02 May 2016

ভূমিকম্প স্রষ্টার সতর্ক সংকেত, যা কোরআন-হাদিস দ্বারা প্রমাণিত........................



সূরা আনকাবুতে আল্লাহতায়ালা বলেন, আবার কাউকে আমি ভূমিকম্পের মাধ্যমে ভূমিধস দিয়ে ভূগর্ভে প্রথিত করি এবং কাউকে (বন্যা-জলোচ্ছ্বাস-পাবন প্রভৃতির মাধ্যমে) পানিতে ডুবিয়ে দেই। আল্লাহ তাদের প্রতি জুলুমকারী ছিলেন না; কিন্তু তারা নিজেরাই নিজেদের ওপর জুলুম করেছিল। রাসূল (সা.) বোখারি শরিফের ৯৭৯নং হাদিসে বলেন, কেয়ামত কায়েম হবে না, যে পর্যন্ত না ইলম উঠিয়ে নেয়া হবে, অধিক পরিমাণে ভূকম্পন হবে, সময় সঙ্কুচিত হয়ে আসবে, ফেতনা প্রকাশ পাবে এবং খুনখারাবি বৃদ্ধি পাবে। 

গত ১৩ এপ্রিলের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল মিয়ানমারের মাওলাইকে। রিখটার স্কেলে মাত্রা ছিল ছয় দশমিক নয় (৬.৯)। ভূমিকম্পের গভীরতা ছিল ১২৫ কি. মি.। ভূমিকম্পটি অনুভূত হয় ভারত, পাকিস্তান ও নেপালে। তবুও কেঁপে উঠল বাংলাদেশ। দালানকোঠা, পাহাড়-পর্বতেও ধাক্কা লাগল। ইতিপূর্বে বাংলার মানুষ এমন তীব্র ঝাঁকুনি অনুভব করেনি। রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ছিল ৬.৯। চিলি, জাপান এবং লন্ডনের ভূমিকম্পগুলোর দিকে নজর দিলে তুলনামূলক এটা তেমন কিছু না।
তবুও মাত্রায় এত কম হতাহতের কথাও নয়। সবই আল্লাহর কুদরত এবং ইশারা। এটাকে যে কোনো ধরনের বৃহৎ বিপর্যয়ের পূর্বাভাস বললেও ভুল হবে না। কারণ মানুষের বিপদাপদের ফলে প্রতীয়মান হয় পৃথিবীতে গুনাহ কত ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। 

যদি মানুষের গুনাহ বন্ধ না হয়, যত আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হোক না কেন পরিবেশ প্রকৃতি ও মানুষের ওপর অর্পিত এ আজাব ক্রমেই বৃদ্ধি পাবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। এ ক্ষেত্রে গুম, খুন, নির্যাতন, হত্যা, জুলুম, মিথ্যা, ধর্ষণ, হিংসা, গীবত, সুদ, ঘুষ, জবরদখল, অন্যায়, অত্যাচার, হানাহানি, কাটাকাটি, মারামারি এবং ধর্মীয় আইন-কানুন লঙ্ঘনসহ আল্লাহ রাসূলের প্রকাশ্য বিরোধিতা ও মজলুমের ওপর অযথা হামলা, নিরপরাধীর বিরুদ্ধে অহেতুক মামলা ইত্যাদিই আমাদের জন্য নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারার মতো কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাজেই মানুষের প্রতি মানুষের অনৈতিক আচরণবিধি ও অবর্ণনীয় ভাষার করাল ঘ্রাস থেকে মুক্ত থাকা চাই, নচেৎ যে কোনো মুহূর্তে দীর্ঘমেয়াদি আজাব আমাদের চেপে বসতে পারে! যার সামান্য ইঙ্গিত আমরা মাঝেমধ্যে উপলব্ধিও করে থাকি।

