08 November 2015

সমসাময়িক ও দাজ্জালের ফেতনা থেকে মুক্তি লাভের আমল!

হজরত আবু দারদা রা. বলেন: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি সুরা কাহফের প্রথম দশটি আয়াত মুখস্ত করবে সে দাজ্জালের ফেতনা থেকে রক্ষা পাবে। (মুসলিম-১৯১৯)
ফজিলত : হজরত আবু দারদা রা. বলেন: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি সুরা কাহফের প্রথম দশটি আয়াত মুখস্ত করবে সে দাজ্জালের ফেতনা থেকে রক্ষা পাবে। (মুসলিম-১৯১৯)
মুসলিম শরিফের অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, তোমাদের কেউ যদি তাকে পেয়ে যায় তাহলে সে যেনো তার উপর সুরা কাহাফের প্রথম দশটি আয়াত পড়ে।
অন্য এক বর্ণনায় উপরোক্ত ফজিলত সুরা কাফাহের শেষ দশটি আয়াত মুখস্ত করার ব্যাপরে বর্ণিত হয়েছে। (মুসলিম-১৯২০) তাই সুরা কাহাফের প্রথম দশ আয়াত ও শেষ দশ আয়াত উভয়টির উপর আমল করাই উত্তম।
উল্লেখ্য যে, হাদিস ব্যাখ্যাতাগণ সুরা কাহাফের প্রথম আয়াতসমুহের সঙ্গে দাজ্জালের ফেতনার সঙ্গে সম্পর্ক বর্ণনা করতে গিয়ে লেখেন যে, দাজ্জাল শব্দটি দাজল শব্দমূল থেকে এসেছে যার অর্থ হলো মিথ্যা বলা, সত্য মিথ্যা বা হক বাতিলের মিশ্রণ ঘটানো। সুরা কাহাফের প্রথম দশ আয়াতের অর্থে ও আসহাবে কাহাফের ঘটনায় হক বাতিলের মিশ্রণজনিত মিথ্যা ধর্মাবলম্বীদের ঘটনার খ-ন করা হয়েছে। তাই যে ব্যক্তি এ বিষয়ে পূর্ণ একিনের সঙ্গে এ আয়াতগুলো পড়বে তার মন কখনো এ জাতীয় কোনো মিথ্যা ফেতনার দ্বারা প্রভাবিত হবে না। আর যে ব্যক্তি এ আয়াতগুলো মুখস্ত করবে এবং একিনের সঙ্গে তেলাওয়াত করবে এ আয়াতগুলোর বরকতে আল্লাহ তায়ালা তাকে দাজ্জালের ফেতনার মতো ছোট বড় সব ফেতনা থেকে রক্ষা করবেন। [সহি মুসলিম-১/২৭১, আনওয়ারুল বায়ান-৫/৪৫৪, মাআরিফুল হাদিস-৫/৯৪৫]
সুরা “কাহাফ” -এর প্রথম ১০টি আয়াত ও শেষ ১০টি আয়াত প্রতিদিন সকালে একবার পড়া।
প্রথম ১০ আয়াত
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَنْزَلَ عَلَى عَبْدِهِ الْكِتَابَ وَلَمْ يَجْعَلْ لَهُ عِوَجًا (1) قَيِّمًا لِيُنْذِرَ بَأْسًا شَدِيدًا مِنْ لَدُنْهُ وَيُبَشِّرَ الْمُؤْمِنِينَ الَّذِينَ يَعْمَلُونَ الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ أَجْرًا حَسَنًا (2) مَاكِثِينَ فِيهِ أَبَدًا (3) وَيُنْذِرَ الَّذِينَ قَالُوا اتَّخَذَ اللَّهُ وَلَدًا (4) مَا لَهُمْ بِهِ مِنْ عِلْمٍ وَلَا لِآبَائِهِمْ كَبُرَتْ كَلِمَةً تَخْرُجُ مِنْ أَفْوَاهِهِمْ إِنْ يَقُولُونَ إِلَّا كَذِبًا (5) فَلَعَلَّكَ بَاخِعٌ نَفْسَكَ عَلَى آثَارِهِمْ إِنْ لَمْ يُؤْمِنُوا بِهَذَا الْحَدِيثِ أَسَفًا (6) إِنَّا جَعَلْنَا مَا عَلَى الْأَرْضِ زِينَةً لَهَا لِنَبْلُوَهُمْ أَيُّهُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا (7) وَإِنَّا لَجَاعِلُونَ مَا عَلَيْهَا صَعِيدًا جُرُزًا (8) أَمْ حَسِبْتَ أَنَّ أَصْحَابَ الْكَهْفِ وَالرَّقِيمِ كَانُوا مِنْ آيَاتِنَا عَجَبًا (9) إِذْ أَوَى الْفِتْيَةُ إِلَى الْكَهْفِ فَقَالُوا رَبَّنَا آتِنَا مِنْ لَدُنْكَ رَحْمَةً وَهَيِّئْ لَنَا مِنْ أَمْرِنَا رَشَدًا (10)
প্রথম দশ আয়াতের অর্থ
১। সব প্রশংসা আল্লাহরই যিনি তাঁর বান্দার প্রতি এই কিতাব অবতীর্ণ করেছেন এবং তাতে তিনি বক্রতা রাখেননি। ২। এটাকে করেছেন সুপ্রষ্ঠিত, কঠিন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করার জন্য। এবং মুুমিনগন যারা সৎ কাজ করে; তাদেরকে এই সুসংবাদ দেয়ার জন্য যে, তাদের জন্য রয়েছে উত্তম পুরস্কার। ৩। সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। ৪। এবং সতর্ক করার জন্য তাদেরকে যারা বলে আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করছেন। ৫। এই বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞান নেই এবং তাদের পিতৃপুরুষদেরও ছিলো না। তাদের