পৃথিবীর
সবচেয়ে বিরোধপূর্ণ এলাকার কথা বললে যে নামটি সম্ভবত সবার আগে আসবে সেটি হল
জেরুজালেমে অবস্থিত মসজিদুল আকসার এলাকা। হাজার বছর ধরে এ স্থানের নিয়ন্ত্রণকে
ঘিরে মানুষেরা সংঘর্ষে লিপ্ত আছে। পৃথিবীর সকল মুসলিমদের হৃদয়ে এ জায়গাটি একটি
বিশেষ স্থান দখল করে রয়েছে।
কারণ
এ জায়গাটি হল ইসলামের তৃতীয় সর্বোচ্চ পবিত্র স্থান। এটিই সে পবিত্র স্থান যেখানে
নবীজি (স.) কে মেরাজে যাওয়ার সময় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।এখানেই মানব ইতিহাসের সবচেয়ে অসাধারণ মানবসমাবেশ
ঘটেছিল, যেখানে
একত্রীত হয়েছিলেন আল্লাহর পক্ষ থেকে পৃথিবীতে আসা সকল নবীরা । উপরের এ তথ্যগুলো
হয়ত অনেকেরই জানা। তবে নিচের তথ্যগুলো হয়ত অনেকেরই অজানাঃ
১.এটি কেবল একটি মসজিদ নয়
হ্যাঁ এটি কেবল একটি মসজিদ নয় বরং এখানে
রয়েছে অনেকগুলো মসজিদ। এর মধ্যে সবচেয়ে দক্ষিণ কোণের বিল্ডিংটিকেই আমরা ‘মসজিদুল আকসা’ বলে থাকি। আসলে এটি হল ‘কিবলি’ মসজিদ। মসজিদগুলোর মধ্যে এটি কেবলা থেকে সবচেয়ে কাছাকাছি হওয়ায় কারণে
এর নাম কিবলি মসজিদ। আর এ সবগুলো মসজিদ মিলে পুরো স্থানটি হল মসজিদুল আকসা যেটি ‘হারাম- আল-শরিফ’ নামেও পরিচিত। এ স্থানে আরও বিভিন্ন
মসজিদও আছে যেগুলোর রয়েছে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট । যেমন- বোরাক মসজিদ, মারোয়ানি মসজিদ।
পূর্ববর্তী অনেক নবী এবং আমাদের নবীজির সাহাবিদের ঠিক কতজনকে এখানে সমাহিত করা হয়েছে এর কোন নথিপত্র নেই। তারপরেও নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে সে সংখ্যাটি অনেক। যেমন নবী সুলাইমান (আঃ) কে তার মৃত্যুর পর সম্ভবত এখানেই দাফন করা হয়েছে। তিনি কোন একটি ভবনের নির্মাণকাজ তত্ত্বাবধানের সময়ে মারা গিয়েছিলেন।
৩. এটি এক সময়ে ছিল আবর্জনা ফেলার স্থান
ইতিহাসের একটা উল্লেখযোগ্য সময়ে জেরুজালেম
নগরীতে কোন
ইহুদীকে প্রবেশ করতে দেয়া হত না। সে সময়ে
এখানে রোমানরা বসবাস করত আর মসদজিদের এ জায়গাটি ছিল একটি ময়লা ফেলার স্থান। যখন
এ জায়গাটি খলীফা উমরের আয়ত্তে আসে তখন তিনি নিজের খালি হাতে এ আবর্জনা পরিষ্কার
করেন। ইহুদীদেরকে বিতাড়িত করার যে প্রথা শত বছর ধরে এখানে চলে আসছিল তিনি এর
অবসান ঘটান। তিনি ৭০ টি ইহুদী পরিবারকে একটি শরণার্থী গ্রাম থেকে জেরুজালেমে
প্রবেশের অনুমতি দেন। আজকের ইহুদিরা সম্ভবত এ ইতিহাস ভুলে গেছে।
৪. ইমাম গাজ্জালি তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ
এখান থেকেই করেছেন ইমাম আবু হামিদ গাজালি
