08 December 2015

দক্ষিণ আফ্রিকায় যেভাবে আবাদ হয়েছে ইসলাম!

দক্ষিণ আফ্রিকায় মুসলমানদের অবস্থানও বেশ শক্তিশালী। এমনকি যখন বাংলাদেশের মতো মুসলিম দেশে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণার সাহস হয় না, তখন দক্ষিণ আফ্রিকায় মুসলমানদের মজবুত অবস্থানের কারণে সেদেশের আদালত কাদিয়ানিদের অমুসলিম বলে ঘোষণা করেছে।



দক্ষিণ আফ্রিকায় মুসলমানদের অবস্থানও বেশ শক্তিশালী। এমনকি যখন বাংলাদেশের মতো মুসলিম দেশে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণার সাহস হয় না, তখন দক্ষিণ আফ্রিকায় মুসলমানদের মজবুত অবস্থানের কারণে সেদেশের আদালত কাদিয়ানিদের অমুসলিম বলে ঘোষণা করেছে।
সপ্তদশ খৃস্টাব্দে ডাচরা একদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার ওপর নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করলে সেখানে মুসলমানরা বারবার স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করতে থাকে। ডাচরা এসব আন্দোলনকে সবসময়ই জুলুম-নির্যাতনের মাধ্যমে দমন করে। সেখানকার অনেক মুজাহিদ মুসলমানকে বন্দী করে দাস বানিয়ে রাখা হয়। মালয় ও আশেপাশের প্রায় তিন'শ মুজাহিদকে দাস বানিয়ে পায়ে শিকল পরিয়ে কেপটাউন নিয়ে আসা হয়। কেপটাউনে মুসলমানদের দ্বারা খুব কষ্টসাধ্য কাজ নেয়া হতো। নামাজ পড়া তো দূরের কথা, ডাচ মনিবদের পক্ষ থেকে তাদের কালেমা পড়ার অনুমতিটুকুও ছিল না। কোনো ব্যক্তি নামাজ কিংবা অন্য কোনো ইবাদতের প্রস্তুতি নিলেই তাকে কঠিন শাস্তি দেয়া হতো। তখন সারাদিন অমানুষিক পরিশ্রম করার পর দৃঢ় সংকল্প এই মুজাহিদরা তাদের তত্ত্বাবধায়কদের ঘুমিয়ে পড়ার অপেক্ষা করতেন। তারা ঘুমিয়ে পড়লে মুজাহিদরা রাতের অন্ধকারে চুপিচুপি অবস্থানস্থল থেকে বের হয়ে একটি পাহাড়ে আরোহণ করে সারাদিনের নামাজ একসঙ্গে পড়ে নিতেন।
এক সময় বৃটিশরা কেপটাউনের ওপর আক্রমণ করে। ডাচ শাসকদের এমন কিছু নিবেদিতপ্রাণ সৈনিকের প্রয়োজন পড়ল, যারা জানবাজি রেখে তাদের পথ রোধ করবে। প্রাণদানের জন্য ভিনদেশী মুসলমানদের চেয়ে অধিক উপযুক্ত কেউ ছিল না। সুতরাং ডাচ সরকার নির্যাতিত ও শোষিত এসব মুসলমানের কাছে এ লড়াইয়ে ডাচ সরকারের পক্ষ হয়ে শুধু লড়াই করারই নয়, বরং ইংরেজদের মোকাবেলায় এদের অগ্রবাহিনীর দায়িত্ব পালনেরও দাবি জানায়। কিন্তু এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তারা কোনো টাকা পয়সার আবদার করেননি কিংবা নিজেদের জন্য অন্য কোনো সুবিধাও চাননি। তারা এসবের পরিবর্তে ডাচ মনিবদের বললেন, আমরা আপনাদের খাতিরে ইংরেজদের সঙ্গে লড়াই করতে প্রস্তুত আছি। তবে লড়াই শেষ হলে আমাদেরকে কেপটাউনে একটি মসজিদ নির্মাণ ও সেখানে নিয়মিত জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায়ের অনুমতি দিতে হবে।
ডাচ সরকার সহজেই এই শর্ত মেনে নেয়। এভাবে বহুসংখ্যক মুসলমানের প্রাণের বিনিময়ে এখানে একটি মসজিদ বানানোর অনুমতি লাভ করে। এটি ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম মসজিদ, যা ওই সমস্ত নিপীড়িত, নিগৃহীত ও নির্যাতিত মুসলমানরা নির্মাণ করেন। তাদের কাছে কেবলার সঠিক দিক জানার উপযুক্ত কোনো যন্ত্র ছিল না, তাই সম্ভবত তারা অনুমানের ভিত্তিতে কেবলার দিক নির্ধারণ করে মেহরাব তৈরি করেন।
দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম দিকে মালয় মুসলমানরা আবাদ হন। পরবর্তী সময়ে ভারত, বিশেষ করে সুরাট ও গুজরাটের মুসলমানরা ব্যবসার উদ্দেশ্যে এখানে আসেন। এভাবে বহুসংখ্যক মুসলমান সমগ্র দক্ষিণ আফ্রিকায় ছড়িয়ে পড়েন। তারপরেও দক্ষিণ আফ্রিকাতে মুসলমানদের সংখ্যা মোট অধিবাসীর তুলনায় পাঁচ-ছয় শতাংশ হবে। তবে এত সামান্য হারের সংখ্যালঘু হওয়া সত্ত্বেও দক্ষিণ আফিকার মুসলমানরা নিজেদের ধর্মীয় স্বকীয়তা রক্ষা করছেন।
মূল- জহির উদ্দিন বাবর

গ্রন্থনা ও সম্পাদনা- মাওলানা মনযূরুল হক

No comments:

Post a Comment