আবহমানকাল থেকেই একজন নারীকে রূপ-সৌন্দর্য, ধন-সম্পদ, বংশমর্যাদা
ও ধর্মভীরুতা- বৈবাহিক ক্ষেত্রে এ চারটি গুণের ওপর ভিত্তি করেই মূলত মূল্যায়ন করা
হয় । মানুষের জীবনের প্রতিটি বিষয় ও দিকের মতো বিবাহর ক্ষেত্রে পাত্রী নির্বাচনের
ব্যাপারে বেশ গুরুত্ব প্রদান করেছে ইসলাম। পাত্রী নির্বাচনের শর্ত এবং মৌলিক
গুণাবলী বাতিয়ে সতর্ক করেছে প্রতিটি বিবাহযোহগ্য আগ্রহী পুরুষকে
।
।
বরপক্ষের
প্রতি রাসুলুল্লাহ (সা.) -এর দিকনির্দেশনার প্রতি আমরা তাকালে দেখতে পাব সেখানে
তিনি ধর্মপরায়ণ নারী নির্বাচনের পরামর্শ দিয়েছেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.)
রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে হাদিস বর্ণনা করেন যে, রূপ-সৌন্দর্য, ধন-সম্পদ, বংশমর্যাদা ও ধর্মভীরুতা- সাধারণত এ চার
গুণের দিকে লক্ষ করে কোনো নারীকে বিয়ে করা হয়। শ্রোতা! তুমি ধার্মিককে গ্রহণ করে
সাফল্যমণ্ডিত হও। আর নিরুৎসাহিত হইও না।’ (বোখারি, মুসলিম)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) এই হাদিসে স্বাভাবিক অবস্থার প্রতি খেয়াল করে কনের সর্বশ্রেষ্ঠ
গুণ ধর্মপরায়ণতাকে সবশেষে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু পরেই বরের সফলতা ওই গুণটির মধ্যেই
নিহিত, তা স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন। শুধু তাই নয়, সবশেষে এ উদ্দেশ্যে উৎসাহব্যঞ্জক আরও একটি বাক্য জুড়ে দিয়েছেন। (শরহে নববি
: ৩/২১২)।
আদর্শ
গৃহ গড়ার প্রথম সোপান হলো, এ গৃহের জন্য আদর্শময়ী সতী-সাধ্বী স্ত্রী নির্বাচন
করা। তাই দাম্পত্য জীবন আরম্ভের শুরুতেই সহধর্মিণীর দ্বীনদারিতা ও ধার্মিকতা দেখে নেয়া
একান্ত জরুরি। আল্লাহর রাসূল [সা.] বলেন, এমন সতী-সাধ্বী
স্ত্রী বরণ করা উচিত, যে তোমাকে তোমার দ্বীন ও দুনিয়ার বিষয়ে
সাহায্য করে; যা সব সম্পদ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।’ রাসূল [সা.] অন্যত্র বলেন, ‘পুণ্যময়ী ও অধিক সন্তানপ্রসূ নারীকে বিয়ে
করো। কেয়ামতে তোমাদের সংখ্যাধিক্য নিয়ে সব আম্বিয়ার কাছে আমি গর্ব করব।’ (মুসনাদে আহমাদ : ৩/২৪৫)।
সূল
[সা.] বলেন, ‘সতী স্ত্রী এক
সৌভাগ্যের সম্পদ; যাকে তুমি দেখে পছন্দ করো এবং যে তোমার মন মুগ্ধ
করে, আর তোমার অবর্তমানে তার ব্যাপারে ও তোমার সম্পদের
ব্যাপারে সুনিশ্চিত থাকে। পক্ষান্তরে অসতী স্ত্রী দুর্ভাগ্যের আপদ; যাকে দেখে তুমি অপছন্দ করো এবং যে তোমার মন মুগ্ধ করতে পারে না। যে তোমার
ওপর মানুষের হামলা চালায়। আর তোমার অনুপস্থিতিতে তার ও তোমার সম্পদের ব্যাপারে
সুনিশ্চিত হতে পারে না।’ (সিলসিলা সহিহা ১৮২, ইবনে হিব্বান)।
রাসুলুল্লাহ
[সা.] বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ
নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় তখন সে যেন তার এমন কিছু দেখে, যা তাকে তার সাথে বিয়েতে উৎসাহিত করে’ (আবু দাউদ : ২০৮২)। কনেকে একবার দেখে
পছন্দ করা গেলে একবার দেখাই বিধান। কোনো কোনো নারীকে একবার দেখে তার সাথে বিয়ের
মতো গুরত্বপূর্ণ চুক্তির সিদ্ধান্ত নেয়া য়ায় না। এ ক্ষেত্রে তাকে একাধিকবার দেখা
বিহিত। ফিকহের ভাষ্য হচ্ছে, পাত্রের জন্য বিহিত পাত্রীকে
বারবার দেখা, এমনকি যদি সে উ™ভূত পরিস্তিতিতে তিনবারের বেশিও দেখে-
যাতে তার সামগ্রিক বিষয়টি পাত্রের কাছে সুস্পষ্ট প্রতিভাত হয়। (আর-রামলি, নেহায়া : ৬/১৮৬)। যদি পাত্র পাত্রীকে একবার দেখেই পরিতৃপ্ত হয়ে যায়,
তবে তার জন্য একবারের অতিরিক্ত দেখা হারাম। কারণ এই দেখা হালাল করা
হয়েছে অনিবার্য প্রয়োজনে। সুতরাং এখানে অনিবার্য প্রয়োজন বিবেচ্য (রাদ্দুল মুহতার
: ৬/৩৭০)।