সাধারণত কোনো স্থানে বায়ুর উষ্ণতা বৃদ্ধি পেলে সেখানকার বায়ু উপরে উঠে যায়। ফলে সেখানে বায়ুর চাপ ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। হঠাৎ করেই কোনো স্থানের বায়ুর চাপ কমে যাওয়াকেই বলে নিম্নচাপ। এ নিম্নচাপ কখনো কখনো এতটাই প্রবল হয়ে উঠে যে, সে স্থানটি মূলত বায়ুশূন্য অবস্থার সৃষ্টি করে। ফলে আশপাশের অঞ্চল থেকে বায়ু প্রবল বেগে ছুটে এসে শূন্যস্থানটি পূরণ করার
চেষ্টা করে। আর চারপাশ থেকেই যখন প্রবল বেগে বায়ু প্রবাহ একটি কেন্দ্র বিন্দুতে এসে প্রচণ্ড সংঘর্ষের সৃষ্টি করে। ফলে সৃষ্টি হয় বায়ুর ঘূর্ণন। এ নিম্নচাপ কেন্দ্রমুখী প্রবল ঘূর্ণি বায়ু প্রবাহকেই ঘূর্ণিঝড় বা সাইক্লোন বলে।
রিলেভেন্ট এই বিষয়গুলোর উপর ভিডিও দেখতে চাইলে সাবস্ক্রাইব করে রাখুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলটি - ঠিকানা -YouTube.com/Bangladeshism
আবহাওয়াবিদদের গবেষণায় দেখা গেছে, সাধারণত সমুদ্রের পানি ৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি গরম হয়ে গেলেই নিম্নচাপ এবং নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে পারে। আর একই তাপমাত্রা থেকেই জন্ম নেয় প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প ও স্যাঁতস্যাতে বাতাস। সেটিই রূপ নেয় ভয়ঙ্কর কালো মেঘে। একারণেই যখনই সমুদ্রে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয় তার প্রভাবে আশপাশের বিস্তৃত অঞ্চলে হালকা থেকে ভারী মেঘ হতে দেখি আমরা।
নিম্নচাপ কেন্দ্রেমুখী ঘূর্ণি বায়ুর প্রবাহ যত বাড়তে থাকে বাতাসের গতিবেগও ততই বাড়তে থাকে। আর বাতাসের গতি যখন প্রতি ঘণ্টায় ৭৪ মাইলের বেশি হয়ে যায়, তখনই তাকে হ্যারিকেন বলা হয়। গতি যখন এর চেয়ে কম থাকে কিন্তু প্রতি ঘন্টায় ৩৯ মাইলের বেশি থাকে তখন সেটা শুধুই মৌসুমী ঝড়।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের দেয়া তথ্য মতে, প্রতি বছর বঙ্গোপসাগরে গড়ে ১৩-১৪টি গ্রীষ্মম-লীয় ঘূর্ণিঝড় (বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬১ দশমিক ৫৬ কিলোমিটারের কম) সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে ৫টি ঘূর্ণিঝড় শক্তি অর্জন করে এবং পাশ্ববর্তী উপকূল অতিক্রম করে। এদের যেকোনোটিরই বাংলাদেশের উপকূলের দিকে ঘুরে প্রবাহিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সূচক মতে বাতাসের তীব্রতা ও গতির ভিত্তিতে ঘূর্ণিঝড়ের শ্রেণী বিভাজন করা হয়। যেমন-
১. নিম্নচাপ- বাতাসের গতিবেগ ঘন্টায় ২০ থেকে ৫০ কিলোমিটার।
২. গভীর নিম্নচাপ- বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৫১ দশমিক ৮৪ থেকে ৬১ দশমিক ৫৬ কিলোমিটার।
৩. ঘূর্ণিঝড়- বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬১ দশমিক ৫৬ থেকে ৮৭ দশমিক ৪৮ কিলোমিটার।
৪. প্রবল ঘূর্ণিঝড়- বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ দশমিক ১ থেকে ১১৮ দশমিক ২৬ কিলোমিটার।
৫. হারিকেনের তীব্রতা সম্পন্ন প্রবল ঘূর্ণিঝড়- বাতাসের গতিবেগ ঘন্টায় ১১৯ দশমিক ৮৮ কিলোমিটারের ঊর্ধ্বে।
তার মানে হচ্ছে নানা কারণে প্রকৃতির উষ্ণতা যত বাড়বে, সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা এবং ভয়াবহতাও তত বাড়বে। তাই আমাদের উচিৎ পরিবেশের তাপমাত্রা যাতে না বাড়ে সে দিকে লক্ষ্য রেখেই নিজেদের যাবতীয় কাজকর্ম করা।
ঘূর্ণিঝড়েরর প্রচণ্ডতা এবং প্রকৃতি লুকিয়ে থাকে সতর্ক সংকেতের মধ্যেই
ডেস্ক : বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুযোর্গ প্রায় লেগেই আছে। একের পর একটা আছেই। অন্যান্যদের দুর্যোগের ক্ষেত্রে সম্ভব না হলেও আবহওয়া অধিদপ্তর ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংকেত প্রদান করে সমুদ্র বন্দর, নদী বন্দর এবং উপকূলবাসীকে সতর্ক করে থাকেন। সমুদ্র বন্দরের জন্য সতর্ক/হুঁশিয়ারি সংকেতগুলো ১ থেকে ১০-এর মধ্যে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু নদী বন্দরগুলোর জন্য ১ থেকে ৪ পর্যন্ত সতর্ক সংকেত প্রদান করা হয়ে থাকে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঘোষিত সমুদ্র বন্দরগুলোর জন্য সংকেত :