মুখনিঃসৃত বাক্য কী সাংজ্ঞাতিক! তারা তো কেবল মিথ্যাই বলে। ৬। তারা এই বাণী বিশ্বাস না করলে সম্ভবত তাদের পেছনে ঘুরে ঘুরে তুমি দুঃখে আতœবিনাশী হয়ে পড়বে। ৭। পৃথিবীর যা কিছু আছে আমি সেগুলোকে তার শুভা করেছি, মানুষকে এই পরীক্ষা করার জন্য যে, তাদের মধ্যে কাজে শ্রেষ্ঠ কে? ৮। তার উপর যা কিছু আছে তা অবশ্যই আমি উদ্ভিদশূণ্য ময়দানে পরিনত করবো। ৯। তুমি কি মনে করো যে, গুহা ও রাকিমের অধিবাসীরা আমার নিদর্শনাবলীর মধ্যে বিষ্ময়কর? ১০। যখন যুবকরা গুহায় আশ্রয় নেয় তখন তারা বলেছিলো, হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি নিজ থেকে আমাদেরকে অনুগ্রহ দান কর, এবং আমাদের জন্য আমাদের কাজকর্ম সঠিকভাবে পরিচালনার ব্যবস্থা করো।
শেষ ১০ আয়াত
أَفَحَسِبَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنْ يَتَّخِذُوا عِبَادِي مِنْ دُونِي أَوْلِيَاءَ إِنَّا أَعْتَدْنَا جَهَنَّمَ لِلْكَافِرِينَ نُزُلًا (102) قُلْ هَلْ نُنَبِّئُكُمْ بِالْأَخْسَرِينَ أَعْمَالًا (103) الَّذِينَ ضَلَّ سَعْيُهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ يَحْسَبُونَ أَنَّهُمْ يُحْسِنُونَ صُنْعًا (104) أُولَئِكَ الَّذِينَ كَفَرُوا بِآيَاتِ رَبِّهِمْ وَلِقَائِهِ فَحَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ فَلَا نُقِيمُ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَزْنًا (105) ذَلِكَ جَزَاؤُهُمْ جَهَنَّمُ بِمَا كَفَرُوا وَاتَّخَذُوا آيَاتِي وَرُسُلِي هُزُوًا (106) إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ كَانَتْ لَهُمْ جَنَّاتُ الْفِرْدَوْسِ نُزُلًا (107) خَالِدِينَ فِيهَا لَا يَبْغُونَ عَنْهَا حِوَلًا (108) قُلْ لَوْ كَانَ الْبَحْرُ مِدَادًا لِكَلِمَاتِ رَبِّي لَنَفِدَ الْبَحْرُ قَبْلَ أَنْ تَنْفَدَ كَلِمَاتُ رَبِّي وَلَوْ جِئْنَا بِمِثْلِهِ مَدَدًا (109) قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ يُوحَى إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ فَمَنْ كَانَ يَرْجُو لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا (110)
শেষ দশ আয়াতের অর্থ
১। যারা কুফুরি করে তারা কি মনে করে যে, তারা আমার পরিবর্তে আমার বান্দাদেরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করবে? নিশ্চয় আমি কাফেরদের আপ্যায়নের জন্য জাহান্নাম প্রস্তুত রেখেছি। ২। বলো, আমি কি তোমাদের সংবাদ দেবো কাজে বিশেষ ক্ষতিগ্রস্তদের? ৩। ওরাই তারা, পার্থিব জীবণে যাদের চেষ্টা পন্ড হয়, যদিও তারা মনে করে যে, তারা সৎ কাজই করছে। ৪। ওরাই তারা, যারা অস্বীকার করে তাদের প্রতিপালকের নিদর্শনাবলী এবং তার সঙ্গে তাদের সাক্ষাতের বিষয়, ফলে তাদের কর্ম বিফল হয়ে যায়, সুতরাং কেয়ামতের দিন তাদের জন্য ওজনের কোন ব্যবস্থা রাখবো না। ৫। জাহান্নাম; এটাই তাদের প্রতিফল, যেহেতু তারা কুফুরি করেছে এবং আমার নিদর্শনাবলী ও রাসূলদের গ্রহণ করেছে বিদ্রুপের বিষয় স্বরূপ। ৬। যারা ইমান আনে ও সৎ কাজ করে তাদের আপ্যায়নের জন্য আছে, ফেরদাউসের উদ্যান। ৭। সেখানে তারা স্থায়ী হবে, সেখান থেকে স্তানান্তরের কামনা করবে না। ৮। বলো, আমার প্রতিপালকের কথা লিপিবদ্ধ করার জন্য সমূদ্র যদি কালি হয় তবে আমার প্রতিপালকের কথা শেষ হওয়ার আগেই সমুদ্র নিঃশেষ হয়ে যাবে, এটার সাহায্যার্থে আমরা এটার অনুরূপ নিয়ে আসলেও। ৯। বলো, আমি তো তোমাদের মত একজন মানুষই, আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের ইলাহ একমাত্র ইলাহ। সুতরাং যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ কামনা করে সে যেনো সৎ কাজ করে এবং তার প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকে শরিক না করে।
মূল- হজরত মাওলানা ইউনুস বিন উমর পালনপূরী
অনুবাদ- মাওলানা মিরাজ রহমান

No comments:

Post a Comment