আল্লাহতায়ালা সূরা শুয়ারার ২০৮-২০৯ নং আয়াতে বলেনÑ আমি এমন কোনো জনপদ ধ্বংস করিনি যার জন্য সতর্ককারী ছিল না; তা উপদেশস্বরূপ আর আমি অন্যায়াচারী নই। আল্লামা ইবনুল কাইয়ুম (রহ.) বলেন, আল্লাহতায়ালা মাঝে মাঝে পৃথিবীকে জীবন্ত হয়ে ওঠার অনুমতি দেন, যার ফলে তখন বড় ধরনের ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়। তখন এই ভূমিকম্প মানুষকে ভীত করে এবং তারা আল্লাহর কাছে তওবা করে পাপ কর্ম ছেড়ে দেয়, কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়। সূরা বনী ইসরাইলের ৫৯ নং আয়াতে বলেনÑ আমি শুধু সতর্ক করার জন্য আমার নিদর্শনগুলো পাঠিয়ে থাকি।

বিজ্ঞান বলে ভূপৃষ্ঠের নিচে একটি নির্দিষ্ট গভীরতায় রয়েছে কঠিন ভূতক। ভূতকের নিচে প্রায় ১০০ কি.মি. পুরু একটি শীতল কঠিন পদার্থের স্তর রয়েছে। একে লিথোস্ফেয়ার (ষরঃযড়ংঢ়যবৎব) বা কঠিন শিলাত্বক নামে অভিহিত করা হয়। আমাদের পৃথিবী নামের এই গ্রহের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে কঠিন শিলাত্বকসহ এর ভূপৃষ্ঠে বেশ কিছু সংখ্যক শক্ত শিলাত্বকের প্লেট (ঢ়ষধঃব) এর মধ্যে খ- খ-ভাবে অবস্থান করছে। ভূতত্ত্ব বিজ্ঞানের আলোকে এ প্লেটের চ্যুতি বা নড়াচড়ার দরুন ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে সূরা যিলযাল নামে একটি সূরাও নাজিল করা হয়েছে। 

সূরা আনআমের ৬৫ নং আয়াতে বলেনÑ বল! আল্লাহ তোমাদের প্রতি তোমাদের ওপর থেকে (আসমান থেকে) অথবা তোমাদের পায়ের নিচ থেকে আজাব পাঠাতে সক্ষম, অথবা তোমাদের দল-উপদলে বিভক্ত করে এক দলকে আরেক দলের শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করাতেও সম্পূর্ণরূপে সক্ষম। প্রখ্যাত মুফাসসিরে কোরআন শায়খ আল ইস্পাহানী এ আয়াতের তাফসিরে বলেন, বল! আল্লাহ তোমাদের প্রতি তোমাদের ওপর থেকে (আসমান থেকে) যার ব্যাখ্যা হলো তীব্র শব্দ পাথর অথবা ঝড়ো হাওয়া অথবা তোমাদের পায়ের নিচ থেকে আজাব পাঠাতে সক্ষমÑ যার ব্যাখ্যা হলো, ভূমিকম্প এবং ভূমিধসের মাধ্যমে পৃথিবীর অভ্যন্তরে ঢুকে যাওয়া। [তিরমিজি শরিফ ১৪৪৭ নং 

হাদিসে বলা হয়েছে, যখন অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জিত হবে। কাউকে বিশ্বাস করে সম্পদ গচ্ছিত রাখা হবে কিন্তু তার খেয়ানত করা হবে (অর্থাৎ যার সম্পদ সে আর ফেরত পাবে না) জাকাতকে দেখা হবে জরিমানা হিসেবে, ধর্মীয় শিক্ষা ব্যতীত বিদ্যা অর্জন করা হবে, একজন পুরুষ তার স্ত্রীর আনুগত্য করবে কিন্তু তার মায়ের সাথে বিরূপ আচরণ করবে। বন্ধুকে কাছে টেনে নেবে আর পিতাকে দূরে সরিয়ে দেবে, মসজিদে উচ্চৈঃস্বরে শোরগোল (কথাবার্তা) হবে জাতির সবচেয়ে দুর্বল ব্যক্তি সমাজের শাসকরূপে আভির্ভূত হবে, সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি জনগণের নেতা হবে, একজন মানুষ যে খারাপ কাজ করে খ্যাতি অর্জন করবে তাকে তার খারাপ কাজের ভয়ে সম্মান প্রদর্শন করা হবে, বাদ্যযন্ত্র এবং নারী শিল্পীর ব্যাপক প্রচলন হয়ে যাবে, মদ পান করা হবে (বিভিন্ন নামে মদ ছড়িয়ে পড়বে), শেষ বংশের লোকজন তাদের পূর্ববর্তী মানুষগুলোকে অভিশাপ দেবে, এমন সময় আসবে যখন তীব্র বাতাস প্রবাহিত হবে, তখন একটি ভূকম্পন সেই ভূমিকে তলিয়ে দেবে। 

হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যখন উম্মত ১৫টি কাজে লিপ্ত হতে শুরু করবে তখন তাদের প্রতি বালা মুসিবত আপতিত হতে আরম্ভ করবে। ১. গুণীমতের মাল ব্যক্তিগত সম্পদে পরিণত হবে। ২. আমানতের মাল পরিণত হবে গণীমতের মালে। ৩. জাকাত আদায় করাকে মনে করবে জরিমানা আদায়ের ন্যায়। ৪. স্বামী স্ত্রীর বাধ্য হবে। ৫. সন্তান মায়ের অবাধ্য হবে। ৬. বন্ধু-বান্ধবের সাথে সৎ ব্যবহার করা হবে। ৭. পিতার সাথে করা হবে জুলুম। ৮. মসজিদে উচ্চৈঃস্বরে হট্টগোল হবে। ৯. অসম্মানী ব্যক্তিকে জাতির নেতা মনে করা হবে। ১০. ব্যক্তিকে সম্মান করা হবে তার অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য। ১১. প্রকাশ্যে মদ পান করা হবে। ১২. পুরুষ রেশমি পোশাক পরবে। ১৩. গায়িকা তৈরি করা হবে। ১৪. বাদ্যযন্ত্র তৈরি করা হবে। ১৫. পূর্ববর্তী উম্মতদের (সাহাবা, তাবেঈ, তাবে তাবেঈ) প্রতি অভিসম্পাত করবে পরবর্তীরা। যখন এ কাজগুলো পৃথিবীতে হতে থাকবে তখন অগ্ন্যুৎপাত, প্রবল ঝড়, ভূমিকম্প ও কদাকৃতিতে রূপ নেয়ার অপেক্ষা করবে। এখন একটু চিন্তা করা উচিত যে এগুলো প্রকৃতির কোনো সৃষ্ট নয়, বরং মানুষই এগুলো ঘটার মূল অনুষঙ্গ। কারণ সূরা রূমের ৪১নং আয়াতে মহাগ্রন্থ আল-কোরআন সেই নির্দেশনাই প্রদান করে। মানুষের কৃতকর্মের দরুন সমুদ্রে ও স্থলে বিপর্যস্ত ছড়াইয়া পড়ে; যাহার ফলে উহাদিগকে উহাদিগের কোনো কোনো কর্মের শাস্তি তিনি আস্বাদন করান যাহাতে উহারা ফিরিয়া আসে। আল্লাহতায়ালা গুনাহর কারণে পৃথিবীর বুক থেকে আদ সামুদ লুত আইকার অধিবাসীদের বিভিন্ন আজাবের মাধ্যমে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছেন। এ জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিসের মধ্যে ভূমিকম্প বা দুর্যোগের আগে এ দোয়াটি পাঠ করার কথা বলেছেন। বিসমিল্লাহিল্লাযি লা ইয়াদুররু মাআস মিহি শাইয়ুন ফিল আরদিওয়ালা ফিস সামাঈ ওয়াহুয়াস সামিয়ুল আলিম। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি এই দোয়া সকাল-সন্ধ্যা তিনবার পড়বে সে ভূমি ও আকাশের দুর্যোগ থেকে হেফাজত থাকবে।(তিরমিজি:২/১৭৩)
Copyright Daily Inqilab

No comments:

Post a Comment