কে ছিলেন ইসলামের প্রথম রাসুল?
হজরত আদম [আ.] ৯৬০ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। তার মৃত্যুর পর তার এক পুত্র হজরত শিশ [আ.] নবুওয়াতপ্রাপ্ত হন এবং তিনি নিজ সম্প্রদায়কে পথভ্রষ্টতা থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করেন। শিশ [আ.]-এর মৃত্যুর পর আদম [আ.]-এর বংশধরগণ পৃথিবীর বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ে
হজরত আদম [আ.] ৯৬০ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। তার মৃত্যুর পর তার এক পুত্র হজরত শিশ [আ.] নবুওয়াতপ্রাপ্ত হন এবং তিনি নিজ সম্প্রদায়কে পথভ্রষ্টতা থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করেন। শিশ [আ.]-এর মৃত্যুর পর আদম [আ.]-এর বংশধরগণ পৃথিবীর বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং তারা সময়ের আবর্তে আল্লাহপ্রদত্ত ধর্ম ছেড়ে মূর্তিপূজা শুরু করে। আল্লাহর সঙ্গে বিভিন্ন জড়পদার্থ এবং সৃষ্টিজীবের আরাধনায় মত্ত হয়ে যায়।
এভাবে মূর্তিপূজায় লিপ্ত হলে আল্লাহ হজরত নুহকে [আ.] নবুয়াত প্রদান করেন তাদের পথপ্রদর্শনের জন্য। যাতে তারা মূর্তিপূজা থেকে বিরত থাকে এবং এক আল্লাহর বিশ্বাসে বিশ্বাসী হয়। হজরত আদম [আ.]-এর পরলোক গমন থেকে হজরত নুহ [আ.]-এর জন্মকালীন সময়ের ব্যবধান প্রায় এক হাজার বছর। তিনি হজরত আদম [আ.]-এর অষ্টম অথবা দশম অধঃস্তন পুরুষ। অনেক সাহাবির মতে হজরত নুহ [আ.] ছিলেন হজরত ইদরিস [আ.]-এর পূর্বেকার নবি। তবে সিরাত ইবনে হিশাম, আররাহিকুল মাখতুম, খোলাসাতুস সিয়ার গ্রন্থে রাসুল মুহাম্মদ সা.-এর যে বংশলতিকা দেয়া হয়েছে সেখানে ইদরিস [আ.]-কেই নুহ [আ.]-এর পূর্ববর্তী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বংশলতিকাটি এমন- নুহ ইবনে লামেক ইবনে মাতুশালাখ আখনুখ (ইদরিস [আ.]) ইবনে ইয়াদ ইবনে মাহলায়েল ইবনে কায়নান ইবনে আনুশা ইবনে শিশ ইবনে আদম [আ.]। [সূত্র : সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৩২৭, ঈমান অধ্যায়; সিরাত ইবনে হিশাম; খোলাসাতুস সিয়ার; আর রাহিকুল মাখতুম]
হজরত নুহ [আ.]-কে আল্লাহ তায়ালা ৪০ বছর বয়সে নবুওয়াত দান করেন এবং তাকে রাসুল হিসেবে মনোনীত করেন। তিনিই পৃথিবীর বুকে প্রথম নবি যাকে রাসুল হিসেবে ভূষিত করা হয়, অর্থাৎ সর্বপ্রথম তার কাছে ঐশীগ্রন্থ অবতীর্ণ হয়। যাতে তিনি এই গ্রন্থ অনুসরণে তার সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করতে পারেন। যদিও তার পূর্বে একাধিক নবি পৃথিবীতে আগমন করেন তবে তাদের কাউকে রাসুলের মর্যাদা দেয়া হয়নি। তাদের কাছে কোনো ঐশীগ্রন্থ অবতীর্ণ হয়নি। হজরত আদম [আ.] হজরত শিশ [আ.] হজরত ইদরিস [আ.]-এর নবুওয়াতের কথা কুরআন এবং হাদিস দ্বারা স্বীকৃত। তাদের কারো কাছেই ঐশীগ্রন্থ অবতীর্ণ হয়নি। এ তিনজন ছাড়াও এই এক হাজার বছর সময়কালে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের কাছে আরও নবি আগমনের ব্যাপারে অনেক ঐতিহাসিক ও তাফসিরকারগণ মতামত ব্যক্ত করে থাকেন। যদিও তাদের নাম কুরআনে বিবৃত হয়নি। তাদেরকেও ঐশীগ্রন্থের মহান দায়িত্ব দেয়া হয়নি। এ কারণে ইসলামের প্রথম রাসুল বলা হয় হজরত নুহ [আ.]-কে।
হজরত নুহ [আ.]-কে বলা হয় আবুল বাশার সানি (ابوالبشرالثانى) বা মানবজাতির দ্বিতীয় পিতা। কেননা তখনকার পৃথিবীবাসীর পাপের শাস্তি হিসেবে তাদের সবাইকে প্লাবনে নিমজ্জিত করে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়। অবশিষ্ট থাকে শুধু হজরত নুহ [আ.]-এর বংশধরগণ। কুরআনে আল্লাহ বলেন, وَجَعَلْنَا ذُرِّيَّتَهُ هُمُ الْبَاقِيْنَ. আমি তার (নুহের) বংশধরগণকেই অবশিষ্ট রেখেছি (সুরা সাফফাত, আয়াত : ৭৭)। ফলে ইহুদি-খৃস্টানসহ সকল ধর্মমতের লোকেরা নুহ [আ.]-কে তাদের পিতা হিসেবে মর্যাদা দিয়ে থাকে। [সূত্র : তাফসিরে ইবনে কাসির, তাফসিরে কুরতুবি, তিরমিজি শরিফ]
তবে সবচে মজার ব্যাপার হলো, হজরত নুহ [আ.]-এর মাজার স্থাপিত হয়েছে পৃথিবীর তিন স্থানে। একটি আজারবাইজানের নাখশিভানে, দ্বিতীয়টি তুরস্কের কাইজারে এবং তৃতীয়টি জর্দানে। চতুর্থটি ইরাকের নাজাফ অঞ্চলে ইমাম আলি মসজিদেও তার কবর রয়েছে বলে দাবি করেন অনেক ঐতিহাসিক। কোথায় তিনি শুয়ে আছেন সে ব্যাপারে আল্লাহই ভালো জানেন।
No comments