিঃমিঃ হতে পারে। |
৪নং
স্থানীয় হুঁশিয়ারী সংকেত
| বন্দর ঘূর্ণিঝড় কবলিত। বাতাসের সম্ভাব্য গতিবেগ ঘন্টায় ৫১-৬১ কিঃমিঃ তবে ঘূর্ণিঝড়ের চূড়ান্ত প্রস্ত্ততি নেওয়ার মতো তেমন বিপজ্জনক সময় এখনো আসেনি। |
৫ নং বিপদ সংকেত
| বন্দর ছোট বা মাঝারী তীব্রতার ঝঞ্ঝাবহুল এক সামূদ্রিক ঝড়ের কবলে নিপতিত। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘন্টায় ৬২-৮৮ কিঃমিঃ। ঝড়টি বন্দরকে বাম দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। |
৬নং বিপদ সংকেত
| বন্দর ছোট বা মাঝারী তীব্রতার ঝঞ্ঝাবহুল এক সামূদ্রিক ঝড়ের কবলে নিপতিত। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘন্টায় ৬২-৮৮ কিঃমিঃ। ঝড়টি বন্দরকে ডান দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। |
৭নং বিপদ সংকেত
| বন্দর ছোট বা মাঝারী তীব্রতার ঝঞ্ঝাবহুল এক সামূদ্রিক ঘূণিঝড়ের কবলে নিপতিত। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘন্টায় ৬২-৮৮ কিঃমিঃ। ঝড়টি বন্দরকে উপর বা নিকট দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। |
৮নং মহাবিপদ সংকেত
| বন্দর প্রচন্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতার ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ ঘূণিঝড়ের কবলে পড়তে পারে। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘন্টায় ৮৯ কিঃমিঃ বা তার উর্দ্ধে হতে পারে। প্রচন্ড ঝড়টি বন্দরকে বাম দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করবে। |
৯নং মহাবিপদ সংকেত
| বন্দর প্রচন্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতার ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ এক সামূদ্রিক ঘূণিঝড়ের কবলে নিপতিত। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘন্টায় ৮৯ কিঃমিঃ বা তার উর্দ্ধে হতে পারে। প্রচন্ড ঝড়টি বন্দরকে ডান দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করবে। |
১০নং মহাবিপদ সংকেত
| বন্দর প্রচন্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতার ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ এক সামূদ্রিক ঘূণিঝড়ের কবলে নিপতিত। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘন্টায় ৮৯ কিঃমিঃ বা তার উর্দ্ধে হতে পারে। প্রচন্ড ঝড়টি বন্দরের উপর বা নিকট দিয়ে উপকূল অতিক্রম করবে। |
১১নং যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সংকেত
| আবহাওয়ার বিপদ সংকেত প্রদানকারী কেন্দ্রের সাথে সকল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং স্থানীয় কর্মকর্তা আবহাওয়া অত্যন্ত দূর্যোগপূর্ণ বলে মনে করেন। |