ইসলামি সাহিত্যের অন্যতম বিখ্যাত গ্রন্থ ‘ইয়াহইয়া উলুম আদ-দ্বীন’ রচনা করেন। তিনি কোরআন এবং সুন্নাহর আলোকে মানুষের কালব বা অন্তরের
বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনায় সিদ্ধহস্ত ছিলেন। তার এ কাজের জন্য তিনি সকল মাযহাবের
লোকেদের কাছে সমাদৃত। আমরা অনেকেই জানিনা যে আল-গাজালি একটি দীর্ঘ সময় মসজিদ
আল-আকসায় অবস্থান করেছিলেন এবং এখানেই তার এ বিখ্যাত গ্রন্থ ‘ইয়াহইয়া উলুম আদ- দ্বীন’ রচনা করেছিলেন। মসজিদের একটি
বিল্ডিংয়ে তার সে কক্ষ ছিল।
৫. এটি ব্যবহৃত হয়েছে পশুর খোঁয়াড়, রাজপ্রসাদ
এবং মানুষ হত্যার স্থান হিসেবে ক্রুসেডাররা
যখন জেরুজালেম দখল করে তখন তারা অধিকাংশ মুসলিমকে মসজিদুল আকসায় বন্দি অবস্থায় পেয়েছিল।
তারা এর মধ্যে থেকে প্রায় ৭০ হাজার
কে হত্যা করেছিল এবং কিবলি মসজিদকে
রাজপ্রসাদে রূপান্তরিত করেছিল। তারা মসজিদের গম্বুজের পাথরকে চ্যাপেলে রূপান্তরিত
করে এবং মাটির নিচের কক্ষকে পশু খোঁয়াড়ে পরিণত করে। প্রথমবারের হত্যাযজ্ঞের
সময়ে যে সব মুসলিমরা বেঁচে যায়
তাদেরকে পরবর্তীতে মসজিদের কেন্দ্রের কাছে
একটা জায়গায় ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করা হয়। এটিই ছিল একমাত্র ক্রুশ যেটি
সালাউদ্দিন আইয়ুবি ভেঙ্গেছিলেন। এ ক্রুশের ভিত্তি প্রস্তর এখনো দেখা যায়।
৭.এখানে ছিল একটি একটি ঐতিহাসিক মিম্বার
নুরুদ্দীন জাঙ্কি ইসলামের ইতিহাসের একজন গুরুত্বপূর্ণ
ব্যক্তিত্ব। তিনি জেরুজালেম জয় করার আগেই সেখানে অবস্থিত মসজিদুল আকসায় স্থাপনের
জন্য একটি বিশেষ ধরনের মিম্বার তৈরি করেন। জেরুলজালেম পনুরুদ্ধারে তার এ আত্মবিশ্বাস
নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। এ মিম্বার যে কেবল দেখতেই সুন্দর ছিল তা নয় এর নির্মাণশৈলীও
ছিল ব্যতিক্রম। এ মিম্বারের কোথাও
একটিও পেরেক কিংবা কোন প্রকার আঠা লাগানো
হয়নি। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, জেরুজালেম জয়ের পূর্বেই নুরুদ্দীন মারা যান। পরবর্তীতে তার
ছাত্র সালাহউদ্দিন আইয়ুবি তার এ ইচ্ছা পূরণ করেন। তিনি ইসলামের ইতিহাসে
দ্বিতীয়বারের মত জেরুজালেম জয় করেন এবং সে মিম্বার স্থাপন করেন। চমৎকার নির্মাণশৈলীর
জন্য আর্টিস্ট এবং কারুকারদের কাছে এ মিম্বার বহুল সমাদৃত ছিল। দুঃখজনকভাবে
পরবর্তীতে এ মিম্বর ধ্বংস হয়ে যায়।
৮.পাথরের গম্বুজটি দেখতে অন্যরকম ছিল
এটি ছিল ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গম্বুজ। এ
গম্বুজ উমাইয়া খলীফা আব্দুল মালিক ইবন মারোয়ান নির্মাণ করেন। প্রথমে এটি ছিল কাঠ
ব্রাস,সীস।
No comments:
Post a Comment