08 December 2015

স্বাধীনতা সংরক্ষণে চাই আত্মার বলিষ্ঠতা

ডিসেম্বর বিজয়ের মাস। এক সাগর রক্ত আর লাখো শহীদের আত্মার নজরানা দিয়ে অর্জিত হয়েছিল যে বিজয়, সে বিজয়ের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছিল বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন ভূখণ্ড আর লাল-সবুজের একটি বর্ণিল পতাকা। সাড়ে নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের পর অর্জিত হয়েছিল বাঙালির বিজয়। আমাদের পূর্বসূরিরা জালিম, পাষণ্ড পাকিস্তানিদের পাশবিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নৈতিক ও মানবিক শক্তি বলে পৃথিবীর মানচিত্রে রক্তের আখরে বসিয়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের মানচিত্র। আজ আমরা স্বাধীন জাতি। স্বাধীনতা যুদ্ধের যত শহীদ, যত বীর, সালাম তোমাদের সালাম।



                              
ডিসেম্বর বিজয়ের মাস। এক সাগর রক্ত আর লাখো শহীদের আত্মার নজরানা দিয়ে অর্জিত হয়েছিল যে বিজয়, সে বিজয়ের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছিল বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন ভূখণ্ড আর লাল-সবুজের একটি বর্ণিল পতাকা। সাড়ে নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের পর অর্জিত হয়েছিল বাঙালির বিজয়। আমাদের পূর্বসূরিরা জালিম, পাষণ্ড পাকিস্তানিদের পাশবিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নৈতিক ও মানবিক শক্তি বলে পৃথিবীর মানচিত্রে রক্তের আখরে বসিয়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের মানচিত্র। আজ আমরা স্বাধীন জাতি। স্বাধীনতা যুদ্ধের যত শহীদ, যত বীর, সালাম তোমাদের সালাম।
পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসীরা ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ শুরু করেছিল, সেটা ছিল একটা জিহাদ। কারণ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার যে অঙ্গীকার ছিল, পশ্চিম পাকিস্তানিরা তা কোনো দিন রক্ষা করেনি, রক্ষা করার প্রয়োজন বোধ করেনি। বরং বঞ্চনা আর জুলুম ছাড়া পূর্ব পাকিস্তানের নাগরিকদের ভাগ্যে আর কিছু জোটেনি। শোষণ আর নিপীড়নে উপায়ন্তহীন তাদের সামনে যুদ্ধ ছাড়া অধিকার আদায়ের দ্বিতীয় কোনো পথও ছিল না। এমন অবস্থায় মহান আল্লাহর বিধানও তাই। এরশাদ হয়েছে, ‘হল কী তোমাদের যে, তোমরা আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করছ না ওই সমস্ত অসহায় নারী, পুরুষ আর শিশুদের পক্ষে, যারা আর্তনাদ করেছে এ বলে, হে আমাদের রব, তুমি আমাদেরকে বের করে দাও এই জনপদ থেকে যার অধিবাসীরা জালিম। আর আমাদের জন্য তোমার পক্ষ থেকে অভিভাবক ও সাহায্যকারী দান করো। (সূরা নিসা, আয়াত-৭৫)।
সত্যিই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আর অধিবাসীদের জন্য বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছিল। তার অধিবাসীদের করুণ আর্তনাদের জবাবে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মুক্তিবাহিনী মজলুমের পক্ষে সাহায্যকারী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। মহান আল্লাহর গায়েবি মদদে জালিম আর জুলুমের অবসান হয়েছিল। সাড়ে নয় মাসের বিরতিহীন যুদ্ধের পর মজলুম জনতার বিজয় অর্জিত হয়েছিল। মাতৃভূমিকে স্বাধীন করার ব্রত নিয়ে যারা সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে আদৌ আখের গোছানোর বিন্দুমাত্র চিন্তা ছিল না। আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করার কথা যদি কেউ বলতে চায়, তাহলে তাকে অবশ্যই আত্মকেন্দ্রিকতার ছোট্ট, নিকৃষ্ট গণ্ডি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের পরিমাণ বেড়েই চলছে।
অধিকারহারা মানুষের কাতার দীর্ঘায়িত হচ্ছে। জালিমদের দৌরাত্ম্য মজলুম মানুষের আর্তনাদ বাতাসকে ভারি করে রেখেছে, অনৈতিক কর্মকাণ্ড সামাজিকভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে, তাই মনের কোণে প্রশ্ন জাগে- স্বাধীনতা তুমি কোথায়, তুমি কার?
যে দেশের ৯০ ভাগের বেশি মানুষ মুসলমান, সে দেশে জনজীবনের এমন চিত্র শুধু একটা কথারই প্রমাণ বহন করে, মুসলমানরা ইসলামের সত্যিকার আবেদনটা হারিয়ে ফেলেছে। ইসলাম তো মানব জাতিকে স্বাধীন সত্তা উপহার দিয়েছে। স্বাধীনতার সে অধিকার মানবকুলের সবার সমান। প্রত্যেকটা আদম সন্তানই তো খোদার খলিফা। মহান আল্লাহ তো আদম সৃষ্টির আগে ফেরেশতাদের সাক্ষী করে বলেছিলেন, নিশ্চয়ই আমি পৃথিবীতে আমার খলিফা পাঠাতে যাচ্ছি। (সূরা বাকারা, আয়াত-৩০)। মহান আল্লাহ খলিফা হিসেবে প্রত্যেকটা আদম সন্তান শ্রেষ্ঠত্বের অভিধায় সিক্ত। কিন্তু মানবমনে শয়তান কর্তৃক ফুঁকে দেয়া পাশবিক চেতনা মানুষকে খোদার খিলাফতের মহিমাময় স্তর থেকে নামিয়ে দেয়। আর তখনই মানুষ স্বাধীনতার অন্তহীন রাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
নিজে আত্মকেন্দ্রিকতার বেড়াজালে আবদ্ধ হয় আর সমাজকে নীতিহীনতার খাঁচায় বন্দি করে ফেলে। আর তখনই লাখো শহীদের আত্মা আর এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা অসাড় হয়ে পড়ে। মাতৃভূমির স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে চাই আত্মার বিশালতা। যে আত্মার অধিকার নিয়ে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করতে গিয়েছিলেন, তেমনি একটি আত্মার প্রয়োজন অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষা করতে। যে আত্মা সব মানুষকে শুধু নিজের করে ভাবতে পারে, যে শুধু অন্যের জন্য নিজেকে উজাড় করে দিতে জানে। যে আত্মা অন্যায়কে শুধু ঘৃণা করতে জানে। ইসলামের মূল শিক্ষা সেটাই। এরশাদ হয়েছে, হে মানবমণ্ডলী। আমি তোমাদের একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদের বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিত হতে পার। নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সব থেকে বেশি সম্মানিত ওই ব্যক্তি যে সব থেকে বেশি খোদাভীরু। (সূরা হুজুরাত)। মহানবীও (সা.) বিদায় হজের ভাষণে একই কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, হে লোক সকল! তোমাদের রক্ত এবং ধন-সম্পদ পরস্পরের জন্য আজকের দিন, আজকের মাস ও বর্তমান শহরের মতোই নিষিদ্ধ। শোন : জাহেলি যুগের সমস্ত কুপ্রথা আমার পদতলে পিষ্ঠ করা হল। (বুখারি)।

No comments:

Post a Comment