১নং দূরবর্তী সতর্ক সংকেত: এর অর্থ হলো জাহাজ ছেড়ে যাওয়ার পর দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া সম্মুখীন হতে পারে। দূরবর্তী এলাকায় একটি ঝড়ো হাওয়ার অঞ্চল রয়েছে, যেখানে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬১ কিমি, যা সামদ্রিক ঝড়ে পরিণত হতে পারে।
২নং দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত : দূরে গভীর সাগরে একটি ঝড় সৃষ্টি হয়েছে। যেখানে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কিমি। বন্দর এখনই ঝড়ে কবলিত হবে না। তবে বন্দর ত্যাগকারী জাহাজ পথিমধ্যে বিপদে পড়তে পারে।
৩নং স্থানীয় সতর্ক সংকেত: বন্দর ও বন্দরে নোঙ্গর করা জাহাজগুলো দুর্যোগ কবলিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বন্দরে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে এবং ঘূর্ণি বাতাসের একটানা গতিবেগ ৪০-৫০ কিমি হতে পারে।
৪নং স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত: বন্দর ঘূর্ণিঝড় কবলিত। বাতাসের সম্ভাব্য গতিবেগ ঘণ্টায় ৫১-৬১ কিমি। তবে ঘূর্ণিঝড়ের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়ার মতো তেমন বিপদজনক অবস্থা এখনও আসেনি।
৫নং বিপদ সংকেত: বন্দর ছোট বা মাঝারী তীব্রতার ঝঞ্জাবহুল এক সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে নিপতি। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কিমি। ঝড়টি বন্দরকে বাম দিক রেখে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
৬নং বিপদ সংকেত: বন্দর ছোট বা মাঝারী তীব্রতার ঝঞ্জাবহুল এক সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে নিপতি। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কিমি। ঝড়টি বন্দরকে ডান দিক রেখে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
৭নং বিপদ সংকেত: বন্দর ছোট বা মাঝারী তীব্রতার ঝঞ্জাবহুল এক সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে নিপতিত। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কিমি। ঝড়টি বন্দরকে উপর বা নিকট দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। আর তখনই উপকূলবাসীকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়াটা জরুরি হয়ে উঠে।
৮নং মহাবিপদ সংকেত: বন্দর প্রচণ্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতার ঝঞ্জাবিক্ষুব্ধ ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়তে পারে। ঝড়ো বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিমি বা তার ঊর্ধ্বে হতে পারে। প্রচণ্ড ঝড়টি বন্দরকে বাম দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করবে।
৯নং মহাবিপদ সংকেত: বন্দর প্রচণ্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতার ঝঞ্জাবিক্ষুব্ধ ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়তে পারে। ঝড়ো বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিমি বা তার ঊর্ধ্বে হতে পারে। প্রচণ্ড ঝড়টি বন্দরকে ডান দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করবে।
১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত: বন্দর প্রচণ্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতার ঝঞ্জাবিক্ষুব্ধ ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়তে পারে। ঝড়ো বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিমি বা তার ঊর্ধ্বে হতে পারে। প্রচণ্ড ঝড়টি বন্দরের উপর বা নিকট দিয়ে উপকূল অতিক্রম করবে।
এরপর আরও একটি সংকেত কখনো কখনো দেওয়া হয়। আর সেটি হচ্ছে ১১নং যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সংকেত।যার মানে হলো আবহাওয়া বিপদ সংকেত প্রদানকারী কেন্দ্রের সঙ্গে সকল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।চারপাশে কী হচ্ছে তার কোনো কিছুই আর জানানোর মতো অবস্থা নেই।